কুড়িগ্রামে মাঝারী শৈত্যপ্রবাহেখেটেখাওয়া মানুষের ভোগান্তি ঃ স্বাভাবিক জীবন বিপর্যস্ত

আমাদের প্রতিদিন
2024-04-23 08:50:42

 

আহসান হাবীব নীলু, কুড়িগ্রাম:

‘বাহে শাঁতাও নামি গেইছে। সেই ঠান্ডা, গাও জমি যায়। অল্প ট্যাহা নিয়া শহরোত গড়ম কাপড় কিনবার আসলং। দাম শুনিতো মাতাত হাত। কাপড়োত হাতে দেওয়া যায় না।’এ অভিব্যক্তির কথা জানান কুড়িগ্রাম শহরের নছর উদ্দিন মার্কেটে পুরাতন শীতবস্ত্র কিনতে আসা মোগলবাসা সিতাইঝার চরের দারোগ আলী’র। একই চরের আব্দুল বাতেন বলেন,‘শীতত হামরা মরি যাবার নাগছি। কাইয়ো খোঁজ খবর নেয় না। চেয়ারম্যান মেম্বার এমপি কাইয়ো না। ভোটের সময় নানান রঙ্গের কথা এ্যালা ওমরা হামাক চেনেই না।’

কুড়িগ্রামের রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (চ:দা:) তুহিন মিয়া জানান, কুড়িগ্রামে তীব্র শৈত্যপ্রবাহে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। রবিবার (৮ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় জেলায় সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা চলতি শীত মৌসুমে কুড়িগ্রামের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা।

তাপমাত্রা কমে যাওয়ার ফলে হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। শীতের প্রকোপে কাহিল হয়ে পরেছে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। বিশেষ করে জেলার ২৭৬টি দ্বীপচরের প্রায় সাড়ে ৪ শতাধিক’গ্রামের ৫লক্ষাধিক দরিদ্র মানুষ শীতবস্ত্রের অভাবে দিন পার করছেন।

কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শাহীনুর রহমান সরদার জানান, শীতের প্রকোপ বাড়ার সাথে সাথে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, সর্দি, জ্বর, কাশি এবং শ্বাসকষ্টজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে শিশুরা এসব রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। রবিবার আড়াই শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে মোট রোগী ভর্তি রয়েছে ২৯৩জন। চাপ বেশি ডায়রিয়া ও শিশু ওয়ার্ডে। শিশু ওয়ার্ডে ৪৮টি বেডের বিপরীতে ৬৮জন শিশু ভর্তি হয়েছে। অপরদিকে ডায়রিয়া আইসোলেশন ওয়ার্ডে ১২টি বেডের বিপরীতে ৩১জন ভর্তি হয়েছে। তবে নেবুলাইজারও ও অক্সিজেন সিলিন্ডার পর্যাপ্ত থাকায় প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে কোন সমস্যা হচ্ছে না। তবে আউটডোরে রোগীর চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় চিকিৎসকদের হিমসীম অবস্থা।

কুড়িগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত আখের আলী জানান, গত ন২৪ ঘন্টায় জেলা সদরের বাইরে ৮ উপজেলায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ডায়রিয়ায় ৩৯জন এর মধ্যে শিশু ২৫জন এবং নিউমোনিয়ায় ১৯জন এর মধ্যে শিশু ১৬জন।

সীমান্ত জেলা কুড়িগ্রামের তিন দিকে ভারতের পশ্চিম বাংলা, আসাম ও মেঘালয় প্রদেশ। হিমালয়ের পাদদেশের জেলা হিসাবে প্রতি বছর আগাম শীত পরে এবং শীতের তীব্রতা অন্যান্য জেলার থেকে বেশী। গত দু’দিন ধরে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হওয়ায় দরিদ্র মানুষ চরম পরেছে চরম দুর্ভোগে। কনকনে হিমেল হাওয়া গ্রাম ও শহর অঞ্চলের রাস্তায় লোক চলাচল অন্যান্য দিনের তুলনায় কমে গেছে। শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় লোকজন দিনের বেলা মাফলার, উলেন টুপি, জাম্পার, চাদর ও কোট পড়ে চলাচল করছে। শহরের ঘোষপাড়া, কলেজ রোড, শহীদ মিনার ও পুরাতন শহরে নছর উদ্দিন মার্কেটে গরম কাপড়ের দোকানে ভীর বাড়ছে। সুযোগ বুঝে ব্যবসায়ীরা শীতের পোষাকের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে স্বল্প আয়ের মানুষজন পরেছে বিপাকে।

পুরাতন কাপড় ব্যাবসায়ী শাহাদৎ হোসেন জানান, পুরাতন কাপড়ের গাইটের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্রেতাদের কাছে বেশী দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। স্বল্প আয়ের মানুষগুলো গড়ম কাপড় কিনতে এসে ফিরে যাচ্ছে অর্থ সংকুলান না হওয়ায়।

অপর দিকে তীব্র শীতে আগাম জাতের আলু ও বীজতলায় কোল্ড ইনজুরীর শংকা করছে চাষীরা। কৃষি বিভাগ কৃষকদের বীজ তলায় ঔষধ ¯েপ্রসহ বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত জানান, এখন পর্যন্ত মাঠ পর্যায়ে কোন সমস্যা দেখা যায়নি। তারপরও কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হচ্ছে যাতে তারা ক্ষতির মুখে না পরেন।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, আমরা জেলার সব উপজেলায় খোঁজখবর নিচ্ছি। জনপ্রতিনিধিদের সাথে যোগাযোগ করছি। এখন পর্যন্ত ২৫ হাজার কম্বল মজুদ রয়েছে। ইতোমধ্যে ৩৮ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।