রংপুরে স্কুল-কলেজে কমছে শিক্ষার্থীর উপস্থিতির সংখ্যা

আমাদের প্রতিদিন
2024-04-24 04:37:02

আলু উত্তোলন ও বোরো রোপন মৌসুম

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রংপুর নগরীসহ উত্তর জনপদে আলু উত্তোলনের ধুম পড়েছে। সেই সাথে রোপন হচ্ছে বোরো ধান। আলু উত্তোলন আর ধানের চারা রোপনকে কেন্দ্র করে স্কুল-কলেজ গুলোতে শিক্ষার্থীর উপস্থিতির সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। এর ফলে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে শিক্ষকসহ শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা।

তবে শিক্ষার্থীরা বলছেন, তারা অনেকেই দরিদ্র পরিবারের।তাদের পড়ালেখার খরচ চালাতে পরিবারকে হিমসিম খেতে হচ্ছে। তাই তারা প্রতি বছরের ন্যায় এবারও নিজের প্রাইভেট, বই-খাতার খরচ মেটাতে অন্যের জমিতে কাজ করছেন। কেউ নিজেদের জমিতেও কাজ করছেন। এতে পরিবারকে সহযোগিতা ছাড়াও নিজেরা কিছু আর্থিক লাভবান হন। এতে পরিবার ও নিজেরা উপকৃত হয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে রংপুর নগরীসহ পীরগাছা, কাউনিয়া, মিঠাপুকুর, গঙ্গাচড়া ও পীরগঞ্জ উপজেলায় জানা গেছে, প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়সহ মাদারাসা ও বিভিন্ন ধরণের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার মারাত্মকভাবে কমেছে। আলু উত্তোলন ও বোরো ধান রোপন মৌসুমকে কেন্দ্র করে এমন পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে।

সরেজমিনে রংপুর নগরীর নাজির দিঘর উচ্চ বিদ্যালয়, আক্কেলপুর উচ্চ বিদ্যালয়, তালুক তামপাট উচ্চ বিদ্যালয়, সদরের জানকী ধাপেরহাট উচ্চ বিদ্যালয়, মিঠাপুকুরের চুহড় উচ্চ বিদ্যালয়, কুমরগঞ্জ দাখিল মাদ্রাসা, পীরগাছা উপজেলার চন্ডিপুর মডেল হাইস্কুল, দেউতি রফিকুল ইসলাম বালিকা বিদ্যালয়, স্বচাষ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বড়দরগাও উচ্চ বিদ্যালয়, কল্যাণী উচ্চ বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে বর্তমানে আলু উত্তোলন ও বোরো ধান রোপনকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীর উপস্থিতির হার কমে গেছে। মোট শিক্ষার্থীর মাত্র ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ উপস্থিত হচ্ছে বলে শিক্ষকরা জানিয়েছেন। এতে শিক্ষা ব্যবস্থা কিছুটা ব্যাঘাত হচ্ছে। এর ফলে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন শিক্ষকসহ শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা।

পীরগাছা উপজেলার কল্যাণী ফকিরা গ্রামের মামুন মিয়া ও জামাদুল হক জানান, তারা দুই ভাই। দুইজনেই বড়দরগাও উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণীতে পড়েন। প্রতি বছর আলুর সময় তারা নিজের ও অন্যের জমিতে কাজ করেন। গত বছর পরিবারকে প্রায় দুই হাজার টাকা দিয়েছেন। এতে বাবা-মা অনেক খুশি হয়েছেন। চলতি বছর আরও বেশি আয় করার জন্যে মনোযোগ দিয়ে কাজ করছেন। এতে তাদের পড়ালেখার খরচ মেটানোসহ পরিবার কিছুটা উপকৃত হবে।

নগরীর তামপাট এলাকার নওশীন নাহার ও কেয়া মনি নামের দুই শিক্ষার্থী জানায়, আলু মৌসুমে তারা পুরো পরিবার অন্যের জমিতে কাজ করে বেড়ায়, তাই আপাতত স্কুলে যাচ্ছেনা। তবে এতে তাদের পড়ালেখার কোন ব্যাঘাত ঘটবে না বলেও তারা জানান।

নগরীর নাজিরদিঘর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভার:) আখতারুজ্জামান জানান, শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের অধিকাংশই অত্যন্ত গরীব। বিভিন্ন ফসলের মৌসুমে তারা পরিবারকে সাহায্য করে থাকে। ফলে পরিস্থিতির স্বার্থে মেনে নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। কারণ হিসাবে তিনি বলেন, এমন কিছু শিক্ষার্থী আছে যারা মৌসুমে কাজ না করলে পড়ালেখায় ব্যাঘাত ঘটে।

পীরগাছা উপজেলার দেউতি রফিকুল ইসলাম বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রতন সাহা জানিয়েছেন, কোন রকমের পূর্বানুমতি ছাড়াই এসব শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকছে। ফলে শ্রেণীকক্ষে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।

এব্যাপারে রংপুর সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো: এসআর ফারুক জানিয়েছেন, প্রতি বছর এ মৌসুমগুলোতে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থী সংকট দেখা দেয়। এতে লেখাপড়ার কিছুটা ঘাটতি হয়। এজন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে উপস্থিতি বাড়াতে বলা হয়েছে। তবে চলতি সপ্তাহে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হবে বলে তিনি জানান।