নতুন আলুর দাম নেই পুরোনোটা খায় না কেউ

আমাদের প্রতিদিন
2024-04-10 10:52:17

দিনাজপুর প্রতিনিধি:

দিনাজপুরের বাজারে উঠছে আগাম জাতের আলু। এ আলু তুলে একই জমিতে দ্বিতীয় পর্যায়ের আলু আবাদে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। কিন্তু আলুর দাম না থাকায় কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে তাঁদের। বর্তমানে ক্ষেতপর্যায়ে আগাম জাতের আলুর কেজি ১২ থেকে ১৩ টাকা, যা বাজারে সর্বোচ্চ ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পুরোনো আলু কেনাবেচা একেবারেই বন্ধ। দাম না থাকায় হিমাগার থেকে অনেকে আলু বের করেননি। দিতে হচ্ছে বাড়তি খরচ। এতে বড় ধরনের লোকসানের মুখে চাষিরা। এ অবস্থায় আলুর রপ্তানি বৃদ্ধির পাশাপাশি বহুমাত্রিক ব্যবহার বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্নিষ্টরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর দিনাজপুর অঞ্চল কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দিনাজপুর অঞ্চলের তিন জেলায় ৭৯ হাজার ৭৭৫ হেক্টর জমিতে আলুর চাষাবাদ হয়েছে। এর মধ্যে দিনাজপুরে চাষ হয়েছে ৪৩ হাজার ৮৮৫ হেক্টর জমিতে। এ বছর আলুর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা হেক্টরপ্রতি ২৩ টন। গত বছরের মতো এবারও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। অন্যদিকে দিনাজপুরের কৃষি বিপণন সূত্র জানায়, জেলায় মোট হিমাগার ১৩টি, ধারণক্ষমতা ১ লাখ ১৬ হাজার ১০ টন। এর মধ্যে মাত্র ৬৫ শতাংশ আলুবীজের জন্য; বাকিটা খাদ্য হিসেবে ব্যবহূত হয়।

আলুচাষি ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রায় আড়াই বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি। খাজনাসহ প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে প্রায় ৫৫ হাজার টাকা। বর্তমান দরে বিক্রি করলে বিঘায় গড়ে ১৫ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে। মাঠপর্যায়ে ২০ টাকা কেজি দাম পেলে লাভের মুখ দেখতাম। প্রতি বছরই এমন হচ্ছে। সামনের বছর অন্য ফসল চাষ করব ভাবছি।'

ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম জানান, কেনা থেকে হিমাগারে রাখা পর্যন্ত কেজিতে তাঁর প্রায় ১৯ টাকা খরচ হয়। কিন্তু ১৩ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি করে লোকসান গুনেছেন। আরেক ব্যবসায়ী বিধান চন্দ্র রায় জানান, বাজারে নতুন আলুর দাম নেই। পুরোনো আলু কেউ খায় না। দাম আরও কমে যাবে এমন আশঙ্কায় আগেভাগে হিমাগার থেকে বের করে লোকসানে বিক্রি করেছেন বলে জানান তিনি।

পূনর্ভবা কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থাপক রেজাউল করিম জানান, আলু সংরক্ষণে তাঁদের হিমাগারের নির্ধারিত সময় মার্চ থেকে অক্টোবর। এর মধ্যে বীজ আলু ৩০ অক্টোবর এবং খাবার আলু নভেম্বর পর্যন্ত রাখা হয়। কিন্তু দাম কমে যাওয়ায় নির্ধারিত সময়ের বাইরেও অনেকে রাখছেন। জানুয়ারিতেও ডেলিভারি দিতে হচ্ছে। হিমাগারে এক মাসের বিদ্যুৎ বিল প্রায় ১২ লাখ টাকা।

এই টাকা ব্যবসায়ীদের জন্য লোকসান ছাড়া কিছুই না।

দিনাজপুর সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা হুমায়ন কবির বলেন, ‘চাহিদার তুলনায় বাজারে আলুর সরবরাহ বেশি। এ জন্য দাম কম। আলুর রপ্তানি বৃদ্ধি এবং বহুমুখী ব্যবহার ছাড়া ভালো দাম পাওয়া সম্ভব নয়।'