সবুজ আহমেদ, মিঠাপুকুর (রংপুর):
মিঠাপুকুরের বালুয়ামাসিমপুর ইউনিয়নের হামিদপুর আকন্দপাড়া গ্রামের আজিজুর রহমানের ছেলে মহসিন হোসেন ওরফে বাহাদুর (৪৫)। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র, হত্যা, ডাকাতি, ছিনতাই ও মাদকসহ প্রায় ডজন খানেক মামলা রয়েছে। একাধিকবার জেলও খেটেছেন। কয়েকটি মামলায় জামিনে রয়েছেন। পুলিশের তালিকায় তিনি পলাতক হলেও এলাকায় গড়ে তুলেছেন ইয়ারা কারবারীদের বিশাল একটি সিন্ডিকেট। বালুয়ামাসিমপুর, বড়বালা, মিলনপুর, চেংমারী ও গোপালপুর ইউনিয়নে রয়েছে তার ইয়াবা কারবারীর কয়েকশ সদস্য। এছাড়াও, তার বিরুদ্ধে রয়েছে স্থানীয় এক পরিবারকে অবরুদ্ধ করার অভিযোগ। পুলিশ একাধীকবার অভিযান চালালেও বরাবরেই মহসিন হোসেন ওরফে বাহাদুর থাকেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পশ্চিমে যমুনেশ্বরী নদী বেষ্টিত বালুয়ামাসমিপুর ইউনিয়ন। মিলনপুর ও বড়বালা ইউনিয়নে যাওয়ার মুল সড়ক বালুয়ামাসিমপুরের বুক চিরে। ওই ৩ ইউনিয়নের মানুষ দির্ঘদিন ধরে হামিদপুর এলাকায় ডাকাত আতঙ্কে ছিলেন। সড়কের হামিদপুরে ফাঁকা রাস্তায় প্রায়ই ঘটতো ডাকাতির ঘটনা। গত কয়েক বছরে ৩টি হত্যাকাÐ ও গণধর্ষণের মত ঘটনা ঘটেছে সেখানে। প্রত্যেকটি ডাকাতি, হত্যাকাÐ ও ধর্ষণের অভিযুক্ত ব্যক্তি মহসিন হোসেন ওরফে বাহাদুর।
৪ বছর আগে হামিদপুর গ্রামে রাতে ডাকাতির শিকার হন এলাকার জনপ্রিয় পল্লী চিকিৎসক বাবুল মিয়া। ডাকাতরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে ঘটনাস্থলেই তাকে খুন করে। পুলিশি তদন্তে হত্যাকাÐ মামলার প্রধান আসামী মহসিন হোসেন ওরফে বাহাদুরের নাম বেরিয়ে আসে। জেল হাজতে ছিলেন কিছুদিন। পরে জামিনে বেরিয়ে এসেছে।
বর্তমানে পুলিশি তৎপরতা ও রাস্তায় পাহারা বসার কারণে হামিদপুরে ডাকাতির ঘটনা কমে গেলেও জমজমাট হয়েছে বাহাদুরের ইয়াবা ট্যাবলেটের ব্যবসা। হামিদপুর আকন্দপাড়ায় বসে ইয়াবা খুচরা ও পাইকারি ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে সে। ব্যবসা দেখভাল করে তার স্ত্রী রেহেনা বেগম ওরফে সোহাগী। বছর খানেক আগে ১ হাজার ৮শ পিচ ইয়াবা ট্যাবলেটসহ র্যাব-১৩ এর হাতে আটক হয়েছিল বাহাদুর। জেল-হাজত থেকে বেরিয়ে এসে আবারও ফিরেছে তার ইয়াবা ও অপরাধ চক্রে।
শঠিবাড়ী-বালুয়া সড়কের পাশে হামিদপুর আকন্দ পাড়া গ্রামের মসজিদ লাগোয়া দক্ষিণের বাড়িটি মহসিন হোসেন ওরফে বাহাদুরের। পাড়াটিতে প্রায় ৫০ পরিবারের বসবাস।
