সীমান্তে হত্যাকান্ড থামছে না : নেপথ্যে মাদক ও গরু ব্যবসা

আমাদের প্রতিদিন
2024-04-26 05:45:53

 

আসাদুজ্জামান সাজু, লালমনিরহাট:

লালমনিরহাটে বিভিন্ন সীমান্তে দুই মাসে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ’র নির্যাতনে ৮ জন নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে ৭ জনেই বাংলাদেশী। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি’র শত বাঁধা উপেক্ষা করে চোরাচালানকারীরা সীমান্তে যাচ্ছে মাদকের সাথে ভারতীয় গরু আনতে। শীতের শুরুতে ভারতীয় গরু ও মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে সীমান্ত গুলোতে চোরাচালানকারীদের একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। ‘রাতের রাজা’ নামে পরিচিতি দইখাওয়ার ভুট্টু’র নেতৃতে বিজিবি, পুলিশ, জনপ্রতিনিধি ও সাংবাদিকদের নাম ভাঙ্গিয়ে তোলা হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা।

জানা গেছে, গত ৯ নভেম্বর জেলার আদিতমারী উপজেলার ভেলাবাড়ি সীমান্তে ভারতীয় গরু আনতে গিয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ’র গুলিতে নিহত হয় ওয়াসকুরুনী ও আয়নাল হক নামে দুই বাংলাদেশী। গত ২৭ নভেম্বর হাতীবান্ধার টংভাঙ্গা ইউনিয়নের গেন্দুকড়ি সীমান্তে বিএসএফ’র নিযার্তনে নিহত হয় সাদ্দাম হোসেন নামে এক গরু ব্যবসায়ী। গত ১৪ ডিসেম্বর জেলার পাটগ্রাম উপজেলার শ্রীরামপুর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ’র নির্যাতনে সীমান্তে নিহত হয় ভারতীয় এক গরু ব্যবসায়ী। তার এক দিন পর ১৫ ডিসেম্বর ওই উপজেলার ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ’র নির্যাতনে শাহাদাত হোসেন নামে এক গরু ব্যবসায়ী নিহত হয়। গত ২৯ ডিসেম্বর জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার দোলাপাড়া সীমান্তে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ’র গুলোতে সাদিকুল রহমান সাদিক ও নাজির হোসেন নামে দুই জন বাংলাদেশী নিহত হয়। একই দিনে জেলার আদিতমারী এলাকায় গরু চোরাচালনকারীদের হামলায় একজন গ্রাম পুলিশও আহত হয়। সর্বশেষ ৩১ ডিসেম্বর রাতে বুড়িমারী সীমান্তে বিএসএফ গুলিতে বিপুল মিয়া ২৩ নামে বাংলাদেশী এক রাখাল নিহত হয়। 

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি’র ব্যাপক কঠোরতার পরও সীমান্তে কি ভাবে যাচ্ছে চোরাচালানকারীরা ? এ নিয়ে খোজঁখবর নিয়ে জানা যায়, সীমান্তে এলাকা ভিত্তিক চোলাচালানকারীদের একজন করে লাইনম্যান রয়েছে। ওই লাইনম্যান এক একটি করে সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। সেই সিন্ডিকেটের কোনো সদস্য বিজিবি’র গতি বা অবস্থান লক্ষ্য করেন। বিজিবি এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় টহলে গেলেই তারা সীমান্তে গিয়ে মাদক ও ভারতীয় গরু নিয়ে আসে। সেই গরু আনতে গিয়ে প্রাণ হারাচ্ছে একের পর এক বাংলাদেশী। বিনিময় মাদক ও গরু ব্যবসায়ীদের ওই সিন্ডিকেটকে গরু প্রতি কমিশন দিতে হয়।  বিজিবি, পুলিশ, জনপ্রতিনিধি ও সাংবাদিকদের নাম ভাঙ্গিয়ে সেই টাকা তুলে থাকেন কথিত লাইনম্যানরা।

খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার ঠ্যাংঝাড়া, ফকিরপাড়া, দোলাপাড়া, সিঙ্গিমারী, গেন্দুকুড়ি, দইখাওয়া, আমঝোল ও ভেলাগুড়ি সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন মাদকের সাথে শত শত ভারতীয় গরু আসছে। এসবের এলাকা ভিত্তিক রয়েছে লাইনম্যান। যাদের মধ্যে সিঙ্গিমারীতে সেকেন্দার হোসেন, দইখাওয়ায় ভুট্টু, মোতালেব, আমঝোল এলাকায় আনিছুর, মতিয়ার, ভেলাগুড়িতে জাহিদ ও সুজন, ঠ্যাংঝাড়ায় নজরুল, ফকিরপাড়ায় লুৎফর ও দোলাপাড়ায় বেলাল হলো ওই লাইনম্যান সিন্ডিকেটের মুল হোত। তাদের মাধ্যমে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকা তোলা হয় গরু ও মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। সেই টাকা অংশভেদে চলে যায় সিন্ডিকেটের বাকি সদস্যদের কাছে।

কথিত রয়েছে, দইখাওয়ার এলাকার ভুট্টু’র সাথে প্রশাসনের দুই একজন কর্মকর্তা ও কতিপয় সাংবাদিককের সখ্যতা থাকায় তিনি হয়েছেন লাইনম্যানের সর্দার। তাকে অনেকেই ‘রাতের রাজা’ বলে চিনেন। ‘রাতের রাজা’ নামে পরিচিতি এই ভুট্টু’র নেতৃত্বে পুরো সীমান্ত জুড়ে চলছে মাদক ও ভারতীয় গরুর জমজমাট ব্যবসা। বেশ কিছুদিন আগে ওই ভুট্টু’র বাড়িতে তল্লাশি করে বিজিবি। এ সময় বিজিবি’র সদস্যের প্রচন্ড গালাগালি করে ভুট্টু ও তার ভাইরা।

সীমান্তবর্তী লোকজন জানান, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ তাদের সাধ্যমত চেষ্টা করে যাচ্ছে সীমান্তের নিরাপত্তায় । কিন্তু দুই একজন চোরাচালানকারীর কারণে সীমান্তে এমন হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি’র ১৫ ব্যাটালিয়ামের অধিনায়ক মোফাজ্জল হোসেন আকন্দ ও ৬১ ব্যাটালিয়ামের অধিনায়ক হাসান শাহরিয়া মাহমুদ বলেন, বিজিবি’র প্রতিটি সদস্য সীমান্তের নিরাপত্তায় কাজ করে যাচ্ছে। আমরা প্রায় প্রতিদিনে কোনো না কোনো এলাকায় সীমান্তবাসীকে সর্তক করছি। তারপরও দুই একজন সীমান্তে যাওয়ার চেষ্টা করছে ফলে এমন ঘটনা ঘটছে। আমরা আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা করছি এক্ষেত্রে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।