তীব্র শীতে বিপাকে দিনাজপুরের পৌনে ৮ লাখ শ্রমিক

আমাদের প্রতিদিন
2024-04-18 15:09:22

 

দিনাজপুর প্রতিনিধি :

অব্যাহত শৈত্য প্রবাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দিনাজপুরসহ দেশের উত্তর জনপদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। তীব্র শীতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে দিনাজপুর জেলার প্রায় পৌনে ৮ লাখ নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। দিনাজপুরে সোমবার (৯ জানুয়ারী) সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস। দিনাজপুরে এটিই এই মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। আর সোমবার দেশের সবনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে দেশের সর্বোত্তরের উপজেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস।

অব্যাহত শৈত্য প্রবাহ আর হাড় কাঁপানো তীব্র শীতে বিপাকে পড়েছে দিনাজপুর জেলার দিনে এনে দিনে খাওয়া নি¤œ আয়ের প্রায় পৌনে ৮ লাখ শ্রমিক। তীব্র শীতের কারনে ঠিকমতো কাজ করতে পারছেন না এসব শ্রমিক। অনেকে জীবন ও জীবিকার তাগিদে কাজের সন্ধ্যানে বের হয়েও কাজ না পেয়ে বাড়ী ফিরে যাচ্ছেন। আজ সোমবার (৯ জানুয়ারী) সকাল ৯টায় শ্রমিকের হাট হিসেবে পরিচিত দিনাজপুর শহরের ষষ্টিতলায় হাতে বাজারের ব্যাগ নিয়ে বসেছিলো সত্তরোর্ধ বয়স্ক শ্রমিক লোকমান আলী। এই বয়সেও জীবিকা নির্বাহ করেন ঘরের ছাউনির কাজ করে। বাড়ী বিরল উপজেলার দামাহার গ্রামে। সকালে দীর্ঘ ৪ মাইল পথ হেটে এসেছেন ষষ্টিতলায় কাজের সন্ধ্যানে। তীব্র শীত উপেক্ষা করে ষষ্টিতলায় এসে বসে কাঁপছেন থরথর করে। তার সাথে কথা বলতে গিয়েই জানালেন, ছেলে সন্তান নেই। দুই মেয়ের বিয়ে দেয়ার পর এখন বাড়ীতে শুধু বুড়ো আর বুড়ি। একদিন কাজ না করলে বাড়ীতে চুলা জ্বলে না। তাই তীব্র শীত উপেক্ষা করে এসেছেন কাজের সন্ধ্যানে। হাতে নিয়ে এসেছেন বাজারের ব্যাগ। তীব্র শীতে কাঁপুনি কন্ঠে তিনি জানালেন, এই ঠান্ডাটার হামার নাহে বারে, এইটা বড়লোকের। এই ঠান্ডাত বাড়ীত বসি থাকিলে হামার পেট চলিবে? তিনি জানান, কয়েকদিন থেকে প্রচন্ড শীতের কারনে কাজ পাচ্ছেন না। ৫ দিন থেকে ষষ্টিতলায় এসে ঘুরে যাচ্ছেন। ধার দেনা করে কোনমতে জ্বালাচ্ছেন সংসারের চুলা। আর কয়দিন এরকম আবহাওয়া চলবে-এমন শংকায় রয়েছেন তিনি।

একই রকম কথা জানান, ষষ্টিতলায় কাজের সন্ধ্যানে বসে থাকা বিরল উপজেলার দামাইল গ্রামের ৭৫ বছর বয়স্ক শ্রমিক সামসুল ইসলাম, বহলা গ্রামের ৬৫ বয়স্ক শ্রমিক মাহাবুব, ধামাহার গ্রামের ৬৯ বছর বয়স্ক শ্রমিক মজিবর, বিরলের মকলেশপুর গ্রামের ৬২ বছর বয়স্ক শ্রমিক আজিজুর। তীব্র শীতের কারনে চরম দুর্ভোগের কথা বর্ণনা করেন তারা।

দিনাজপুর জেলা প্রশাসনের হিসাব মতে জেলায় ৬ লাখ ৩৬ হাজার ১৯৪ জন কৃষি শ্রমিক, ৮২ হাজার ২১৭ জন শ্রমিক এবং ৫৫ হাজার ৩৬৪ জন পরিবহন শ্রমিক। প্রতিদিন আয় করে জীবিকা নির্বাহ করতে হয় এসব শ্রমিকের। অব্যাহত শৈত্য প্রবাহ আর তীব্র শীতের কারনে জীবন ও জীবিকা নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন নি¤œ আয়ের এসব শ্রমজীবি মানুষ। 

দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, দিনাজপুরে সোমবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস। দিনাজপুরে এটিই চলতি শীত মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। তিনি জানান, গত কয়েকদিন ধরে দিনাজপুরসহ উত্তর জনপদের কয়েকটি জেলায় অব্যাহত রয়েছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। আর এ কারনেই অনুভুত হচ্ছে তীব্র শীত।

এদিকে দেশের সর্বোত্তরের উপজেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় গতকাল সোমবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস। সোমবার এটিই ছিলো দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এছাড়াও সোমবার নীলফামারীর ডিমলায় ৮ দশমিক ১ ডিগ্রী সেলসিয়াস, সৈয়দপুরে ৮ দশমিক ২ডিগ্রী সেলসিয়াস, কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং রংপুরে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।