গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধিঃ
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত করতোয়া, কাটাখলী ও বাঙ্গালী নদী থেকে দীর্ঘদিন ধরে শ্যালো ইঞ্জিন চালিত বড় বড় মেশিনের সাহায্যে অবাধে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করে আসছে এক শ্রেণির স্থানীয় প্রভাশালীরা। এতে করে নদীর তীরবর্তী এলাকা, বাঁধ, রাস্তা, কৃষি জমি ও বসতবাড়ীতে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে।
উপজেলার কাটাবাড়ী, শাপমারা, দরবস্ত, পৌরসভা ও ফুলবাড়ী ইউনিয়নের কাটাখালী ব্রিজ এলাকা পর্যন্ত প্রবাহমান করতোয়া নদীটির ফুলহার, বেতেরা, পলুপাড়া, সাহেবগঞ্জ, চক রহিমাপুর, তরফকামাল, কাইয়াগঞ্জ ও পৌরসভার খলসী, খলসী চাঁদপুর (ভেলামারি) এবং শাকপালা, হাওয়াখানা গনকবর এলাকার দক্ষিণ পশ্চিমে করতোয়া নদী থেকে এক শ্রেণির প্রভাবশালীরা অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করছে।
এছাড়াও কাটাখালী ও বাঙ্গারী নদীর সমসপাড়া, ধর্মপুর, বড়দহ, কাজীপাড়া, বিশ পুকুর, প্রস্তাবিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র এলাকা, ত্রিমহুনী, বালুয়া, বোচাদহ, দেওয়ানতলা ব্রিজসহ শালমারা ইউনিয়ন পর্যন্ত প্রায় অর্ধ শত এলাকায় শ্যালো ইঞ্জিন চালিত মেশিনের সাহায্যে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। শুধু নদী বা খাল নয় গ্রামের পারা মহল্লার পাশ থেকেও ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। উপজেলার প্রায় সব ইউনিয়নে অবৈধ বালু উত্তোলন চলছে।
এছাড়াও এক শ্রেণির প্রভাবশালী আবাদী জমি, ডোবা, খাল ও নদী থেকে মাসের পর মাস ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছে। অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে গত ১৭ আগস্ট গোবিন্দগঞ্জ নগরিক কমিটি থানা মোড়ে এক মনববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে। পরে গত ২৬ আগস্ট একই দাবিতে প্রশাসনের নিকট একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন। এরপর অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করলে নদী থেকে বালু বন্ধ হয়ে যায়।
স্থানীয় এলাকাবাসীদের অভিযোগ উপজেলা প্রশাসন অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনে অভিযান করলে বেশ কিছু দিন বালু উত্তেলন বন্ধ থাকলেও আবারো প্রভাবশালীরা শ্যালো ইঞ্জিন চালিত বড় বড় মেশিনের সাহায্যে বালু তুলছে। ফলে বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এছাড়াও বড় বড় ডাম ট্রাক যাতায়াত করায় রাস্তা ও পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে। প্রভাবশালী হওয়ায় এদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। আনেক সময় প্রতিবাদ করলে মারপিট ও হুমকী শিকার হতে হচ্ছে অনেককেই। এলাকাবাসী অবৈধ বালু উত্তোলন অবিলম্বে বন্ধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
গোবিন্দগঞ্জ নাগরিক কমিটির আহবায়ক এম এ মতিন মোল্লা মুটোফোনে জানান, অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনকারী প্রভাশালীদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করায় প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। প্রশাসনের অভিযানে কিছুদিন অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ থাকে। তবে তার দাবি প্রশাসন, কতিপয় রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদিকসহ সব পক্ষকে ম্যানেজ করে আবারো অবৈধ উপায়ে বালু উত্তোলন শুরু হয়েছে। অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে তাদের আন্দোলন চলবে। প্রয়োজনে উচ্চ আদালতে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে রিট পিটিশন দায়েরের উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার রামকৃষ্ণ বর্মন মুটোফোনে বলেন, প্রশাসনের বিরুদ্ধে ম্যানেজের অভিযোগ ভিত্তিহীন। ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হওয়া অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। অবৈধ উপায়ে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টসহ আইনি সব ধরনের ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।
প্রভাবসালীদের অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসনের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এমন দাবি সচেতন এলাকাবাসীর।