ভূমিহীন বিধবা নেছাভানের কপালে জোটেনি সরকারি ঘর

আমাদের প্রতিদিন
2024-04-11 02:03:27

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলা

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:

পল্লীকবি জসিম উদ্দিনের আসমানী কবিতার রসুলপুড়ের আসমানীর বাড়িকে হাড় মানিয়েছে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দ ইউনিয়নের নগরপাড়া গ্রামের ভূমিহীন বিধবা নেছাভান বিবির বসবাস একমাত্র কুড়ে ঘরে। বৃষ্টি আসলে পানি পড়ে ঘরের ভিতর।রোদের তেজ আর শিতের হাওয়া দুটোই ঢুকে পড়ে হদেম। অন্যের জমিতে উঠানো ঘরটি দীর্ঘদিন থেকে বসবাসের অনুপোযোগী হলেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে থাকছেন তিনি। এমন করুণ অবস্থায় থাকলেও তার কপালে জোটেনি সরকারী আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর। কয়েকজন সেচ্ছাসেবী জীর্ণ ঘরটি মেরামত করতে গেলেও জমির মালিকের বাঁধার কারণে ভেস্তে যায় ঘরের সংস্কার কাজ ।

দশ বছর আগে ভিতরবন্দ বাজারের পাশের গ্রাম নগরপাড়ার জৈনক সাইফুল ইসলাম (বিজিবি সদস্য) নামে এক ব্যক্তির বাড়ির পিছনে পরিত্যক্ত জায়গায় ১২ হাত লম্বা এবং ৮ হাত প্রস্থ্যের দো- চালা বা বাংলা কুড়ে ঘরটি নির্মাণ করেন নেছাভানের প্রয়াত স্বামী জোনাই ফকির। সেখানেই এক ছেলেসহ বসবাস করতে থাকেন তারা। কয়েক বছর আগে জোনাই ফকির মারা যান। এরপর পেট চালাতে ভিক্ষাবৃত্তিতে নামতে হয় নেছাভানকে। এরই মধ্যে একমাত্র থাকার ঘরটি বয়সের ভারে জীর্ণশীর্ণ হয়ে পড়ে। নষ্ট হয়ে যায় ঘরের বাঁশের খুঁটি, বেঁড়া, এবং চালের টিন। এক বছর আগে ঘরটি একদিকে হেলে পড়ে। পাশের কলাগাছের সাথে কোন মতে ঠেস লেগে আটকে আছে ঘরটি। চালের ফুটো দিয়ে রাতের চাঁদ তারা সবকিছুই গোনা যায়। ঘরটির জীর্ণ বেঁড়া ছেড়া কাপড় আর চট দিয়ে জোড়াতালি দেয়া। ঘরে নেই ঘুমানোর চৌকি কিংবা অন্য কোন আসবাবপত্র। শীতে তীব্র ঠান্ডা আর বর্ষায় বৃষ্টির পানিতে ভিজে একাকার হয়ে এই ঘরের মাটিতেই শয়ণ আর এক কোণে চলে রান্নার কাজ।

নেছাভান বলেন, অনেক কষ্টে এই ঘরে বাস করেন তিনি। কোথাও যাওয়ার যায়গা নেই। বৃষ্টি হলে ঘরের খেতা বালিশসহ সবকিছু ভিজে যায়। এমনকি রাতে বৃষ্টি হলে তাকেও ভিজতে হয়। ভারী বৃষ্টিপাত হলে সবকিছু রেখে বাজারের দোকানের বারান্দায় রাত পার করতে হয়। বেশ কয়েকবার সরকারী ঘরের জন্য স্থানীয়  জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও সুফল জোটেনি।

সম্প্রতি ঘরটির এমন দূর্বস্থা দেখে স্থানীয় কয়েকজন সেচ্ছাসেবী ঘরটি মেরামতের উদ্যোগ নেন। ঘর মেরামতের অর্থ যোগার করে তারা। তবে ঘরটি মেরামত করতে গেলে জমির মালিক নিষেধ করেন। কারণ জমির মালিক চাচ্ছেন না নেছাভান সেখানে থাকুক।

স্থানীয় সেচ্ছাসেবী আশরাফুল আলম বলেন, ঘরটি মেরামতের জন্য আমরা ৩০হাজার টাকা সংগ্রহ করি। ফেব্রুয়ারীর প্রথম সপ্তাহে ঘরটি মেরামতের জন্য গেলে জমির মালিক বিজিবি সদস্য সাইফুল ইসলাম নিষেধ করেন। পরে ঘরটি আর ঠিক করা হয়নি। তিনি আরোও জানান, ঘরটির যে পরিস্থিতি আছে  তাতে করে সামান্য ঝড়েই পড়ে যাবে। তখন নেছাভান বিবির থাকার কোন জায়গা থাকবে না। সরকারী আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দের তালিকাতেও নাম নেই তার।

ভিতরবন্দ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আমিনুল হক খন্দকার বাচ্চু বলেন, নেছাভান বিবি হতদরিদ্র অসহায়। ভিক্ষা করে জীবন-যাপন করে।এর আগেও তার (২ বছর আগে তিনি যখন চেয়ারম্যান ছিলেন)নামের তালিকা ইউএনও অফিসে দেয়া হয়েছিলো আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরের জন্য কিন্তু রহস্য জনক কারনে বারবার তার নামটি বাদ পড়ে যায়। অবসর প্রাপ্ত বিজিবি সদস্য রফিকুলের জায়গায় নেছাভানের এই জরাজীর্ণ ঘর।

ভিতরবন্দ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শফিউল আলম শফি বলেন, নেছাভানের মতো দরিদ্র আমার ইউনিয়নে আর কেউ নেই। তারপরও কি কারনে আশ্রয়ন প্রকল্পের তালিকা থেকে নামটি বাদ যাচ্ছে আমার বোধগম্য নয়।এবারভিতরবন্দ ইউনিয়নে আশ্রয়ন প্রকল্পের অধিনে তিন জনের ঘর প্রাপ্তি চুড়ান্ত করেছে উপজেলা প্রশাসন এর মাঝে নেছাভানের নাম নেই।

নাগেশ্বরী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোফাখ্খারুল ইসলাম জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্প- ২ এর আওতায় চতুর্থ পর্যায়ের কাজ চলমান রয়েছে। উপজেলায় মোট ১১৮জন  সুবিধাভোগি এবার ঘর পাবেন। তার মধ্যে ভিতরবন্দ ইউনিয়নে রয়েছে দুইজন সুবিধাভোগী। এদের মাছে নেছাভান বিবির নাম নেই।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা জাহান বলেন, নেছাভান বিবির বিষয়টি খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। তিনি প্রকৃত ভূমিহীন হলে আগামীতে তাকে জমি ও ঘর দেয়া হবে।