কাউনিয়া (রংপুর) প্রতিনিধি:
রংপুরের কাউনিয়ায় জমির সীমানা নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষ লোকজনের দেশীয় অস্ত্রের হামলায় আহত বাবাকে বাঁচাতে এগিয়ে গিয়ে লাঠির আঘাতে আহত শিশু আনজুয়ারা বেগম (১২) মারা গেছে। বৃহস্পতিবার (১২ মে) ভোরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় শিশুটি। সে টেপামধুপুর ইউনিয়নের বিশ্বনাথ গ্রামের আমজাদ হোসেনের মেয়ে এবং স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী। এর আগে গত সোমবার উপজেলার টেপামধুপুর ইউনিয়নের বিশ্বনাথ গ্রামে জমির সীমানা নির্ধারণ নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
টেপামধুপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদুল ইসলাম বলেন, গত সোমবার জমিজমা বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষের লোকজনেরা আব্দুল হামিজ ও তার আত্মীয় স্বজনদের উপর হামলা করে। প্রতিপক্ষ দেশীয় অস্ত্রের দিয়ে আব্দুল হামিজের ছেলে আমজাদ হোসেন মারপিট করতে থাকে। আমজাদ হোসেনের ১২ বছর বয়সের শিশু মেয়ে আনজুয়ারা এগিয়ে গিয়ে বাবাকে বাঁচাতে তাকে জড়িয়ে ধরে। এসময় প্রতিপক্ষের লোকজনেরা শিশু মেয়েটিকেও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে তার মাথায় আঘাত করলে ঘটনাস্থলে শিশুটি অজ্ঞান হয়ে পড়ে। তিনি বলেন, প্রতিপক্ষের হামলায় বাবাকে বাঁচাতে গিয়ে লাঠির আঘাতে শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
রহমানীয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বলেন, শিশু আনজুয়ারা লেখাপাড়ায় খুবই মেধাবী ছিল। সে তার বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেনীতে ভর্তি হয়েছিল। পরে সে স্থানীয় এনজিও পরিচালিত প্রাথমিক স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে লেখাপড়া করছে। মেধাবী শিশুর লোমহর্ষক হত্যাকান্ডে এলাকার মানুষ মর্মাহত।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, বিশ্বনাথ গ্রামের আব্দুল হামিজের বসতভিটার কিছু অংশ প্রতিবেশী সাবেক মেম্বার আব্দুল হাকিম নিজের দাবি করে এক মাস আগে সীমানা নির্ধারণ করেন। সেই সঙ্গে জমিতে থাকা গাছ কেটে ফেলেন। এই সীমানা নিয়ে সন্দেহ হলে হামিজ ও তার স্বজনেরা গত সোমবার বিকেলে পুনরায় সীমানা নির্ধারণ করতে যান। এতে হাকিম তার লোকজনেরা বাধা দেন। এ নিয়ে উভয় পক্ষ বাগবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে হাকিম তার লোকজনেরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আব্দুল হামিজ ও তার লোকজনের উপর হামলা করে। এতে হামিজসহ তার পক্ষের ছয়জন এবং হাকিমের পক্ষের তিনজন আহত হন। পরে হামিজসহ তার পক্ষের ছয়জনকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে আমজাদ হোসেনের মেয়ে আনজুয়ারা (১২) ও হামিজের স্ত্রী আমেনাকে (৫০) রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। আর আব্দুল হামিজ (৫৫), তার ছেলে আমজাদ হোসেন (৩৩), সিনবাদ (২৬) ও আফজাল হোসেন (৩৫) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় হামিজের চাচাতো ভাই আব্দুল সোলেমান বাদী হয়ে গত সোমবার রাতে কাউনিয়া থানায় মামলা করেছেন।
নিহত শিশুটির মা আবেদা বেগম বলেন, আমার শিশু মেয়েটির তো কোন অপরাধ ছিলনা। সে তার বাকাকে প্রতিপক্ষের আঘাত থেকে বাঁচাতে গিয়ে আমার শিশু মেয়েকে লাঠি দিয়ে মেরে নির্মম ভাবে হত্যা করেছে। আর যেন কোন সন্ত্রাসী প্রতিপক্ষরা এভাবে কোন মায়ের বুক খালি না করে। যারা আমার মেয়েকে হত্যা করেছে তাদের আমি ফাঁসি দেখে মরতে চাই।
শিশুটির আত্মীয়রা বলেন, হামলা ও নির্মম হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের দৃঠান্তমুলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাউনিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাসুদার রহমান বলেন, জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষের হামলার ঘটনা ঘটেছে।
এ ব্যাপারে সোমবার রাতে সোলেমান বাদী হয়ে ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। মামলার পরই অভিযুক্ত ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য আব্দুল হাকিম, মোস্তফা ইসলাম, আব্দুল খলিল মিয়া ও মজনু মিয়াকে গ্রেফতার করে গত মঙ্গলবার রংপুর আদালতে পাঠানো হয়। আদালত থেকে ওই চারজন সহ মামলায় অভিযুক্ত ১৩জন জামিনও পেয়েছে। কাউনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুমুর রহমান বলেন, ওই ঘটনায় আহত শিশু আনজুয়ারা বেগম বৃহস্পতিবার ভোর তিনটার দিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। তার মরদেহ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। ময়নাতদন্তের পর মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। তিনি বলেন, মামলার সব আসামী যেহেতু জামিনে আছে। সেহেতু আমরা হামলার ঘটনায় শিশুর মৃত্যুর বিষয়টি আদালতকে জানাবো।