কুড়িগ্রামে শিক্ষক পেটানোর ঘটনায় আ.লীগ নেতাসহ ১২জনের বিরুদ্ধে মামলা

আমাদের প্রতিদিন
2024-04-24 07:45:36

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:

কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় প্রধান শিক্ষক  নুরুন্নবীকে তুলে নিয়ে গিয়ে পেটানার ঘটনায় উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতা রোকনুজ্জামান রোকনসহ সহকারি শিক্ষক আসাদুল ইসলাম এবং আরও অজ্ঞাত ১২জনকে আসামি করে রৌমারী থানায় একটি মামলা হয়েছে। ভুক্তভোগী শিক্ষক নিজে বাদি হয়ে এই মামলা করেন। শনিবার বিকেলে মামলাটি রুজু হয়। মামলা নং-১৪। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে ভুক্তভাগি ওই শিক্ষক বাদি হয় একটি লিখিত অভিযোগে দেন রৌমারী থানায়।

আসামীরা হলেন, উপজেলার চরশৌলমারী ইউনিয়নের পাখিউড়া গ্রামের আজমত আলীর ছেলে রোকনুজ্জামান রোকন। তিনি সদ্য ঘোষিত আংশিক কমিটির রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক। এছাড়াও এই মামলায় একই ইউনিয়নর ফুলকারচর গ্রামের মৃত আকায়েত উল্লাহ’র ছেলে আসাদুল ইসলাম (৪৭)কে আসামী করা হয়েছে।

নির্যাতনের শিকার নুরুন্নবী উপজেলার ফুলকারচর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি চরশৌলমারী ইউনিয়নের চরশৌলমারী গ্রামের মোংলা মিয়ার ছেলে।

জানাযায়,গত ১৯ জানুয়ারি দুপুরে অফিসিয়াল কাজে উপজেলা শিক্ষা অফিস যান প্রধান শিক্ষক নুরুন্নবী ও বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী আব্দুর রশিদ। কাজ শেষে উপজলা চত্বর থেকে উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতা রোকনুজ্জামান রােকনের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন ওই প্রধান শিক্ষককে তুলে নিয়ে যায়। প্রথম তাঁক উপজেলা চত্বরের পাশেই পলি পরিবহনের বাস কাউটার নিয়ে আটক রাখা হয় এবং প্রাণ নাশর হুমকি দেওয়া হয়। কিছুক্ষণ পর সখান থক মােটরসাইকেলে করে ওই প্রধান শিক্ষককে নিয়ে যাওয়া হয় রৌমারী সিজি জামান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হােরায়রার বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে। সেখান ঘটনার বর্ণনা দিতে থাকেন ভুক্তভোগি শিক্ষক নুরুন্নবী। এসময় আওয়ামীলীগ নেতা রোকনুজ্জামান হঠাৎ ক্ষিপ্ত হয়ে ওই শিক্ষকের উপর চড়াও হয়ে মুখমন্ডলে এলোপাথারী চড় থাপ্পর ও কিল ঘুষি মারতে থাকেন। তা দেখে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক দ্রুত চেয়ার থেকে উঠে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন। এসময় তিনি রোকেন তার কক্ষ থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন। পরে আহত ওই প্রধান শিক্ষককে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনার দিন রাতেই ভুক্তভোগি শিক্ষক বাদি হয়ে আওয়ামীলীগ নেতা রোকনুজ্জামান রোকন,আসাদুল ইসলামের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি লিখিত অভিযোগে দেন। প্রধান শিক্ষককে মারধরের সিসি টিভির ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এনিয়ে শিক্ষক সমাজের ক্ষোভসহ উপজলায় সমালোচনার ঝড় বইছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া দু' মিনিট ৩২সেকেন্ডের ওই ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ১৯ জানুয়ারি দুপুর ১টা ৫৩ মিনিট। উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও রৌমারী সিজি জামান সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু হোরায়রা অফিস কক্ষে বসে কাজ করছেন। পাশে বসে আছেন ফুলকারচর মাধ্যমিক বিদ্যালয়র প্রধান শিক্ষক নুরুন্নবী ও আওয়ামীলীগ নেতা রোকনুজ্জামান রোকনসহ কয়েকজন ব্যক্তি। ঠিক ১টা ৫৫ মিনিট ২৬ সেকেন্ড ওই আওয়ামীলীগ নেতা রোকনুজ্জামান হঠাৎ চেয়ার থেকে উঠে ওই প্রধান শিক্ষকের সামনে গিয়ে দাঁড়ান। ঠিক ১টা ৫৫মিনিট ৪৯ সেকেন্ড থেকে ১টা ৫৫মিনিট ৫৬ সেকেন্ড পর্যন্ত ওই ভুক্তভোগী প্রধান শিক্ষককে এলোপাথারী চড়থাপ্পর মারতে দেখা যায়। এসময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হোরায়রা চেয়ার থেকে উঠে এসে আওয়ামীলীগের ওই নেতাকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন।  

ভুক্তভাগি ওই প্রধান শিক্ষক নুরুন্নবী বলেন, প্রধান শিক্ষক পদ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। প্রধান শিক্ষকের পদ নিয়ে তদন্ত হয়েছে এবং আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।কিন্তু রোকন আমার সহকর্মী আসাদুল ইসলামের নিকট ২০-২৫লাখ টাকা উৎকোচ নিয়ে আমার উপর অন্যায়ভাবে অত্যাচার করে আসছে। আমি এই ঘটনায় থানায় মামলা করেছি। এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।

ফুলকারচর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়র পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি শুক্কুর মাহমুদ বলেন,বিদ্যালয়ের কমিটি গঠনের কাজ শিক্ষা অফিস গিয়ে ছিলেন প্রধান শিক্ষক নুরুন্নবী। তাঁকে অন্যায়ভাবে তুলে নিয়ে মারপিট করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি। 

রৌমারী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হোরায়রা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এটা ন্যাক্কারজনক ঘটনা। দলীয় শৃংখলা ভঙ্গের অভিযোগ আওয়ামী লীগ নেতা রোকনুজ্জামান রোকনের বিরুদ্ধে অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রৌমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রুপ কুমার সরকার বলেন, প্রধান শিক্ষককে পেটানাের ঘটনায় রোকনুজ্জামান রোকনসহ দু’জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ১০ থেকে ১২জনকে আসামী করে একটি মামলা হয়েছে। মামলার বাদি ভুক্তভোগী প্রধান শিক্ষক নুরুন্নবী। আসামীদের গ্রেপ্তার চেষ্টা চলছে।