ঠাকুরগাঁওয়ে হা-ডু-ডু খেলা জনতার ভিড়

আমাদের প্রতিদিন
2024-03-28 08:18:55

 

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি:

ঠাকুরগাঁওয়ের প্রত্যন্ত অঞ্চল রাণীশংকৈল উপজেলার বাচোর ইউনিয়নের রাঘোবপুর মন্ডলপাড়ায় স্থানীয়দের আয়োজনে মাসব্যাপী বাংলাদেশের জাতীয় খেলা হা-ডু-ডু টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দীর্ঘদিন পর বিলুপ্ত প্রায় এ খেলার আয়োজন করায় খেলা দেখতে উৎসুক জনতা নারী পুরুষসহ ছোটবড় সকল বয়সের মানুষের উপচেপরা ভিড় লক্ষ করা গেছে। মঙ্গলবার বিকালে রাঘোবপুর মন্ডলপাড়া বাজার মাঠে এ টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হয়।

খেলায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, রাণীশংকৈল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহরিয়ার আজম মুন্না। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. সোহেল রানা, ৫ নং বাচোর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আজিজুল হক, নন্দুয়ার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহনেওয়াজ উপস্থিত ছিলেন।

খেলা শেষে সন্ধ্যায় চাম্পিয়ন কামার পুকুর দল ও রানার্সআপ ফুটানি টাউন দলের মাঝে পুরষ্কার তুলে দেন আমন্ত্রিত অতিথিরা। মাসব্যাপী এ টুনামেন্টের প্রথম ধাপের খেলা অনুষ্ঠিত হয় ২০২২ সালে ৫ নভেম্বর।

ঐতিহ্যবাহী হা-ডু-ডু খেলাটি এক সময় ব্যাপক হাড়ে খেলা হলেও বর্তমানে আর চোখেই পড়ে না। বাংলার ঐতিহ্য ও খেলাটিকে টিকে রাখার জন্য স্থানীয়রা হা-ডু-ডু খেলার আয়োজন করেন বলে জানান খেলার আয়োজকরা।

খেলা দেখতে আসা স্থানীয় ইকবাল মাহমুদ নামে এক যুবক আমাদের প্রতিদিনকে বলেন, ‘ফুটবল, ক্রিকেটসহ অন্যান্য যে খেলা গুলো আছে সেগুলোতে মানুষের বেশ আগ্রহ কিন্তু আমাদের জাতীয় খেলা হা-ডু-ডু হলেও এই খেলা তেমন খেলা হয় না। খেলা না হওয়ার কারণে নতুন প্রজন্ম এই খেলা সম্পর্কে জানতে পারছে না আর যারা জানেন তারা খেলায় আগ্রহ হাড়িয়ে ফেলছেন। আমাদের এই খানে হা-ডু-ডু খেলার আয়োজন করা হয়েছিল স্থানীয়ভাবে আজ তার ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হলো। আর খেলা দেখতে অনেক মানুষের সমাগম হয়েছে। কারণ অনেকে এই খেলা সম্পর্কে জানেই না। তাই বড়দের পাশাপাশি শিশু, কিশোর-কিশোরীরাও খেলা দেখতে এসেছে। আমি মনে করি আমাদের দেশের জাতীয় খেলা হা-ডু-ডু তাই অন্যান্য খেলার মতো এই খেলার প্রশিক্ষণ, বেশি বেশি করে প্র্যাকটিস ও খেলার আয়োজন করার জন্য স্থানীয়সহ সরকারকে অনুরোধ করছি।’

খেলা দেখতে আসা রোমাকান্ত পাল নামে এক যুবক বলেন, ‘শুনেছিলাম এই এলাকায় আগে বেশ হা-ডু-ডু খেলা হতো। কিন্তু কখনো চোখে দেখিনি; আজকে দেখলাম এ খেলা। দেখে অনেক ভালো লাগলো। আমি খেলাটিকে ধরে রাখার জোর দাবি জানাচ্ছি।

রেজিয়া খাতুন নামে এক গৃহবধূ খেলা দেখতে এসে বলেন, ‘এখানে প্রায় ১০-১১ বছর আগে এ খেলা হতো। কিন্তু হঠাৎ করে খেলাটি আবার বন্ধ হয়ে গেয়েছিল। আবার খেলাটি চালু হয়েছে ভালো লাগছে। তাই সপরিবারে খেলা দেখতে এসেছি।’

খেলা আয়োজক কমিটির সভাপতি মো. নিজাম উদ্দিন আমাদের প্রতিদিনকে বলেন, ‘খেলাটি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছিল, তাই আমার ও স্থানীয়দের ইচ্ছায় এবং সহযোগিতায় খেলাটিকে চালু ও ধরে রাখার জন্য এই আয়োজন করা। মাসব্যাপী এই টুর্নামেন্টের প্রতিটি খেলায় দর্শকের উপচেপড়া ভীর ছিল। এই যে মাঠে এতো দর্শক, তারা খেলা দেখে যে আনন্দ পাচ্ছে এটাই আমাদের স্বার্থকতা। স্থানীয় ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ খেলাটিকে ধরে রাখা সম্ভব হবে বলে মনে করেন তিনি।’ রাণীশংকৈল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহরিয়ার আজম মুন্না আমাদের প্রতিদিনকে বলেন, ‘হা-ডু-ডু খেলাটি আমাদের এলাকা থেকে হারিয়ে যেতে বসেছিল। এই খেলাকে দেশের প্রতিটি জেলায় ও উপজেলায় পুনরুজ্জীবিত করতে সরকারকে এই খেলার আয়োজন করার অনুরোধ করছি। খেলাটি যেহেতু আমাদের এই এলাকা থেকে পুনরুজ্জীবিত হওয়ার চেষ্টা করছে তাই উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে এটি চালু রাখার জন্য সহযোগিতা থাকবে।’