তীব্র কুয়াশা আর হাড়কাপানো হিমেল  হাওয়া: হাসপাতালে ক্রমেই বাড়ছে রোগীর সংখ্যা

আমাদের প্রতিদিন
2024-04-24 05:23:29

একদিনে ৭২শিশু ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত

 

আহসান হাবীব নীলু,কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:

ঘন কয়াশার সঙ্গে হিমেল বাতাসের কারণে কুড়িগ্রামে শীতের তীব্রতাবেশী অনুভুত হচ্ছে। ফলে দিনমজুর,ছিন্নমুল ও হতদরিদ্ররা পড়েছে ভীষণ কষ্টে। প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্র না থাকায় রাতের বেলা হাড় কাঁপানো শীতে কাবু হয়ে যাচ্ছেন অনেকেই।  অনেকেই খুড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। বৃদ্ধি পেয়েছে শীত জনিত রোগবালাই।হাসপাতালগুলোতে ব্যাপক হারে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ২৪ ঘন্টায় জেলার ৯টি সরকারি হাসপাতালে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৭২ শিশু ভর্তি হয়েছে।

কুড়িগ্রাম সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্ট্যাফ আখের আলী জানান, শীতের কারনে জেলাশহরের বাইরের হাসপাতালে নিউমোনিয়ায় আক্রানন্ত হয়ে বৃহস্পতিবার ভর্তি হয়েছে ১২জন শিশু আর ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে ৩১জন। এর মধ্যে শিশু হলো ২২জন।

কুড়িগ্রাম ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার শাহিনুর রহমান শিপন জানান, তীব্র শীতের কারণে শীতজনিত রুগীর সংখ্যা বেড়েছে। বৃহস্পতিবার এ হাসপাতালের আউটডোরে চিকিৎসা নিয়েছে ৮৮০জন। আর হাসপাতালে ভর্তি আছে ৩৪৮জন।শুধু ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি আছে ৪০জন এর মধ্যে শিশু ৩৮জন। শ্বাসজনিত উপসর্গ নিয়ে ভর্তি আছে ৭৭জন রোগী।

রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তুহিন আলী জানান, বৃহস্পতিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত কয়েকদিন ধরে কুড়িগ্রামে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশে পাশেই থাকছে। ঘন কয়াশার কারণে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সূর্যের মুখ দেখা যাচ্ছেনা। বিকেল থেকে ঠান্ডা নামছে। রাতে তা অসহনীয় হয়ে যাচ্ছে। মুলত কুয়াশার সাথে হিমেল বাতাস থাকায় ঠান্ডার মাত্রা বেড়েছ কয়েকগুন। ঘন কুয়াশার কারণে ট্রেন ও নৈশ কোচের শিডিউল বিভ্রাট ঘটছে প্রতিদিন। কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকা চলাচল কারী কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ও রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেন দুটি ৪-৫ ঘন্টা বিলম্বে আসা যাওয়া করছে। নৈশকোচগুলিও ২-৩ ঘন্টা বিলম্বে গন্তব্যে পৌঁছে যাচ্ছে।

বৃহস্পতিবার সরেজমিন কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার শিবরাম গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, স্থানে স্থানে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে সাধারণ মানুষ। শিবরাম গ্রামের বাসিন্দা জরিনা বেওয়া বলেন, ‘ল্যাপ তোশক কোটে পাই।  হামার কপালোত খ্যাতাও জোটেনা। যদি কাইয়ো সাহায্য করিল হয়। আল্লাহ তার ভাল করিল হয়। হামরা অনেক দোয়া দিলোং হয়। কিন্তু কপাল খারাপ। চেয়ারম্যান মেম্বার কাইয়ো খোঁজখবর নেয় না হামার।’

শিবরাম গ্রামের বাসিন্দা আজগার আলী জানান, অসুস্থতার কারণে গত কয়েকদিন থেকে কাজেযেতে পারিনি। প্রয়োজনীয় শীতের কাপড়ও নেই। সামর্থও নেই শীতের পোশাক কেনার। তাই এই শীতে চরম কষ্টেআছি পরিবারের ৫সদস্য নিয়ে। কেউ আগুন জ্বালালে সেখানেই বসে পড়েন ঊষ্ণতা নিতে। ধোয়া উপেক্ষা করে ঘণ্টা পর ঘণ্টা বসে থাকেন। 

এদিকে শ্রমজীবী নারী-পুরুষদের অনেকেই প্রচন্ড ঠান্ডার কারণে ক্ষেতে কাজ করতে পারছেনা। সকাল পেরিয়ে কাজে ধরলে গৃহস্থরা কাজে নেননা। শিবরাম গ্রামের দিনমজুর নুরবানু বেগম ও নাজিনা বেগম জানান, শীতে কাজ করতে কষ্ট হলেও পেটের দায়ের তীব্র শীত উপক্ষো করে অনেক সময় কাজ করতে হয়। তবে ঠান্ডায় কাজ করতে গিয়ে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছে বলে জানান তারা।

এদিকে মানুষের পাশাপাশি ঠান্ডায় কাঁপছে গবাদী পশুও। আক্রান্ত হচ্ছে নানা রোগব্যাধিতে। হলোখানা ইউনিয়নের সন্ন্যাসী গ্রামের বাসিন্দা মর্জিনা বেগম জানান, বর্তমানে গবাদীপশুর ঘাস সংকট দেখা দিয়েছে। তার উপর প্রচন্ত শীতে ভীষণ কষ্ট যাচ্ছে গৃহপালিত পশুপাখি।

কুড়িগ্রাম জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার জানান, জেলায় হতদরিদ্রদের মাঝে এ পর্যন্ত ৩৮ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। নতুন করে আর শীতবস্ত্র বরাদ্দ পাওয়া যায়নি।