মিঠাপুকুরে মাদরাসার মূল ফটকে তালা, অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস বর্জন

আমাদের প্রতিদিন
2024-04-21 12:42:09

মিঠাপুকুর প্রতিনিধি:

মিঠাপুকুরে মাদরাসায় তালা ঝুলিয়ে প্রতিবাদ ও অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস বর্জন করেছে শিক্ষার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) হতে এই কর্মসূচী পালন করছে উপজেলার বালারহাট হামিদীয়া আলিম মাদরাসার শিক্ষার্থীরা। মাদরাসায় তালা ঝুলানোর ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। নিরুপায় হয়ে শিক্ষকেরা মাদরাসা হতে চলে গেছে।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, মাদরাসার ৩ জন দাখিল পরীক্ষার্থীর কাছ হতে সাড়ে ৩ হাজার টাকা নিয়েও অধ্যক্ষ ফরম পূরণ করেননি। একারণে ৩ পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা দেওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। একাধিকবার অধ্যক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেননি। উল্টো দির্ঘদিন ধরে তিনি মাদরাসায় আসছেন না। এরফলে শিক্ষার্থীরা মাদরাসার মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে প্রতিবাদ ও ক্লাস বর্জন করেছেন। বিষয়টি সমাধান না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের কর্মসূচী অব্যাহত থাকবে বলে জানান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছর ওই মাদরাসা হতে ১৭ জন শিক্ষার্থী দাখিল পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করবেন। ইতোমধ্যে সকলের কাছ হতে ফরম পূরণের জন্য সাড়ে ৩ হাজার টাকা নিয়েছেন অধ্যক্ষ। এরমধ্যে ৩জন শিক্ষার্থীর ফরম পূরণ হয়নি। তারা একাধিকবার অধ্যক্ষের সাথে যোগাযোগ করেও কোন সুফল পাননি। এরফলে সহপাঠিরা মিলে বৃহস্পতিবার সকালে মাদরাসার মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস বর্জন করে।

সরেজমিনে ওই মাদরাসায় গিয়ে দেখা গেছে, মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। সেখানেই বসে অধ্যক্ষের শাস্তির দাবিতে  স্লোগান দিচ্ছে। সকাল হতে তালা ঝুলানোর কারণে শিক্ষকেরা মাদরাসায় ঠুকতে না পেরে চলে গেছে। দাখিল পরীক্ষার্থী শিমুল বাবু বলেন, ‘আমি এ বছর পরীক্ষা দেওয়ার জন্য অধ্যক্ষকে ফরম পূরণের জন্য সাড়ে ৩ হাজার টাকা দিয়েছি। সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। কয়েকদিন আগে অধ্যক্ষ আমাকে জানায় আমার ফরম পূরণ হয়নি, আমি পরীক্ষা দিতে পারব না। শুধু আমি নই, আমাদের ৩ বন্ধুর ফরম পূরণ করেনি অধ্যক্ষ।’ আরেক পরীক্ষার্থী শাকিল মিয়া বলেন, ‘আমরা ফরম পূরণের টাকা দিয়েছি। এখন শুনছি পরীক্ষা দিতে পারবনা। আমার এক বছর নষ্ট হওয়ার পথে। আমি পরীক্ষা দিতে চাই।’ সাফিউল ইসলাম বলেন, ‘অধ্যক্ষ আমার কাছে টাকা নিয়ে ফরম পূরণ করেনি। আমিও নাকি পরীক্ষা দিতে পারব না। আমি পরীক্ষা দিতে চাই।’

ওই মাদরাসার শিক্ষক সুজন মিয়া বলেন, ‘অধ্যক্ষের নানা অনিয়ম-দূর্নীতির কারণে এরকম হয়েছে। তিনি নিজেই শিক্ষার্থীদের কাছ হতে টাকা নিয়ে ফরম পূরণ করেন। ওই ৩জন শিক্ষার্থীর ফরম পূরণ না হওয়ার জন্য পুরো দায়ভার অধ্যক্ষের। মাদরাসার অভিভাবক শিউলী বেগম বলেন, ‘আমার ছেলের কাছ হতে টাকা নিলো, কিন্তু ফরমপূরণ হলোনা। আমি একাধীকবার অধ্যক্ষের পিছুপিছু ঘুরেছি। তিনি কোন সমাধান করেননি। আমার ছেলের একটি বছর শেষ করে দিলো। আমি বিচার চাই।’ একই কথা বলেন আরেক অভিভাবক শাহেদা বেগম।

মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মাহবুবার রহমান লুলু বলেন, ‘অধ্যক্ষ একনায়কতন্ত্র কায়েম করেছেন মাদরাসায়। তিনি ঠিকতম মাদরাসায় আসেননা। এই ৩ শিক্ষার্থীর বিষয়েও কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেনি অধ্যক্ষ।’ মাদরাসার অধ্যক্ষ আবু তাহের মিয়া বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের জন্যই তাদের ফরম পূরন হয়নি। তারা সঠিক সময়ে কাগজপত্রও দেয়নি। একারণে এমনটি হয়েছে।’ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি আমি অবগত নই। খোঁজ-খবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।’