দিনাজপুরে মহাধুমধামে বট-পাকুড়ের বিয়ে

আমাদের প্রতিদিন
2024-03-28 18:33:04

বিরল (দিনাজপুর) প্রতিনিধি:

ঢাকঢোল আর সানাইয়ের সুর, পাশাপাশি নাচগান ও উৎসবের কোনো কমতি ছিল না এই বিয়েতে। শুধু তাই নয় প্রায় ৫০০ পরিবারের দুই হাজারের বেশি মানুষের উপস্থিতিতে এ যেন জমকালো আয়োজন। মানুষের নয়, ছিল বট-পাকুড়ের বিয়ে।

মঙ্গলপুর দিনাজপুর বিরল উপজেলার রুদ্রপুর গ্রামে আয়োজন করা হয় ব্যতিক্রমী এই বিয়ের।

ধর্মীয় অনুশাসন মেনে যুগ যুগ ধরে জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে হিন্দু সম্প্রদায়ের ভক্তরা আচার অনুষ্ঠানাদির মধ্যে দিয়ে বট-পাকুড়ের বিয়ে দিয়ে আসছে। সনাতন ধর্মের সকল রীতি রেওয়াজ মেনেই বট-পাকুড়ের বিয়ে দিয়েছেন পুরোহিত-অভিভাবকরা। ভক্তদের মনোবাসনা পূরণেই বট পাকুড়ের এই বিয়ে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ওইদিন সকাল থেকেই বাজে সানাইয়ের সুর। অনুষ্ঠানস্থলে আসতে থাকে সনাতন ধর্মের নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণী ও শিশুরা। গ্রামের মানুষের আগমনে চলছে বাদ্য-বাজনা, নাচ-গান, খাওয়া-দাওয়া ও উৎসব-আনন্দ।

উপজেলার মঙ্গলপুর ইউনিয়নের রুদ্রপুর গ্রামে আয়োজন করা হয় এই বিয়ের। সাজানো হয় বিয়ের মণ্ডপ। হিন্দু ধর্মের বিয়ের সব আনুষ্ঠানিকতাই ছিল এখানে। ছিল বট ও পাকুড়ের অভিভাবকও। পূর্বকাল থেকেই এই জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে মহা ধুমধামে বিয়ের আয়োজন হয়ে থাকে। হিন্দুশাস্ত্র অনুযায়ী বিয়ে অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেন এক পুরোহিত। দিনব্যাপী আয়োজন করা হয় এই বিয়ে অনুষ্ঠানের। সনাতন ধর্মের মনোবাসনা পূরণে এই বিয়ে দিয়ে থাকেন। অনেকেই আবার দেখতে আসেন উৎসাহে। নতুন প্রজন্ম বট-পাকুড়ের বিয়ে দেখেও বেশ আনন্দিত।

এলাকাবাসী জানান, কয়েক বছর আগে রাস্তার পাশাপাশি গাছ দুটি লাগানো হয়েছিল। হিন্দুশাস্ত্র মতে, পাশাপাশি বট-পাকুড় গাছ থাকলে তাদের বিয়ে দিতে হয়। এই রীতি মেনেই ধুমধাম করে বিয়ে দেয়া হলো গাছ দুটির। এই বিয়েতে বটের বাবা হয়েছিলেন অনিল চন্দ্র রায়। সুব্রত চন্দ্র রায় হয়েছিলেন মেয়ের বাবা। বিয়ে অনুষ্ঠানে তারা বর-কনের বাবা হয়েও খুশি। বট-পাকুড় এখন আজীবন এভাবে পাশাপাশি থাকবে- এটাই তাদের প্রত্যাশা।

পুরোহিত রামকৃষ্ণ চক্রবর্তী বলেন, বট ও পাকুড় হিন্দুশাস্ত্রে দেবতা বৃক্ষ। এই বৃক্ষের বিয়ে দিয়ে মনোবাসনা পূর্ণ করার পাশাপাশি সব দুঃখ কষ্ট দূর হয়ে যায়।

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ দিনাজপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক রতন সিং বলেন, বট-পাকুড়ের বিয়ের মধ্য দিয়ে মনোবাসনা পূরণ হয় বলে সকল সনাতন ধর্মের মানুষ বিশ্বাস করে। বিয়ের এই অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ খেতে এসেছিলেন প্রায় ২ হাজার অতিথি। আমন্ত্রিতদের সকালের নাশতা হিসেবে খাওয়ানো হয় মুড়ি ও পায়েস আর দুপুরে ভাত, ডাল ও সবজি।