মিঠাপুকুরে কলেজ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে  সাজানো ‘অপহরণ ও ধর্ষণ’ মামলা

আমাদের প্রতিদিন
2024-04-25 15:12:16

মাদক উদ্ধারে গিয়ে পুলিশের কান্ড

মিঠাপুকুর প্রতিনিধি:

মাদক উদ্ধার করতে গিয়ে মিঠাপুকুরে একজন কলেজ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে সাজানো ‘অপহরণ ও ধর্ষন’ মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। জিহাদ ইসলাম (২২) নামে ওই কলেজ শিক্ষার্থী জেল হাজতে রয়েছে। কথিত অপহৃত শিক্ষার্থী অনিকা ইবনাত (১৮) রয়েছে রংপুর কোতোয়ালী থানায় ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

এলাকাবাসি ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বড়বালার ইউনিয়নের আসাদুল হকের মেয়ে অনিকা ইবনাত ছড়াল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। একই গ্রামের জিল্লুর রহমানে ছেলে জিহাদ ইসলাম কলেজ শিক্ষার্থী। তাদের দু’জনের প্রেমের সম্পর্ক দির্ঘদিনের। তারা ছড়ান এলাকার গুচ্ছগ্রামে এক আত্মিয়ের বাড়িতে বেড়াতে যান। বৃহস্পতিবার ওই বাড়িতে মাদক উদ্ধারে অভিযান চালায় মিঠাপুকুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজার রহমান, বড়বালা বিট পুলিশ কর্তকর্তা মনিবুর রহমানসহ সঙ্গীয় ফোর্স। তারা বাড়ি তল্লাসি করে কোন মাদকদ্রব্য উদ্ধার করতে পারেনি। পরে বাড়িতে অবস্থান করা কলেজ শিক্ষার্থী জিহাদ ইসলাম, অনিকা ইবনাত ও গৃহবধু খাদিজা আক্তারকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তারা সকলে একে অপরের আত্মীয় পরিচয় দিলে পুলিশ তাদের মিঠাপুকুর থানায় নিয়ে আসে। পরে অনিকা ইবনাতকে অপহরণ ও ধর্ষনের অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন পুলিশ। মামলার বাদী করা হয়েছে অনিকা ইবনাতের বাবা আসাদুল হককে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার দায়িত্ব পেয়েছেন অভিযান পরিচালনাকারী বড়বালা বিট পুলিশ কর্তকর্তা মনিবুর রহমান। প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয়রা জানান, অনিকা ইবনাত ইচ্ছাকৃতভাবে ওই বাড়িতে এসেছিল জিহাদ ইসলামের সাথে দেখা করতে। তারা দু’জনে প্রতিবেশি ও পূর্ব পরিচিত। অনিকা ইবনাত পুলিশকে একাধিবার বলেছে আমি জিহাদের সাথে দেখা করতে এসেছি, অপহরণ ও ধর্ষনের মত কোন ঘটনা ঘটেনি। তারপরও পুলিশ তাদেরকে থানায় নিয়ে গিয়ে কথিত অপহরণ ও ধর্ষন মামলা দায়ের করে। গৃহবধু খাদিজা আক্তার বলেন, অনিকা ইবনাত ও জিহাদ ইসলাম দু’জনে আমার পরিচিত। একজন দেবর আরেকজন ননদ। প্রথমে অনিকা ইবনাত আমার বাড়িতে আসে। তার প্রায় ১০ মিনিট পরে আসে জিহাদ। তারা দু’জনসহ আমি গল্পগুজব করছিলাম। এসময় পুলিশ এসে মাদক উদ্ধারের জন্য বিভিন্ন জায়গায় খোড়াখুড়ি শুরু করে। কোথাও কিছু না পেয়ে আমাদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। আমরা একে অপরের পরিচিত বলে পরিচয় দেই। তারপরও পুলিশ আমাদের গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। পরে অপহরণ ও ধর্ষন মামলা দায়ের করে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী গুচ্ছগ্রামের স্থানীয় দোকানদার নাজমা বেগম বলেন, পুলিশ এসে মাদক খুজতে থাকে। না পেয়ে জিহাদ হাসান ও অনিকা ইবনাত ও খাদিজা আক্তারকে গ্রেফতার করে। শুনেছি পরে অপহরণ ও ধর্ষন মামলা হয়েছে। তবে, এরকম কোন ঘটনা ঘটেনি। কলেজ শিক্ষার্থী জিহাদ ইসলামের বাবা জিল্লুর রহমান বলেন, পুলিশ আমাকে ফোন করে ছড়ান গুচ্ছগ্রামে ডাকেন। গিয়ে দেখি পুলিশ জিহাদ হাসানকে আটক করেছে। এসময় পুলিশ জানায়-তাদেরকে থানায় নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দেব। আমাকে থানায় আসতে বলেন। পরে অপহরণ ও ধর্ষন মামলা দিয়ে আমার ছেলেকে জেল হাজতে প্রেরণ করেন।

অনিকা ইবনাতের চাচা আব্দুল মান্নান ও আব্দুল হাকিম বলেন, পুলিশ মুলত. মাদক উদ্ধার অভিযানে এসেছিল। মাদক না পেয়ে পুলিশ তাদেরকে থানায় নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে পুলিশ একটি এজাহার লিখে নিয়ে এসে আমার ভাই আসাদুল হককে দেয়, সে স্বাক্ষর করে। পরে দেখি অপহরণ ও ধর্ষন মামলা দায়ের করা হয়েছে। তারা আরও বলেন, অপহরণ ও ধর্ষনের মত কোন ঘটনা ঘটেনি। বিষয়টি অতিরঞ্জিত করেছে পুলিশ।

অভিযুক্ত বড়বালা বিট পুলিশি কর্তকর্তা মনিবুর রহমানের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। মিঠাপুকুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজার রহমান বলেন, পুরো ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।