স্কাউটদের মধ্যে থেকেই গড়ে উঠবে আগামীর নেতৃত্ব : প্রধানমন্ত্রী

আমাদের প্রতিদিন
2024-04-15 20:00:14

ঢাকা অফিস:

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্কাউট সদস্যদের উদ্দেশে বলেছেন, স্কাউটদের মধ্যেই সুপ্ত আছে আমাদের দেশের ভবিষ্যত, রাজনৈতিক নেতা, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, বিজ্ঞানী, চিকিৎসক, অর্থনীতিবিদ, প্রকৌশলী, কবি-সাহিত্যিক, প্রশাসক শিক্ষক, প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্য, যারা দেশের সেবা করছে। তোমাদের মাঝ থেকেই সকলে উঠে আসবে।

শেখ হাসিনা বলেন, তোমরাই পারবে আগামীতে দেশকে এগিয়ে নিতে। তোমাদের মাঝ থেকেই তো সেই নেতৃত্ব গড়ে উঠবে। সেই ভরসা আমার আছে। তোমরা সেটা পারবে। গাজীপুরের মৌচাকে ৩২তম এশিয়া প্যাসিফিক ও একাদশ জাতীয় স্কাউট জাম্বুরির সমাপনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বুধবার বেলা ১১টার দিকে মৌচাকের জাতীয় স্কাউট মাঠে অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রামের রোভার স্কাউটদের জন্য অ্যাডভেঞ্চার ট্রেনিং সেন্টার নির্মাণের লক্ষ্যে ১৮৮ একর জমি বরাদ্দ দিয়েছি। বিভিন্ন জেলা ও অঞ্চলে স্কাউট ভবন ও প্রশিক্ষণ নির্মাণের লক্ষ্যে জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ২১৭ জেলা ও উপজেলায় স্কাউট ভবন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আমরা নির্মাণ করে দেবো। আমাদের লক্ষ্য দেশে স্কাউটিং সম্প্রসারণের মাধ্যমে শিশু-কিশোর যুবদের আত্মনির্ভরশীল ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা।

দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুটি করে কাপ স্কাউট, রোভার স্কাউট ও স্কাউট দল খোলার নির্দেশনা দিয়েছি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, পাশাপাশি মাদ্রাসাগুলোতে যেন রোভার স্কাউট দল গঠন করা হয় সে বিষয়েও আমাদের কাজ করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের লক্ষ্যই হচ্ছে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো। আর সে লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ লাখ স্কাউট গড়ে তোলা হবে। আমার লক্ষ্যটা থাকবে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেন প্রতিটা শিক্ষার্থী এই স্কাউট প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়। সেই ব্যবস্থাটা নিতে হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও স্কাউটের সঙ্গে জড়িতদের।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি জানি যে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশ স্কাউট দেশের সুনাম বৃদ্ধি করেছে। আমাদের স্কাউট সদস্যরা ব্যতিক্রমধর্মী কার্যক্রম পরিচালনা গ্রহণ করে থাকে। যেকোনো দুর্যোগ-দুর্বিপাকে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ায়। ২৪তম এশিয়া প্যাসিফিক রেজিওনাল স্কাউট কনফারেন্সসহ স্কাউট ফ্রেন্ডশিপ ক্যাম্প সফলভাবে সম্পন্ন করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আশা করি ভব্যিষতে বিশ্ব স্কাউট জাম্বুরি আমাদের বাংলাদেশেই একদিন আমরা অনুষ্ঠিত করতে পারবো। সেইভাবে আমাদের উদ্যোগ এখন থেকে নিতে হবে। যেখানে সারা বিশ্বের লোকেরা আসবে, কাজ করবে।

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা দিয়েছিলেন, সাড়ে সাত কোটি মানুষকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না। বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। আমরা এগিয়ে যাব, উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তুলব। আমাদের প্রচেষ্টা হচ্ছে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা। আজকে বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত আমরা ব্রডব্যান্ড ছড়িয়ে দিয়েছি। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট আমরা উৎক্ষেপন করেছি। আমরা প্রত্যেকটি স্কুলে কম্পিউটার ল্যাব করে দিচ্ছি। ইকোপার্ক, হাইটেক পার্ক করছি জেলা-উপজেলায়। 

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত সমৃদ্ধ তথ্যজ্ঞানসম্পন্ন একটি জাতি, যে জাতি হবে স্মার্ট জাতি। অর্থনীতিসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা আমাদের জনগোষ্ঠীকে স্মার্ট জনগোষ্ঠী হিসেবে গড়ে তুলব, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। 

সবার মন উদার রাখতে হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতি, কুসংস্কার, ধর্মান্ধতা, সন্ত্রাসমুক্ত থাকতে হবে। বাংলাদেশকে সেভাবেই আমরা গড়ে তুলতে চাই। আমাদের ছেলে-মেয়েরা সেভাবেই গড়ে উঠুক। বাংলাদেশ আজকে যতদূর এগিয়েছে, আজকের তরুণ শিশু-কিশোররাই তো ভবিষ্যতে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে। আমার সে ভরসা আছে। তোমরা তা পারবো। মানবতার সেবাই তো বড় সেবা। মানুষের জন্য কাজ করতে পারলেই তো সব থেকে আত্মতুষ্টি পাওয়া যায়। কাজেই আমি সেটাই চাই, সেরকমই দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হও। মনে রাখবে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। আমাদের লাল সবুজ পতাকা দীর্ঘ সংগ্রামের পর এসেছে। এই স্বাধীনতা যেন ব্যর্থ না হয় সেজন্য স্বাধীনতার সুফল ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে।

গত বৃহস্পতিবার মৌচাকের জাতীয় স্কাউট মাঠে শুরু হয় জাম্বুরি। এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চল ছাড়াও ইউরোপ, আমেরিকাসহ দেশ-বিদেশের প্রায় ১১ হাজার স্কাউট, স্কাউট কর্মকর্তা, স্বেচ্ছাসেবক ও রোভার স্কাউট ৯ দিনের এই সমাবেশে অংশ নেন।