রঙিন আভায় আচ্ছাদিত হচ্ছে গাছের থোকা থোকা লিচু

আমাদের প্রতিদিন
2024-03-28 07:18:39

দিনাজপুর প্রতিনিধি:

এখন পর্যন্ত বাজারে না আসলেও গাছেই রঙ আসতে শুরু করেছে সুস্বাদু রসালো ফল লিচু’র। লিচুখ্যাত দিনাজপুরে আর দু’সপ্তাহের মধ্যেই বাজারে আবির্ভাব ঘটবে সুমিষ্ট এই ফলটির। তবে শুরুতেই গাছে মুকুল কম আসায় এবং প্রতিকুল আবহাওয়ার কারনে এবার ফলন কম হওয়ায় চোখে-মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ দিনাজপুরের লিচু চাষীদের মধ্যে।

দিনাজপুর শহরের পাটুয়াপাড়া এলাকার লিচুচাষী রিজভী হোসেন। দিনাজপুরের বিরল উপজেলার রাজারামপুর ইউনিয়নের চনকালী এলাকায় তার ১৫০টি এবং সদর উপজেলার রাজবাড়ী এলাকায় রয়েছে ৪০টি লিচুগাছ। গতকাল শনিবার সকালে তিনি চনকালী এলাকার লিচু বাগানে গিয়ে দেখেন গাছে থোকা থোকা লিচু রঙ আসতে শুরু করেছে। লাল আভায় আচ্ছাদিত হচ্ছে গাছের ঝুলন্ত লিচুর থোকাগুলি। লিচুর এই রং দেখে তার মুখে কিছুটা হাসি ফুটলেও বাগানের পরিস্থিতি দেখে চোখে-মুখে যেনো চাপা দুশ্চিন্তার ছাপ। রিজভী হোসেন জানান, তার মাদ্রাজী জাতের লিচুতে রঙ আসতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, এমনিতেই এবার গাছে মুকুল কম এসেছে। তার উপর প্রখর রোদ, তাপমাত্রা বেশী এবং সময়মতো বৃষ্টির অভাবে বেশ কিছু লিচুর গুটি গাছ থেকে ঝরে পড়েছে। প্রখর রোদের কারনে ফেটে যাচ্ছে গাছের লিচু। এসব কারনে এবার লিচুর ফলন কম হয়েছে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় তিনি।

একই কথা জানান লিচুখ্যাত দিনাজপুরের অন্যান্য লিচুচাষীরাও। দিনাজপুরের বিরল উপজেলার লিচুখ্যাত এলাকা মাধববাটী গ্রামের লিচু চাষী আনারুল ইসলাম জানান, এবার বেশ কিছু গাছে মুকুলের পরিবর্তে বের হয়েছে নতুন পাতা। মুকুলের সময় নতুন পাতা বের হওয়ার কারনে মুকুলের পরিমান কম ছিলো। এর উপর বৃষ্টির অভাবে লিচুর অনেক গুটি ঝরে পড়েছে। সব মিলিয়ে গতবছরের তুলনায় এবার ফলন কম হওয়ায় লিচু নিয়ে শংকা তার। এরপরও কৃষি বিভাগের পরামর্শে লিচু গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন লিচু চাষী আনারুল ইসলাম।

গত কয়েকদিন দিনাজপুরের বিরল উপজেলার মাধববাটী, রবিপুর, শংকরপুর, রাজারামপুর, সদর উপজেলার মাসিমপুর, উলিপুর, আউলিয়াপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় লিচুবাগান ঘুরে দেখা গেছে, গাছে গাছে সবুজ রঙের থোকা থোকা লিচু ঝুলে আছে। এর মধ্যে আগাম জাতের লিচুতে রঙ আসতে শুরু করেছে। লিচু’র ভারে কিছুটা নুয়ে পড়ছে গাছের ডালগুলো। এই অবস্থায় গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত লিচু চাষীরা।

লিচু চাষীরা বলছেন, এবার শীত কম হওয়ায় গাছে মুকুল কম এসেছে। এর ওপর অনাবৃষ্টি। সব মিলিয়ে এবার ফলন কম হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন চাষীরা। তবে ফলন কম হলেও লিচুর দাম পাওয়া নিয়ে তাঁরা আশাবাদী। তাদের আশা, লিচুর ফলন কম হওয়ায় চাহিদা থাকবে বেশি। এ ছাড়া এবার পরিচর্যার খরচও বেশি হয়েছে। তাই এবার লিচুর দাম বেশি থাকবে।

দিনাজপুর কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নুরুজ্জামান জানান, গতবছর দিনাজপুরে লিচুর ফলন ছিল ৩০ হাজার মেট্রিক টন। সাধারণত একবছর ফলন বেশী হলে পরের বছর ফলন কিছুটা কমে যায়। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। ইতিমধ্যে ফল পুষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী চাষিরা গাছ ও ফলের পরিচর্যা করছেন। তিনি বলেন, আর দু’সপ্তাহের মধ্যেই বাজারে আসতে শুরু করবে লিচু।

দিনাজপুর হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক এজামুল হক জানান, এবার তাপমাত্রা বেশী থাকার কারনে কিছু কিছু লিচুর গুটি ঝরে পড়েছে। এতে তুলনামুলক কিছুটা লিচুর ফলন কম হবে। তবে তা হতাশ হওয়ার মতো নয়।

লিচুখ্যাত দিনাজপুরে মূলত মাদ্রাজী, বোম্বাই, বেদানা, হাড়িয়া বেদানা, চায়না-থ্রি, কাঁঠালি ও দেশীয় কিছু জাতের লিচুর চাষ হয়। এর মধ্যে মাদ্রাজী আগাম জাত। এ জন্য বাজারে প্রথম দেখা মিলবে মাদ্রাজী লিচুর। এরপরে ক্রমান্বয়ে বেদানা, বোম্বাই ও সবশেষ আসবে চায়না-থ্রি লিচু।

দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দিনাজপুর জেলায় লিচুর বাগান রয়েছে মোট ৫ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে বোম্বাই লিচু ৩ হাজার ১৭০ হেক্টর, মাদ্রাজী ১ হাজার ১৬৬ হেক্টর, চায়না-থ্রি ৮০২ হেক্টর, বেদানা ২৯৫ দশমিক ৫ হেক্টর, কাঁঠালি ৫৬ হেক্টর এবং মোজাফফরপুরী লিচু ১ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। এ ছাড়া বসতবাড়ির উঠানসহ বাগানগুলোতে লিচুগাছ আছে প্রায় সাত লাখ। এবার লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩১ হাজার ৭৯০ মেট্রিক টন।