পীরগঞ্জের ওসি'র ঘুষ গ্রহনের ভিডিও ফাঁস ওসি ক্লোজড, স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি প্রদান

আমাদের প্রতিদিন
2024-04-24 03:40:14

নিজস্ব প্রতিবেদক:

পীরগঞ্জ থানার ওসি জাকির হোসেনকে ঘুষ প্রদানের ভিডিও ক্লিপ ফাঁস হওয়ার খবর তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় রংপুর পুলিশ লাইন্সে তাক ক্লোজড করা হয়েছে। গত সোমবার রংপুরের পুলিশ সুপার ওই ক্লোজড করেছেন। এদিকে ওসিকে ঘুষ দেয়ার ব্যাপারে পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তার কাছে ঘুষদাতারা স্বীকারোক্তিমুলক লিখিত জবানবন্দি দিয়েছেন।

ঘুষ প্রদানকারী পীরগঞ্জের খালাশপীর হাটের ব্যবসায়ী রাসেল মিয়া জানান, রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক চারলেনে সম্প্রসারণ কাজে তিনিসহ তিন জন পীরগঞ্জের করতোয়া নদীপাড়ের জমি থেকে বালু সরবরাহ করে আসছিলেন। ওই বালু ড্রাম ট্রাকে করে মহাসড়কের পীরগঞ্জ এবং মিঠাপুকুর উপজেলা এলাকায় পরিবহন করছিল। পীরগঞ্জ থানার ওসি জাকির হোসেন ড্রাম ট্রাকগুলো আটক করে বালু ব্যবসায়ীদের কাছে প্রতি সিএফটি বালুর জন্য ৫০ পয়সা করে ঘুষ দাবী করে।

এ নিয়ে বালু ব্যবসায়ী রাসেল মিয়া, জাফরপাড়া গ্রামের উজ্জল মিয়া, আরিফুল ইসলাম এবং উপজেলা সদরের রুপম মিয়া বাধ্য হয়ে ওসিকে প্রতি সিএফটি বালুর জন্য ২০ পয়সা করে দেয়ার মৌখিক সমঝোতা করে। পরে তারা চুক্তি মোতাবেক ৬১ হাজার টাকায় দুটি খাট, লেপ, তোষক, বালিশ এবং নগদ ১৫ হাজার টাকা ওসিকে দেয়। সম্প্রতি রাসেল মিয়া থানায় ঢুকে তার প্যান্টের পকেট থেকে ৬০ হাজার টাকার একটি বান্ডিল ওসিেেক দেন। এ সময় ভিডিও চলাকালীন সময়ে কথোপকথনে ওসিকে টাকার হিসাব দিতে শোনা যায়। একপর্যায়ে ওসি বলেন, তোমরা ওই লাইনের টাকা এখানে আনছো কেন? তোমরা হিসাব করো। এ ঘটনা ফাঁস হলে রংপুর পুলিশের  ডি সার্কেলের এএসপি কামরুজ্জামান ঘটনা পরিদর্শন করে সত্যতা পান। পরবর্তীতে রংপুরে পুলিশ সুপার ফেরদৌস আলী চৌধুরী ওসি জাকির হোসেন কে রংপুর পুলিশ লাইনে ক্লোজড করেন। অপরদিকে গত সোমবার রংপুরের পুলিশ ডি সার্কেলের এএসপি কামরুজ্জামানের কাছে পীরগঞ্জের ৪ বালু ব্যবসায়ী রাসেল মিয়া, আরিফুল ইসলাম, উজ্জল মিয়া এবং রুপম মিয়া ঘুষ প্রদানের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী লিখিতভাবে দিয়েছেন।

ভিডিও ক্লিপে দেখা গেছে, ওসি থানাকে দোকানের সাথে তুলনা করেছেন। ‘থানাও দোকান’ বলে ওসি দাবী করেন। বালু ব্যবসায়ী রাসেল মিয়া বলেন, আমরা প্রতি সিএফটি বালু ২ টাকা করে চায়না কোম্পানির কাছে বিক্রি করি। এবারে ৭'শ ৮১ ট্রাক বালু সরবরাহের পর প্রায় ১৩ লক্ষ টাকা বিল উত্তোলন করি। সেই টাকা থেকে ওসি ২ লক্ষ টাকা ঘুষ দাবী করলে আমরা তাকে কয়েকমাস আগে ৬১ হাজার টাকায় দুটি খাট, ড্রেসিং টেবিল, লেপ, তোষক, বালিশ, বেডশীট এবং নগদ ১৫ হাজার টাকা ঘুষ দেই। এরপর ওই বালু পরিবহনের বিলের কপি ওসি তার হোয়াটসঅ্যাপে চাইলে, সেটিও তাকে প্রদান করি। তিনি আরও বলেন, আমরা ব্যবসা করতে এসে খুবই অসহায় হয়ে পড়ি।

একাধিক সূত্রে জানা যায়, পীরগঞ্জ থানায় ওসি হিসেবে যোগদানের পর থেকেই জাকির হোসেন অবাধে চালিয়ে আসছে তার ঘুষ বাণিজ্য। কিছু নামধারী রাজনৈতিক নেতা ও কতিপয় সাংবাদিকদের নিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন দালাল সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেট নানাভাবে হয়রানী করে আসছে পীরগঞ্জ হাজার হাজার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ কে। ওইসব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ আইনি সহায়তা নিতে থানায় এলে তারা ওসি'র ঘুষ বাণিজ্যের শিকার হয়ে যায়। বাদী বিবাদী উভয় পক্ষের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে দ্বদ্ব জিইয়ে রেখে ফায়দা আদায় করে ওসি জাকির হোসেন। ফলে সমাজে অস্থিরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এমন দাবী অনেকের। অন্যদিকে থানায় মামলা দিতে এলে বিপক্ষ প্রভাবশালীর সাথে আতাত করে ওসি অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে এমন অভিযোগও উঠেছে।

পীরগঞ্জে বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের কমিশনও জোর করে আদায় করে ওসি জাকির হোসেন। সম্প্রতি এ রকম একটি কমিশন বাণিজ্যের টাকা গ্রহণের ভিডিও ক্লিপ ফাঁস হয়ে যায়। টাকার দেবার সময় কেউ একজন গোপনে তা ভিডিও ধারণ করে। এ ঘটনা ধামাচাপা দিতে সাংবাদিক নামধারী কতিপয় দালালসহ কিছু রাজনৈতিক নেতা  দৈড়ঝাপ শুরু করে। এ বিষয়ে সরেজমিন  দেখা যায় এলাকাবাসীর মাঝে তীব্র  ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ওসি জাকির হোসেনের দ্রæত বদলী ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং দালালমুক্ত থানার দাবীতে ফুঁসে উঠছে পীরগঞ্জবাসী।

এ বিষয়ে ওসি জাকির হোসেনের সাথে মুঠোফোনে  যোগাযোগ করলে তিনি জানান,তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা বানোয়াট এবং ষড়যন্ত্রমূলক। কেউ একজন তাকে ঘুষ প্রদানের প্রস্তাব করলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করায় তাকে ফাঁসাতে ভিডিও ক্লিপ প্রচার করছে।

এদিকে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, ওসি'র বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে।