এবার টিউলিপ ছড়াবে ১০ রঙের সৌন্দর্য

আমাদের প্রতিদিন
2024-03-28 06:33:54

পঞ্চগড় প্রতিনিধি:

দেশের উত্তরের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় টিউলিপের বীজ রোপণ শুরু করেছেন দর্জিপাড়া গ্রামের ২০ জন ক্ষুদ্র চাষি। গত বছর শীত প্রধান অঞ্চলে এই ফুল তেঁতুলিয়ায় সৌন্দর্য ছড়িয়েছিল গাছে গাছে। সফল হওয়ার দাবি করেন চাষিরা। টিউলিপ দেখতে হাজার হাজার পর্যটক ছুটে আসেন তেঁতুলিয়ায়। ফুলের বিক্রিও নাকি ভালো হয়েছিল।

গত বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে এবার আরও বড় পরিসরে টিউলিপ চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছে, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আগামী ১৫-২০ দিনের ভেতর ফুল ফোটার সম্ভাবনা রয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলা সদর ইউনিয়নের দর্জিপাড়া এলাকার ক্ষুদ্র ২০ জন চাষি বীজ বপন শুরু করেছেন। তবে এবার ২০ জন নারী উদ্যেক্তা দুই একর জমিতে টিউলিপ চাষ করছেন। এতে দশ রংয়ের টিউলিপ ফুটবে তেঁতুলিয়ায়।

নতুন করে এবছরও তেঁতুলিয়া উপজেলার দর্জিপাড়া এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে এ্যগ্রো ট্যুরিজম। পর্যটকরা টিউলিপের সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি তারা যাতে অর্গানিক খাবার খেয়ে গ্রামীণ পরিবেশ উৎযাপন করতে পারে এ জন্য কয়েকটি বাড়ি প্রস্তুত করা হয়েছে।

টিউলিপের চাষের জন্য বাসের টব তৈরি করা হয়েছে। টিউলিপ বিক্রির জন্যও নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দুই একর জমিতে এক লাখ চারা বা বাল্ব রোপণ করা হচ্ছে।

টিউলিপের প্রজাতি ও রংগুলো হচ্ছে- এন্টার্কটিকা (সাদা), ডেনমার্ক (কমলা ছায়া), লালিবেলা (লাল), ডাচ সূর্যোদয় (হলুদ), স্ট্রং গোল্ড (হলুদ), জান্টুপিঙ্ক (গোলাপী), হোয়াইট মার্ভেল (সাদা), মিস্টিক ভ্যান ইজক (গোলাপী), হ্যাপি জেনারেশন (সাদা লাল শেড) ও গোল্ডেন টিকিট (হলুদ)।

উদ্যোক্তা আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, প্রথমবারের মতো গত বছর আমরা প্রান্তিক ৮ জন নারী মিলে এ অঞ্চলে নেদারল্যান্ডের রাজকীয় টিউলিপ ফুটিয়েছিলাম।

এ অঞ্চলে টিউলিপ চাষ করে আমরা যেমন সফল হয়েছিলাম তেমনি আর্থিকভাবেও লাভবান হয়েছিলাম। এছাড়া টিউলিপ ফুল দেখতে এ অঞ্চলে প্রচুর পর্যটকের সমাগম ঘটেছিল। আশা করছি এবারও টিউলিপের দৃষ্টি নন্দন সৌন্দর্য ও হাসিতে মুগ্ধ করবে।

ইএসডিও সংস্থার ডিপিসি মো. আইনুল হক বলেন, পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) আর্থিক সহযোগিতায় পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার দর্জিপাড়া গ্রামে ২(একর) জমিতে টিউলিপ ফুলের চারা রোপণ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এবছর বাংলাদেশে সর্ববৃহৎ আকারে নেদারল্যান্ড এবং কাশ্মিরের আঙ্গিকে তৈরি করা হচ্ছে বড় বাগান যা পর্যটকদের আকৃষ্ট করবে। আগামী ১২ হতে ১৫ দিনের মধ্যেই কলি আসবে। ৩০ জানুয়ারির মধ্যেই ফুলে ফুলে সৌরভ ছড়াবে ভিনদেশি টিউলিপ।

পর্যটকদের জন্য আবাসন ব্যবস্থা, স্যানিটেশন ব্যবস্থা, দেশীয় লাফারশাকের ঝোল আর শিতলের ভর্তা, হাঁসের মাংশ, ভাত, দেশি মুরগি, নিরাপদ সবজিসহ থাকবে গাভির খাঁটি দুধ ও দইসহ সব সুস্বাদু খাবারের ব্যবস্থা।

টিউলিপ দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। দর্জিপাড়া গ্রামের ২০ জন নারী উদ্যেক্তা তাদের কোমল হাতের পরশে রোপণ করছেন ১০ রঙের টিউলিপ যা কৃষি ক্ষেত্রে বয়ে আনবে ব্যাপক সফলতা। এগ্রো-টুরিজোমের ক্ষেত্রেও বড় ভূমিকা রাখবে।

উল্লেখ্য, টিউলিপ চাষ করতে সর্বোচ্চ ১৯ এবং সর্ব নিম্ন ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা প্রয়োজন। তেঁতুলিয়া শীত প্রবণ অঞ্চল। বেশির ভাগ সময় এই অঞ্চলে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করে। তাই এ অঞ্চল টিউলিপ চাষের জন্য উপযোগী। শীত প্রধান অঞ্চলের টিউলিপ ফুল। যার বৈজ্ঞানিক নাম ‘টিউলিপাথ। এটি নেদারল্যান্ডসের ফুল। যা অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফুল উৎপাদনকারী উদ্ভিদ। এটি বাগানে কিংবা কাট ফ্লাওয়ার হিসেবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করা হয়। ফুলদানিতে সাজিয়ে রাখার জন্য এর আবেদন অনন্য। বর্ষজীবী ও কন্দযুক্ত প্রজাতির এ গাছটি লিলিয়াসিয়ে পরিবারভুক্ত উদ্ভিদ। টিউলিপের প্রায় ১৫০ প্রজাতি এবং এদের অসংখ্য সংকর রয়েছে। বিভিন্ন ধরণের হাইব্রিডসহ টিউলিপের সকল প্রজাতিকেই সাধারণভাবে টিউলিপ নামে ডাকা হয়।