অনেক সতর্ক ব্যবস্থার পরও শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রবেশ ঠেকানো গেল না। গত রোববার স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত তিনজন রোগী শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে একজন নারী ও দুজন পুরুষ। এর মধ্যে দু’জন ইতালিফেরত। এদের বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। এই ঘোষণার পরই উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। যদিও চিকিৎসকরা বলছেন, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সতর্কতাই এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, সরকার প্রয়োজনীয় সবকিছু করছে। এদিকে করোনাভাইরাসের কারণে মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানও পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। স্থগিত করা হয়েছে প্যারেড গ্রাউন্ডের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। জনসমাগমকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এ অবস্থায় করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। থাকতে হবে সচেতন।
নতুন করে আর কেউ আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। এটি স্বস্তির বিষয়। তবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত একজনের সংস্পর্শে আসায় ৪০ জনকে কোয়ারেন্টাইনে (সংক্রামণ রোধে কোনো একটি স্থানে আবদ্ধ করে রাখা) রাখা হয়েছে। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া নোভেল করোনাভাইরাস প্রতিরোধে পাঁচ ধরনের পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এগুলো হচ্ছে- এক. ভালোভাবে সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়া। দুই. হাত না ধুয়ে চোখ, মুখ ও নাক স্পর্শ না করা। তিন. হাঁচি–কাশি দেওয়ার সময় মুখ ঢেকে রাখা। চার. অসুস্থ পশু বা পাখির সংস্পর্শে না আসা। এবং পাঁচ. মাছ, মাংস ভালোভাবে রান্না করে খাওয়া। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জরুরি প্রয়োজনে ছাড়া চীন ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকতে বলেছে। এমনকি প্রয়োজন ছাড়া এই সময়ে বাংলাদেশ ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করতে বলা হয়েছে।
করোনাভাইরাস যাতে না ছড়ায় সে ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। সাধারণত তিন রকমভাবে এই ভাইরাস ছড়ায়। এগুলো হচ্ছে- এক. আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি–কাশির মাধ্যমে। দুই. আক্রান্ত ব্যক্তিকে স্পর্শ করলে ছড়ায় তিন. পশু, পাখি বা গবাদিপশুর মাধ্যমে ছড়ায়।
করোনা একধরনের সংক্রামক ভাইরাস। ভাইরাসটি পশু-পাখি থেকে সংক্রমিত হয়ে থাকে। চীনসহ পৃথিবীর শতাধিক দেশে বর্তমানে (মার্স ও সার্স সমগোত্রীয় করোনাভাইরাস) এর সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে। কেউ যদি এসব দেশ ভ্রমণ করে থাকেন এবং ফিরে আসার ১৪ দিনের মধ্যে জ্বর ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট থাকে, গলাব্যথা, কাশি ও শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়, তাহলে তার করোনাভাইরাসে সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থাকতে পারে। তাকে জরুরি ভিত্তিতে সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে আইইডিসিআরের নিচের নম্বরে যোগাযোগ করতে বলেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ০১৯৩৭১১০০১১, ০১৯৩৭০০০০১১, ০১৯২৭৭১১৭৮৪, ০১৯২৭৭১১৭৮৫।
সচেতনতাই পারে করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা করতে। এজন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। গুজবে কান দেয়া যাবেনা। করোনার প্রভাবে মাস্কের দাম বেড়ে গেছে। যদিও চিকিৎসকরা বলছেন অযথা মাস্ক পরার প্রয়োজন নেই। করোনাভাইরাসের আক্রমণের সুযোগে কোনো অবস্থায়ই জিনিসপত্রের দাম বাড়ানোসহ অন্যান্য জনবিরোধী কাজ করা যাবেনা। আমরা চাই সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দেশ এই সংকট কাটিয়ে উঠুক।