তারাগঞ্জে ইটভাটায় জমির উপরিভাগের মাটি পরিবহনে নষ্ট সড়ক-মহাসড়ক

আমাদের প্রতিদিন
2024-04-26 03:46:48

ফসলি জমির বারোটা

 

প্রবীর কুমার কাঞ্চন, তারাগঞ্জ (রংপুর):

 আমন ধান কাটা শেষ হতে না হতেই রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায় ফসলি জমির মাটি বিক্রির হিড়িক পড়েছে। নগদ টাকা পাওয়ার আশায় অনেক কৃষক এ কাজ করছেন। এসব মাটি নিয়ে ট্রাক-ট্রলি ইটভাটায় চলাচল করায় মহাসড়কসহ গ্রামীন রাস্তাগুলোর বিভিন্ন স্থানে ভেঙ্গে যানবাহন চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। এভাবে উপরিভাগের মাটি কাটায় জমির উর্বরতা কমে যাবে বলে জানিয়েছেন কৃষিবিদেরা । স্থানীয় লোকজন জানান, ফসলি জমির মাটি বেচা-কেনার কাজে এক শ্রেনীর ব্যবসায়ী আছেন। তারা বছরের বিভিন্ন সময় কম দামে একর বা বিঘা চুক্তিতে কৃষকের জমির মাটি কিনে রাখেন। ভাটার মৌসুমে জমি থেকে মাটি কেটে তা বেশি দামে ইটভাটায় সরবরাহ করেন। কোনো কোনো  কৃষক সরাসরি ভাটার মালিকের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে মাটি বিক্রি করেন।

জানাগেছে, উপজেলার আয়তন-১২৮.৬৪ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের মধ্যে ১১ হাজার ৫৫২হেক্টর আবাদি জমি রয়েছে। এ সব কৃষি জমিকে কেন্দ্র করে বৈধ্য ও অবৈধভাবে ২৯টি ইটভাটার অবস্থান। এর মধ্যে ৬৩১৩ একর জমির আয়তনে ২০টি ভাটা রয়েছে। ইট তৈরীর প্রধান কাঁচামাল মাটি ফসলি জমির মাটি ইট তৈরীতেও সুবিধা  এ কারনে চাহিদা বেশি আবার দামও কম অনেক।

 গতকাল রবিবার (৮ জানুয়ারি) সকালে উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের শেরমস্ত, চিকলী, দোয়ালীপাড়া, খিয়ারজুম্মা কুর্শা ইউনিয়নের রহিমাপুর, জিগারতলা, পলাশবাড়ী,  সয়ার ইউনিয়নের বৈদ্যনাথপুর, অনন্তপুর, বুড়িরহাট, কাজিরহাট, ইকরচালি ইউনিয়নের কাঁচনা, বরাতি, বামনদীঘী ও হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নে সরকারপাড়া, হাতিবান্দা, পাতাইপাড়া, হাড়িয়ারকুঠি সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে গ্রামে গ্রামে ফসলি জমির মাটি কাটা চলছে। ৩-৯ ফুট গভীর পযর্ন্ত  মাটি কাটা হচ্ছে। কোথাও খননযন্ত্রের সাহায্যে কোথাও আবার শ্রমিক নিয়ে মাটি কেটে ট্রাক্টর ও টলির সাহায্যে বিভিন্ন ইটভাটায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।  প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে মাটি খেকো মুনাফালোভীদের কাজে লাগিয়ে ভাটা মালিকানা ‘ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রন) আইন ভঙ্গ করে ইটভাটায় ট্রাক্টর দিয়ে মাটি কেটে ইটভাটায় নিয়ে যাচ্ছেন। তারা আইনকে কোন তোয়াক্কাই করছে না। হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নের ইলিয়াস উদ্দিন বলেন, আমার জমির পাশের জমির মালিক ইটভাটায় মাটি বিক্রি করছেন। তাকে আমরা মাটি বিক্রি না করতে অনুরোধ জানিয়েছিলাম, কিন্তু তিনি অনুরোধ রাখেননি। এভাবে মাটি বিক্রি করলে উৎপাদন কমে যাবে এটাও তাকে বোঝাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কিছু মানুষ নগদ টাকার লোভে আমাদের কৃষি জমির ক্ষতি করছেন।  নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাটি ব্যবসায়ীরা বলেন, মাটিকেনা-বেচা করাই আমাদের ব্যবসা। কোন কৃষকের জমি থেকে তো আমরা জোর করে মাটি নিতে পারি না। যারা মাটি বেঁচাতে আগ্রহ প্রকাশ করে তাদের কাছ থেকে নগদ টাকা দিয়েই মাটি নেই। উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্ভিদ ও সংরক্ষন কর্মকর্তাজানান, ফসলি জমির উপরিভাগের ১০-১৩ ইঞ্চির মধ্যে খাদ্যের গুণাগুণ ও জৈব উৎপাদন থাকে। সেই মাটি কাটা হলে জমির খাদ্য জৈব উপাদান চলে যায়। এতে জমির স্থায়ী ক্ষতি হয়। উপজেলা কৃষি অফিসার উর্মি তাবাসসুম বলেন, কৃষি জমির উপরিভাগের মাটি এভাবে কৃষকরা বিক্রি করলে কমপক্ষে ২/৩ বছর ওই জমি থেকে ভালো ফলন আশা করা যায়না। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রাসেল মিয়া জানান, অভিযান চালিয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।