কুড়িগ্রামে জলমহালে বালু ভরাট, ইজারা নিয়ে বিপাকে মৎস্যজীবিরা

আমাদের প্রতিদিন
2024-03-28 01:36:33

আহসান হাবীব নীলু, কুড়িগ্রামঃ  

কুড়িগ্রামে বন্যার পানিতে বালু পড়ে জলমহাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় ইজারা নিয়ে বিপাকে পড়েছে মৎস্যজীবি সমিতির সদস্যরা। ইজারাকৃত জলমহালে মাছ চাষ করতে না পেরে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন প্রায় ২৩জন মৎস্যজীবি। এই বিষয়ে একাধিকবার স্থানীয় উপজেলা ও জেলা প্রশাসনকে লিখিত ভাবে জানিয়েও কোন প্রতিকার পাননি তারা।

অভিযোগ সূত্রে জানাযায়,জেলার ভূরুঙ্গামারী উপজেলার তিলাই ইউনিয়নের প্রায় ১২একর আয়তনের দক্ষিণ তিলাই জলমহাল ইজারা নেয় চর ভূরুঙ্গামারী ইউনিয়নের মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি লিমিটেড। উপজেলা প্রশাসনের নিকট হতে গত বছর এপ্রিল মাসে ১০লাখ আশি হাজার টাকায় তিন বছরের জন্য ইজারার নেয়। যার প্রথম কিস্তি হিসেবে তিন লাখ ষাট হাজার টাকা সরকারি দপ্তরে জমা করেছেন। কিন্তু ইজারা নেবার পর গত বছরের দফায় দফায় বন্যায় ভারত থেকে আসা দুধকুমার নদের ভাঙ্গনে মুখে পড়ে জলমহাল ছড়াটি বালু ভরাট হয়ে যায়। এতে করে জলমহালটি মাছ চাষের জন্য অনুপযোগি হয়ে পড়ে। মাছ চাষ করতে না পেরে অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়েন সমিতির সদস্যরা। ফলে আর্থিক ক্ষতি সামলিয়ে উঠার জন্য প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেবার জন্য  মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির সভাপতি উপজেলা এবং জেলা প্রশাসনকে গত বছরের ১১অক্টাবর লিখিত ভাবে জানায়। কিন্তু দীর্ঘদিনেও কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় হতাশ মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি সদস্যরা।

ছড়ার পাশের বাসিন্দা আলা বকস(৬৫) বলেন,আমরা ছোট বেলা থেকে এই ছড়ার পানি দিয়ে গোসল,মাছ ধরা এবং সেচ কাজের জন্য ব্যবহার করেছি। গতবছর বন্যায় ছড়ার উত্তর পাশ বালু পড়ে একদম ভরাট হয়ে গেছে। আর দক্ষিণ পাশের একাংশে ২/৩ফিট পানি আছে। কিছু দিনের মধ্যে তাও শুকিয়ে যাবে। এই ছড়া মরে গেলে এই এলাকার কৃষক,মাছ চাষীসহ বহু মানুষের ক্ষতি হবে।

অপর এক বাসিন্দা রহিমা বেগম বলেন,এই ছড়ার পানিতে হাঁস পালন করেছি। পাট জাগ দেয়া হতো। গরু-ছাগল, কাপড় চোপড় ধোয়া যেত। কিন্তু বালু পড়ে ছড়া বন্ধ হওয়ায় সব কিছু এখন বন্ধ। গরিব সংসারে হাঁস-মুরগি পালন করে সংসারের বাড়তি আয়ের সুযোগও শেষ।

সদস্য নছর আলী বলেন,এই ছড়ায় ১০/১৫ফুট করে পানি আছিল। এই পানি দিয়া গাও গোসল কচ্ছি,গরু সাঁতরাইছি, জমিতে পানি দিছি। এহন বালু পড়ে একবারে বন্ধ হয়া গেছে।

সদস্য মাহামুদুল আলম বলেন,প্রায় ১২একর আয়তনের জলমহালটি ইজারা নেবার পর মাছ চাষ করতে পারিনি। এরমধ্যে বন্যা এসে ছড়াটি বালুতে ভরাট হয়ে গেছে। এখন ছড়ার কোন অস্তিত নেই বললেই চলে। ধারদেনা করে  ইজারা নেয়া হয়েছে। এই বিষয়ে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়েও কোন লাভ হয়নি। ইউএনও স্যারের সাথে দেখা করে কথা বলেছি। সে একজনকে ফোন দিয়ে তদন্ত করতে বললো। কিন্তু আজ পর্যন্ত কেউ ছড়াটি দেখার জন্য আসেনি। হামরা তো গরিব মানুষ দেনা শোধ করি নাকি ইজারার বাকি টাকা শোধ করি। আজ পর্যন্ত তো একটা মাছ চাষও করবার পাই নাই। 

সমিতির সভাপতি সহিদ আলী বলেন, গতবছর এপ্রিল মাসে ১লা বৈশাখ থেকে তিন বছরের জন্য ছড়াটি ইজারা নেয়া হয়েছে। কিন্তু বন্যা এসে বালুতে ছড়াটি ভরাট হয়ে যায়। এতে করে আমরা আর মাছ চাষ করতে পারছি না। সমিতির ২৩জন সদস্য ধার দেনা করে ইজারা নিলেও কোন লাভ হয়নি। উল্টো এখন ধারদেনা পরিশোধ করা এবং সরকারকে বাকি টাকা দেয়া নিয়ে চিন্তায় আছি। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবার জন্য লিখিতভাবে জানিয়েও কোন লাভ হয়নি। আমরা গরিব মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির সদস্যরা খুব অসহায় হয়ে পড়েছি।

এই বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, আমি সদ্য যোগদান করেছে। আগের বিষয়গুলো জানা নাই। দক্ষিণ তিলাই জলমহালটি যে মৎস্যজীবি সমিতি ইজারা নিয়েছে তাদের সমস্যার কথা জানলাম। আরো খোজ খবর নিয়ে এই বিষয়ে প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেয়া হবে যাতে করে ইজারা নেয়া মৎস্যজীবি সমিতি এর সুফল পেতে পারেন।