সরেজমিনে সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, মহসিন হোসেন ওরফে বাহাদুরের বাড়িতে প্রতিনিয়তই অপরিচিত লোকজনের আনাগোনা। প্রতিবেশিরা অতিষ্ট তার এই কর্মকাÐে। কিন্তু, অনেকে তার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পায় না। স্থানীয় কয়েকজন রয়েছে তার সহযোগী। এদের মধ্যে মৃত. আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে হাসান মিয়া, মৃত. ময়েজ মিয়ার ছেলে তোজাম্মেল হোসেন, মৃত. ছপির উদ্দিনের ছেলে স্বপন মিয়া, মৃত. গণি মিয়ার ছেলে রাজ্জাক মিয়া, আব্দুর হান্নানের ছেলে সাজ্জাদ হোসেন ও আবু তালেব ইয়াবা ব্যবসার অন্যতম সহযোগী। তারা এলাকায় গড়ে তুলেছেন শক্তিশালি একটি সিন্ডিকেট। এদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মুখ খোলার সাহস পায়না কেউ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় জানান, বাহাদুর চিহ্নিত সন্ত্রাসী। কেউ তার বিরুদ্ধে গেলে তাকে খুন হতে হবে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য সে টাকা দিয়ে স্থানীয় উশৃঙ্খল ও নারীদের হাতে রাখে। বাকিরা ভয়ে মুখ খোলার সাহস পায় না।
গত শনিবার মহসিন হোসেন ওরফে বাহাদুরের বিরুদ্ধে এক পরিবারকে মারপিট, ভাংচুর ও অবরুদ্ধ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেদিন সকালে ওই গ্রামের মৃত. মকবুল হোসেনের ছেলে মাহমুদুল হাসানের বাড়িতে হামলা চালিয়ে গেট ও বাড়ির ভিতরে ভাংচুর চালায় বাহাদুর ও তার লোকজন। বেধড়ক মারপিট করে তার স্ত্রী রুবী আক্তারকে। এসময় সাথে ছিলেন স্থানীয় তার (বাহাদুরের) সহযোগীরা। মাহমুদুল হোসেন ও তার স্ত্রী আহত হলেও ভয়ে বাড়ি থেকে বের হতে পারেনি। পরে সন্ধায় পালিয়ে থানায় একটি অভিযোগ করে মাহমুদুল। কিন্তু, সন্ত্রাসীদের ভয়ে বাড়ি যেতে পারেনি সে। পরে মিঠাপুকুর থানা পুলিশ রাত ৩ টায় মাহমুদুল ও তার স্ত্রীকে বাড়িতে রেখে আসেন। মাহমুদুল হাসান মোবাইল ফোনে বলেন, হামলাকারীদের ভয়ে এখনও বাড়ির বাইরে যেতে পারছি না। বাড়িতে পরিবার নিয়ে অবরুদ্ধ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছি।
তবে, অভিযুক্ত মহসিন ওরফে বাহাদুর দম্ভ করে বলেন, পূর্বে অনেক অপরাধী কর্মকাÐে জড়িত ছিলাম। কিন্তু এখন আর ওসব করি না।’ মাহমুদুলের বাড়িতে হামলা ও মারপিটের বিষয়ে বলেন, মাহমুদুল অপরাধ করেছে, তাই তাকে শাসন করা হয়েছে।’
ওই ইউনিয়নের বীট পুুুলিশিং কর্মকর্তা মিঠাপুকুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) এরশাদ আলী বলেন, বাড়িতে হামলার ও পরিবারের লোকজনকে অবরুদ্ধ করার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। ওই পরিবারকে পুুলিশী নিরাপত্তা দিয়ে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। হামলাকারী বাহাদুর একজন চিহ্নিত অপরাধী। তাকে গ্রেপ্তার করে আইনের হাতে সোপর্দ করার চেষ্টা চলছে।’ মিঠাপুকুর থানার ওসি আমিরুজ্জামান বলেন, বাহাদুর মোস্ট ওয়ান্টেড। থানার পশ্চিম এলাকার সড়কে এক সময় তার নেতৃত্বে চুরি, ডাকাতি, খুন, ছিনতাইসহ নানা অপরাধ কর্মকাÐ চলত। তাকে খুব দ্রæত গ্রেপ্তার করা হবে। অপরাধী যত শক্তিশালি হোক না কেন- কেউ পুলিশের হাত থেকে রক্ষা পাবেনা।