নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রতিষ্ঠার ১৪ বছরেরও রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই জিমনেসিয়াম স্থাপনের উদ্যোগ, এমনকি নেই স্থায়ী খেলার মাঠও। ক্রীড়াঙ্গনের এই বেহাল দশা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে সব সময় চাপা ক্ষোভ বিরাজ করে।
‘ভলিবল, হ্যান্ডবল, ব্যাডমিন্টন, ফেন্সিং ইনডোর গেম হলেও এসব খেলার অনুশীলন করা হচ্ছে খোলা আকাশের নিচে। মাঠের সঙ্কট থাকায় এক মাঠেই চলছে ক্রিকেট-ফুটবলের অনুশীলন।’
শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার ১৪বছরে কোনো স্থায়ী মাঠ পায়নি। প্রায় সাড়ে আট হাজার শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে একটিমাত্র অস্থায়ী খেলার মাঠ। ইনডোর গেম ও ব্যায়ামের জন্য নেই জিমনেসিয়াম। বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে ক্রীড়াঙ্গনকে আধুনিকায়নের আশ্বাস দিলেও বাস্তবে কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। এটাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ব্যর্থতা মনে করছেন শিক্ষার্থীরা।
বর্তমানে যে অস্থায়ী মাঠে খেলাধুলা করা হয় সেটাও ছোট-বড় অসংখ্য গর্তে ভরা। এখানে খেলতে গিয়ে প্রায়ই বড় ধরনের দুর্ঘটনায় স্বীকার হন শিক্ষার্থীরা। গেলো বছরে ফুটবল খেলার সময় গর্তে পা পিছলে পড়ে হাত ভেঙে যায় দুই শিক্ষার্থীর। এছাড়াও এই মাঠটি নিচু হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই জমে থাকে পানি। মাঠের এই বেহাল দশার জন্য খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছেন অনেক শিক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা দপ্তর সূত্রে জানা যায়, আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় সাতটি ইভেন্টে অংশগ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে দল গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু পর্যাপ্ত মাঠ না থাকায় খেলার অনুশীলন নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ভলিবল, হ্যান্ডবল, ব্যাডমিন্টন, ফেন্সিং ইনডোর গেম হলেও এসব খেলার অনুশীলন করা হচ্ছে খোলা আকাশের নিচে। আর বর্ষা মৌসুমে একটু বৃষ্টি হলেই থেমে থাকছে এসব ইনডোর গেমের অনুশীলন। মাঠের সঙ্কট থাকায় এক মাঠেই চলছে ক্রিকেট-ফুটবলের অনুশীলন।
খেলোয়াড়রা বলছেন, ব্যায়াম করার ব্যবস্থা না থাকায় খেলাধুলার জন্য ফিটনেস টিকিয়ে রাখা খুব কঠিন কাজ। একটা জিমনেসিয়াম থাকলে ফিটনেস টিকিয়ে রাখতে এতো বেগ পেতে হতো না। অন্যদিকে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় চ্যাম্পিয়নশিপে ব্যাডমিন্টন খেলে আসা খেলোয়াড়রাও জানায় তাদের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা। তারা জানায়, খোলা আকাশের নিচে বাতাসের মধ্যে অনুশীলন করে ইনডোরে গিয়ে বাতাসের চাপ বুঝতে পারা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। একটা জিমনেশিয়াম থাকলে ইনডোরে অনুশীলন করতে পারতাম।
জিমনেসিয়ামের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে শারীরিক শিক্ষা দপ্তরের ফিজিক্যাল ইন্সট্রাক্টর সোহেল রানা বলেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলাধুলার জগৎ জিমনেসিয়াম ছাড়া চিন্তাই করা যায় না। আমাদের ফেন্সিং, ভলিবল, হ্যান্ডবল এবং ব্যাডমিন্টনের জন্য ইনডোর থাকা খুব জরুরি। এছাড়া ফিটনেস ঠিক রাখতে ব্যায়াম করার জন্যও জিমনেসিয়াম এর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুবেল হোসেন আদনান বলেন, এক মাঠে ক্রিকেট-ফুটবল একসাথে প্রাকটিস করতে হয় যা মনযোগের বিঘœ ঘটায়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আহবান থাকবে ক্রীড়াঙ্গনকে আধুনিকায়নের জন্য দ্রæত পদক্ষেপ নেয়ার।
শারীরিক শিক্ষা দপ্তরের পরিচালক খন্দকার জাহাঙ্গীর আলম নীরব মাঠ সঙ্কটের বিষয়টি স্বীকার করলেও এ বিষয়ে আর কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এ বিষয়ে ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক নুরুজ্জামান খান জানান, মাঠ বাড়ানোর জন্য ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানতে পেরেছি। আশা করি দ্রæত মাঠ সঙ্কটের বিষয়টি কাটিয়ে উঠবে।