মুসফিদা রাহমান ফিদা
মহামারী, মাত্র কয়েকবছর আগেও দেশের সর্বস্তরের মানুষ পরিচিত ছিলো না এই শব্দের বাস্তবতার সাথে। শুধুমাত্র বইয়ের পাতায় কিংবা প্রকাশিত বহু পুরাতন রুপালি পর্দার ছায়াছবিতেই দেখা মেলে এই কল্পকাহিনির।
‘সত্যিকার অর্থে সময়ের সঠিক ব্যবহার করলে করোনাকালীন সময়ও হয়ে উঠতে পারে আমাদের সকলের জীবনের স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মতো সময়। যা পরিবর্তন করে দিতে পারে আমাদের মাঝের দূর্বলতাকে মনের ভেতরের শক্তিরুপে।’
মহামারী অর্থাৎ বইয়ের ভাষায় ওলাবিবি বা কালাজ্বর পুরো গ্রামে তাণ্ডব চালিয়ে ক্ষান্ত না হয়ে চলে গ্রামের পর গ্রাম ত্রাসে, সেই পরিস্থিতি দেখেও মানতে নারাজ আমাদের মন।
কিন্তু, আজ এত শত বছর পর স্বপ্নের সেই আধুনিক যুগ, যেখানে আর স্বপ্ন দেখতে হয় না পাখির পাখায় চেপে উড়ে যাবে অবুঝ মন। যে যুগে দাঁড়িয়ে নিমেষে উড়োজাহাজে চেপে উড়াল দেয় মানুষ এক দেশ থেকে আর এক স্বপ্নের দেশ। যেখানে রুপকথার দৈত্য – দানবেরা হয়েছে আ্যনিমেশনের মজাদার গেমস। যা কি না গল্পের পাতায় পড়ার জন্য আর অপেক্ষা করতে হয় না। সেই ম্যাজিকাল মুহূর্তে দাড়িয়ে অদৃশ্য এক দানব বা এক ক্ষুদ্র অশুভশক্তি নিমেষে স্তব্ধ করেছে পুরো পৃথিবীকে।
এমন অবস্থায় আমরা গৃহবন্দী। বন্ধ পড়েছে স্কুল কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়। বিগত বছর থেকে আজ অব্দি, চলছে না কোন প্রাতিষ্ঠানিক পাঠদান। প্রায় অচল শিক্ষাব্যবস্থার একটি বড় অংশ।
মূলত মানষিক বিপর্যয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। যারা কিনা করোনার ঠিক পূর্ব মূহূর্তে স্বপ্ন দেখেছিলেন উচ্চ শিক্ষার পাঠ চুকিয়ে অতিশীঘ্রই হাল ধরতে যাচ্ছেন পরিবার তথা দেশের। আজ করোনাকালীন সময়ে সে আশার গুড়ে বালি।দুর্ভোগ ও দুর্ভাবনার কোন শেষ নেই কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, খুলবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর সম্পন্ন হবে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ বর্ষের পরীক্ষা। এদিকে তো চাকরির বয়সতো যায় যায়। তাকে তো আর এই সময় ধরে রাখার সাধ্য কারোর নেই।
ঠিক এমন মুহূর্তে ঘরে বসেও নিজেকে জীবিকার কঠিন পরীক্ষায় পরিপূর্ণ লড়াইয়ে প্রস্তুত করা সম্ভব। খুঁজে বের করা সম্ভব নিজের মাঝের দূর্বলতা বা অপারগতাকে। এই যেমন আমাদের দেশের সদ্য পাস করা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জীবনের প্রথম প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সফল হতে ব্যর্থ হোন, ফলে বসতে হয় পর পর কয়েক বছর একই পরীক্ষায়। ব্যয় করতে হয় আবেদনের জন্য টাকা যা কিনা হিমসিম খাইয়ে দেয় । সাথে দিনের পর দিন বাড়ছে তাদের মানুষিক যন্ত্রনা, হতাশা, বাড়ছে দেশের বেকারত্বের হারও ।
এর কারণ কী, কে দায়ি, এবং কেন, কোথায় এর প্রতিকার?
