দিনাজপুর প্রতিনিধি:
দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে কয়লা আত্মসাতের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় একরাত জেলা কারাগারে আটক থাকার পর জামিনে মুক্ত হয়েছেন বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানী লিমিটেডের সাবেক ছয়জন ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (এমডি) ২২ জন কর্মকর্তা। বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) সকাল পৌনে ৯ টায় জেলা কারাগার থেকে ছাড়া পেয়েছেন তারা।
আদালত সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার মামলার নির্ধারিত তারিখে খনির সাবেক ও বর্তমান ২২ জন কর্মকর্তা দিনাজপুরের স্পেশাল জজ মোঃ মাহমুদুল করীমের আদালতে হাজির হলে আদালত তাদের জামিন বাতিল করে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন। দুপুরে আদালত থেকে তাদের জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়। জামিন বাতিল করার পর উচ্চ আদালতে করা জামিন আবেদন মামলা পেন্ডিং থাকার প্রমানপত্র বুধবার বিকেলে আদালতে পেশ করা হলে ওই ২২ আসামীর জামিন আদেশ আবারও বহাল রাখে একই আদালত। এই আদেশ কারাগারে পৌছানোর আগেই আসামীদের হাজতে নেয়ায় বুধবার কারাগার থেকে মুক্তি পাননি তারা। বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ৯ টায় কারাগার থেকে ছাড়া পেয়েই তড়িঘড়ি করে কারাপ্রাঙ্গন ত্যাগ করেন খনির সাবেক ৬ এমডিসহ ২২ কর্মকর্তা।
দিনাজপুর জেলা কারাগারের জেলার ফরিদুর রহমান রুবেল জানান, বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার পর ওই ২২ জন আসামীর জামিন বহালের আদেশ আদালত থেকে কারাগারে আসে। কিন্তু ততক্ষনে তাদের হাজতখানায় নেয়া হয়। সন্ধ্যার পর হাজতখানা থেকে আসামীদের বের করার কোন নিয়ম না থাকায় বুধবার তাদের মুক্তি দেয়া সম্ভব হয়নি। ফলে বৃহস্পতিবার সকালে তাদের মুক্তি দেয়া হয়।
আসামীপক্ষের আইনজীবী এডভোকেট নুরুজ্জামান জাহানী জানান, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ওই মামলায় আসামীদের জামিন বিষয়ে দায়ের করা একটি মামলা হাইকোর্টে পেন্ডিং রয়েছে। এই পেন্ডিং মামলাটি বিচারক জানতে না পারায় জামিন বাতিল করে আসামীদের জেল হাজতে প্রেরনের নির্দেশ দেন। পরে বিকেলে হাইকোর্টের এই পেন্ডিং মামলার কাগজ আদালতে দাখিল করার পর দিনাজপুরের স্পেশাল জজ মোঃ মাহমুদুল করীমের আদালত আবার ওই ২২ আসামীর জামিন আদেশ বহাল রাখেন। আদালতের এই আদেশ সন্ধ্যায় কারাগারে পৌছানো হয়। সন্ধ্যার পর কারাগার থেকে আসামীদের বের করার নিয়ম না থাকায় বুধবার তাদের কারাগার থেকে বের করা সম্ভব হয়নি। ফলে বৃহস্পতিবার কারাগার থেকে ছাড়া পান তারা।
এরা হলেন- বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির সাবেক এমডি মোঃ আবদুল আজিজ খান, প্রকৌশলী খুরশীদুল হাসান, প্রকৌশলী কামরুজ্জামান, মোঃ আমিনুজ্জামান, প্রকৌশলী এসএম নুরুল আওরঙ্গজেব ও সাবেক এমডি প্রকৌশলী হাবিব উদ্দিন আহমেদ, সাবেক জিএম (প্রশাসন) মোঃ শরিফুল আলম, মো. আবুল কাসেম প্রধানীয়া, আবু তাহের মোঃ নুর-উজ-জামান চৌধুরী (মাইন অপারেশন বিভাগ), নিরাপত্তা বিভাগের ম্যানেজার মাসুদুর রহমান হাওলাদার, মোঃ আরিফুর রহমান (ম্যানেজার, মেইন্টেন্যান্স অ্যান্ড অপারেশন), নিরাপত্তা বিভাগের ম্যানেজার সৈয়দ ইমাম হাসান, কোল হ্যান্ডলিং ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ডিজিএম মুহাম্মদ খলিলুর রহমান, মেইন্টেন্যান্স অ্যান্ড অপারেশন বিভাগের ডিজিএম মো. মোর্শেদুজ্জামান, প্রোডাকশন ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ডিজিএম মোঃ হাবিবুর রহমান, মাইন ডেভেলপমেন্ট বিভাগের ডিজিএম মোঃ জাহেদুর রহমান, ভেন্টিলেশন ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহকারী ব্যবস্থাপক ডিজিএম সত্যেন্দ্র নাথ বর্মণ ও মো. মনিরুজ্জামান, কোল হ্যান্ডলিং ম্যানেজমেন্টের ম্যানেজার মোঃ শোয়েবুর রহমান, স্টোর ডিপার্টমেন্টের ডিজিএম একেএম খালেদুল ইসলাম, প্রোডাকশন ম্যানেজমেন্টের ম্যানেজার অশোক কুমার হালদার ও মাইন প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের ডিজিএম মোঃ জোবায়ের আলী।
উল্লেখ্য, গতবছরের ২৪ জুলাই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক মোঃ সামসুল আলমের পক্ষে দুদক দিনাজপুর সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আবু হেনা আশিকুর রহমান আদালতে সাবেক ৭ জন ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (এমডি) ২৩ জনকে আসামী করে চার্জশীট দাখিল করেন এবং আদালত গত বছরের ১৫ অক্টোবর চার্জশীট আমলে নেন। এদের মধ্যে সাবেক এমডি মোঃ মাহবুবুর রহমান মারা যাওয়ায় বর্তমানে এই মামলার চার্জশীটভুক্ত আসামী ২২ জন।
চার্জশীটে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ২০০৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই পর্যন্ত (মেয়াদে) বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ঘাটতিকৃত ১ লাখ ৪৩ হাজার ৭২৭.৯৯ মেট্রিক টন কয়লা আত্মসাতে জড়িত। যার বাজার মূল্য ২৪৩ কোটি ২৮ লাখ ৮২ হাজার ৫০১ টাকা। আসামিরা দন্ডবিধির ৪০৯/১০৯ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলে তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।
বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে কয়লা উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনায় ২০১৮ সালের ২৪ জুলাই বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির পক্ষে ম্যানেজার (প্রশাসন) মোহাম্মদ আনিছুর রহমান বাদী হয়ে ১৯ জনকে আসামি করে পার্বতীপুর মডেল থানায় মামলা করেছিলেন। ওই মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় দুদককে। দুদকের উপ-পরিচালক মোঃ সামসুল আলম এই তদন্ত শেষে চাজশীট তৈরী করেন। চার্জশীটে এজাহারভুক্ত ১৯ জনের মধ্যে ১৪ জনকে আসামি করা হয়। এছাড়া তদন্তে নতুন করে ৭ জন সাবেক এমডিসহ ৯ জনের নাম বেরিয়ে আসে। এ নিয়ে চার্জশীটে ২৩ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। কিন্তু একজন সাবেক এমডি মারা যাওয়ায় তাকে বাদ দিয়ে বর্তমানে এই মামলার চার্জশীটভুক্ত আসামী ২২ জন।