দীর্ঘ মেয়াদে অধিক লাভের আশায় পঞ্চগড়ে বাড়ছে চা চাষের পরিধি

আমাদের প্রতিদিন
2024-04-11 13:00:43

পঞ্চগড় প্রতিনিধি:

দেশের তৃতীয় চা অঞ্চল পঞ্চগড়ে দ্রুতই বাড়ছে চা চাষের পরিধি। একবার এ পণ্য চাষ করে একটানা ৭০ থেকে ৮০ বছর এর সুফল পাওয়ার সুযোগ থাকায় অন্যান্য আবাদকে বাদ দিয়ে এতেই এগিয়ে আসছেন জেলার চাষিরা। বর্তমানে এতে ঝুঁকে পড়েছেন প্রান্তিক পর্যায়ের ক্ষুদ্র চাষিরাও। আর এসব চা বাগানগুলোতে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে জেলার কয়েক হাজার বেকার মানুষের। পঞ্চগড় আঞ্চলিক চা বোর্ড জানায়, শুধু ২০২২ সালেই জেলায় ৫৪০ একর জমিতে চা চাষ সম্প্রসারিত হয়েছে।

চা বোর্ডের মতে, চা চাষের জন্য পাহাড়ি ঢালু জমি লাগবে এমন ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে পঞ্চগড়ে সমতল ভূমিতে চা চাষে বিপ্লব ঘটিছেন স্থানীয় চাষিরা। এক সময়ের পতিত জমি বা এক ফসলি জমি এখন চায়ের বাগানে রূপান্তরিত হয়েছে। একই সাথে প্রান্তিক চাষিরাও ক্ষুদ্রায়তনে চা চাষ করে সচ্ছলতার পথ খুঁজে পেয়েছেন। তৈরি হয়েছে জেলার প্রায় ত্রিশ হাজার বেকারের কর্মসংস্থান।

স্থানীয় চা চাষি মাহামুদ ও জুলহাস আমাদের প্রতিদিনকে জানান, অন্যান্য ফসলের চেয়ে চা লাভজনক হওয়ায় তারা চা চাষের পরিধি বাড়াচ্ছেন। এছাড়া প্রাকৃতিক নানা দুর্যোগে অন্যান্য ফসলের মতো চায়ের ওপর তেমন একটা বিরূপ প্রভাব না পড়ায় আর্থিক ক্ষতির শঙ্কা অনেকাংশে কম।

চা চাষের পরিধি বৃদ্ধি পাওয়ায় কর্মসংস্থান হয়েছে জেলার কয়েকহাজার যুবকের। ছবি: সময় সংবাদ

মরিয়ম নামে চা বাগানের এক কর্মী বলেন, ‘এক সময় বাড়িতেই বসে থাকতাম। কিন্তু বাড়ির পাশেই চা বাগানগুলো তৈরি হওয়ায় আমি ছাড়াও আমাদের পরিবারের অন্য সদস্যরাও এখানে কাজ নিয়েছি। এতে আমাদের পরিবারের আর্থিক অনটন দূর হয়েছে।’ 

১৯৯৬ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পঞ্চগড় সফরে গিয়ে প্রতিবেশি দেশ ভারতের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে চা চাষের খবর জেনে পঞ্চগড়ে চা চাষের সম্ভাব্যতার কথা জানান। শেখ হাসিনার সেই দূরদর্শী চিন্তার বাস্তবে রূপদান করে সফলতার পথ খুঁজে পান স্থানীয় চাষিরা। ফলে এ জেলায় জ্যামিতিক হারে বেড়ে যায় চা চাষের পরিধি।

পঞ্চগড় আঞ্চলিক চা বোর্ড জানায়, ২০০২ সালে ৪৫৫ একর জমিতে সবুজ চা পাতার চাষ করা হয়। বর্তমানে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৯৩৮ একরে। শুধু গত এক বছরে জেলায় ৫৪০ একর জমিতে চা চাষ বেড়েছে।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয়ের উন্নয়ন কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আমির হোসেন বলেন, চা চাষে দীর্ঘমেয়াদে অধিক লাভ, চাষাবাদে কম ঝামেলা এবং ক্ষতির আশঙ্কা নেই বললেই চলে। এর সঙ্গে ক্যামেলিয়া খোলা আকাশ স্কুলের মাধ্যমে স্থানীয় চা চাষিদের প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়ায় পঞ্চগড়ের চাষিরা চা চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠেছেন।

তিনি বলেন, বর্তমানে জেলায় উৎপাদিত কাঁচা চা পাতা প্রক্রিয়াকরণ করতে ২৫টি চা কারখানা উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আরও ১৭টি কারখানা অনুমতি নিয়ে শিগগিরই তাদের কার্যক্রম শুরু করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

গত মৌসুমে পঞ্চগড়ে ১ কোটি ৩৫ লাখ কেজি চা উৎপাদিত হয়। চলতি মৌসুমে সেটি বেড়ে ১ কোটি ৭৫ লাখ কেজিতে পৌঁছাবে বলে আশা করেছেন সংশ্লিষ্টরা।