এর প্রথম ও অদ্বিতীয় কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া বেশিরভাগই সু্যোগ সময় ও মানসিকতা তৈরি করে উঠতে পারেন না প্রাতিষ্ঠানিক পড়া-শুনার বাইরে প্রতিযোগীতামূলক পরীক্ষার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করবার। জীবনের কমপক্ষে ৪ থেকে ৫ টি বছর একই ভাবে কেটে যায়। এরপর স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর শুরু হয় এসব প্রতিযোগীতামুলক পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ। ফল প্রকাশের মাঝের ৬-৭ মাস যে সময় পাওয়া যায় তাতে নিজেকে তৈরি করা খুব কঠিন অগ্নিপরীক্ষা। বেশিরভাগই জ্বলে যায় এই অগ্নি দহনে।
সত্যিকার অর্থে সময়ের সঠিক ব্যবহার করলে করোনাকালীন সময়ও হয়ে উঠতে পারে আমাদের সকলের জীবনের স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মতো সময়। যা পরিবর্তন করে দিতে পারে আমাদের মাঝের দূর্বলতাকে মনের ভেতরের শক্তিরুপে।
সকল শিক্ষার্থীদের মাঝে কোন না কোন বিষয়ে দূর্বলতা থাকেই, কেউ ইংরেজি ভাষায়, কেউ ব্যাকরণে, কেউ গণিতে কেউ বা বাংলা সাহিত্যে ও ব্যাকরণে আর রইলো সাধারণ জ্ঞান যার নেই কোন নির্দিষ্ট পাঠ্যক্রম। এই করোনাকালীন সকল প্রতিকূলতার মাঝেও নিজেকে প্রস্তুত করা সম্ভব সকল কঠিনতর বিষয়ে। গণিতের সূত্র মাথায় ঘষে নেওয়া কিংবা ইংরেজি টা ঠোঁটের ডগায় আয়ত্ত করে নেওয়া সাথে পরখ করা বাংলা ব্যাকরণ আর নিজের মতো করে সাধারণ জ্ঞান অন্বেষণ। এই যে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পরীক্ষা শেষ করে ব্যর্থতার বোঝা মাথায় নিয়েই যখন শুরু করা হয় সফলতার পথ খোঁজা তা তো সময়কে প্রতিনিয়ত একই পরিমাণে কাজে লাগিয়ে আগেই সম্ভব সফলতার দোরগোড়ায় পৌছানো। আর করোনাকালীন সময় হলো সেই সময় ও সু্যোগ গুলোর মধ্য অন্যতম। করোনা পরবর্তীতে শেষ বর্ষের পরীক্ষার পালা চুকিয়ে জীবনের প্রথম অংশ গ্রহণ করা প্রতিযোগীতামূলক পরীক্ষাই হতে পারে জীবনের সেরা পরীক্ষা। চোখের পলকেই পাওয়া সম্ভব আলাদীনের চেরাগ। এভাবেই ঘুচিয়ে নেওয়া সম্ভব বেকারত্বের অভিশাপ। ঝড় আসার পূর্বেই প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয় নিশ্চয় ঝড়ের পড়ে নয় ঠিক তেমনি সকলেই পারে সময়ের চাকায় ভাগ্য ফেরাতে সঠিক দিক নির্দেশনায়। এ দেশের গ্রাম ও শহরের অধিকাংশ মানুষই এখন ইন্টারনেট সেবার আওতাভুক্ত। সোশ্যাল মিডিয়ায় কম বেশি সকলেই আসক্ত। এই আসক্ততাই হয়ে উঠতে পারে বন্দীদশার প্রস্তুতি শুরু মাধ্যম। এ ছাড়া বই-পত্র তো আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী আছেই যার মাধ্যমে সহজে শিখে নেওয়া যায় সকল বিষয়ের ট্রিকস।
সবচেয়ে আশীর্বাদের বিষয় হলো, ঢাকার বাইরে যে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে সেসবের শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ প্রতিবছর হয় ঢাকামূখী বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার সাথে সুপরিকল্পিত পড়াশোনা এবং দেশের স্বনামধন্য কোচিং সেন্টারের স্বনামধন্য শিক্ষকের সান্নিধ্য পেতে। কিন্তু ২০২০-২১ সালে এই দুঃসময়ে এসব শিক্ষকেরাই প্রতিনিয়ত অনলাইন ভিত্তিক পাঠদান করছেন যা কি না সকল শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ স্থান থেকে সুযোগ করে দিচ্ছে শিক্ষকদের কাছে শেখার। ফলে তা সময়, পরিশ্রম এবং অর্থের ব্যয় থেকে রক্ষা করছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের।
হ্যাঁ, করোনা কালীন সময়ের রয়েছে খারাপ দিক যা অনস্বীকার্য। তবে তার খারাপ দিক পরিহার করে সময়ের ভালোদিক অন্বেষণের ব্রতী হলে সকল শিক্ষার্থীদের সাথে এগিয়ে যাবে দেশটা, যেকোনো পরিস্থিতিতে।
কারণ ‘লুকিয়ে আছে দেশের উন্নতি সকল শিক্ষার্থীদের উন্নয়নে’।
লেখক: শিক্ষার্থী, কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়, আসানসোল, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।