মাদক ও স্বর্ণ চোরাচালানের নিরাপদ রুট ফুলবাড়ী সীমান্ত

আমাদের প্রতিদিন
2024-04-18 06:08:48

আব্দুল আজিজ মজনু, আঞ্চলিক প্রতিনিধি:   

থামছে না মাদক। এরই মধ্যে মাদকের পাশাপাশি চোরাচালান হচ্ছে স্বর্ণ। কুড়িগ্রামের উত্তর সীমান্তের ফুলবাড়ী উপজেলাটি এখন মাদক ও স্বর্ণ চোরাচালনের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করছে চোরাকারবারীরা। পুলিশ ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি’র) নজরদারী কঠোর থাকলেও থেমে নেই এই অবৈধ ব্যবসা। এরই মধ্যে বিজিবি সীমান্তে আটক করেছে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকার ১৪টি সোনার বার এবং পুলিশ গত এক বছরে ৬৫০ কেজি গাঁজা, ১হাজার ৭৭০ বোতল ফেন্সিডিল, ১ হাজার ২৩৭ বোতল ইস্কাপ, ছয় হাজার ৪২১ পিচ ইয়াবা। মামলা হয়েছে ১০৬ টি। মাদক মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে ১১০ জন। এরপরেও থেমে নেই চোরাচালানী কারবার। প্রতিদিন হাত বদল হয়ে পাচার করা হচ্ছে কোটি কোটি টাকার মাদক ও স্বর্ণ।    

গত তিনদিন সীমান্ত ঘুরে জানা গেছে, সীমান্ত লাগোয়া কিছু অসাধু বসবাসকারীর সহযোগীতায় উপজেলার ৩৬ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রতিদিন অবৈধ পথে আনা নেওয়া হচ্ছে গাঁজা,ফেন্সিডিল,ইস্কাপ, ইয়াবাসহ স্বর্ণ। এগুলোর নিরাপদ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে গোরুকমন্ডল, গজেরকুটি, বালাটারী,কুরুষা ফেরুষা, খালিশা কোটাল, নকররজান, কাশিয়াবাড়ী, নাজীরহাট, ধর্মপুর ও অনন্তপুর হাজীটারী। আর সোনা চোরাচালান হচ্ছে উপজেলার কাশিপুরের ধর্মপুর সীমান্ত দিয়ে। ১৩ মে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিজিবি গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আটক করে প্রায় দেড় কোটি টাকার ১৪টি স্বর্ণের বার। সেখানে অবৈধ কারবারের সঙ্গে জড়িত ওই এলাকার রবিউল ইসলাম রবি। এরই মধ্যে ফুলবাড়ী থানা পুলিশ সীমান্তবর্তি কুরুষাফেরুষা ও অনন্তপুর সীমান্তসহ ৮টি সীমান্তর্তি এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২৮৬ কেজি গাঁজা জব্দ করেছে। মাদক ব্যবসায়ীরা এতই বেপরওয়া যে তারা প্রকশ্যেই শতাধীক বাড়ীতে বিক্রি করছে মাদক। প্রতিদিন  দুপুরের পরে বাড়ী গুলোতে ভীড় করে মাদক সেবনকারীরা। ভয়াভহ মাদকের আখড়ায় জড়িয়ে পড়ছে স্কুল-কলেজের কোমলমতি শিশু-কিশোরসহ যুব-তরুন সমাজ। বাদ যাচ্ছে না স্কুল-কলেজে কর্মরত শিক্ষকরাও। ফলে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে যুব ও তরুন সমাজ। এরই মধ্যে মাদককে ঘিরে ক্ষমতাশীন ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের দুই গ্রæপের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়েছে। মাদকের টাকা যোগান দিতে না পারায় ফুলবাড়ী বাজারে ছেলে হাতে খুন হয়েছেন কাশেম সরদার নামে এক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও ধরলা সেতু থেকে লাফ দিয়ে পানিতে ডুবে মারা গেছে আমির হোসেন মাষ্টারের ছেলে জয়। আবার গত রোববার ধান কাটতে যাওয়ার কথা বলায় মাদকাসক্ত ছেলের হাতে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জখম হয়েছেন উপজেলার নাওডাঙ্গা গ্রামে ছোবেদ আলী। তিনি এখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। 

সীমান্ত এলাকার অনেকেই জানিয়েছেন, ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর আবাসন, উত্তর অনন্তপুর সীমান্তপাড়া , কাশিয়াবাড়ী সীমান্তপাড়া, বেড়াকুটি বাজারে পাশে, ধর্মপুরবাজারের পাশে, বালাবাড়ী বাজার, কাশেম বাজার, কাশিপুর কলেজমোড়,গংগাহাট ব্রীজের মোড়, আব্দুল্লাবাজার, চোত্তাবাড়ী মোড়, নকরজান, চাঁদের হাট, ঠোস বিদ্যাবাগিস, ,ব্র্যাক মোড়, পানিমাছকুটি মডেল স্কুল এলাকা, কদমতলা, জুম্মাড়পাড়, নন্দিরকুটি, লালেরবাজার, ঠাকুরপাঠ, টেপরিবাজার, মিয়াপাড়া এলাকা,ধরলার চর হক বাজার, সৌহাদ্য বাজার,শালবাড়ী হ্যাচারী মোড়, ধরলাসেতু সংলগ্ন, কুরুষাফেরুষা, খলিশাকোটাল,গজেরকুটি, বালাতাড়ি, কৃষ্ণানন্দ বকসী, গোরকমন্ডল বিডিআর বাজার, গোরকমন্ডল নামাটারী, গোরকমন্ডল ব্রীজের পাড়, চর-গোরকমন্ডল আনন্দ বাজার, চর গোরকমন্ডল আবাসন, নাওডাঙ্গা, শিমুলতলা বাজার ,খড়িবাড়ী ডালের মোড়, জোসনাড়মোর, গেটের বাজার, বড়লইড় বাজার,বড়ভিটা বাজার সংলগ্ন শতাধিক স্পটে প্রকাশ্যেই মাদক কেনাবেচা হয়।

এদিকে ফুলবাড়ী থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে গত এক বছরে গাঁজা উদ্ধার করেছে ৬৫০ কেজি। ফেন্সিডিল উদ্ধার হয়েছে এক হাজার ৭৭০বোতল। ইস্কাপ এক হাজার ২৩৭ বোতল ও ইয়াবা ৬ হাজার ৪২১ পিচ। ১০৬টি মামলায়  আসামী করা হয়েছে ১৭৫ জন মাদক কারবারীদের বিরুদ্ধে। তার মধ্যে আটকও  হয়েছেন ১১০জন। জব্দ করেছে ২০টি মোটরসাইকেল,পিকআপ ভ্যান ২টি , মাইক্রোবাস ২টি, কাভার্ড ভ্যান ১টি, অটো চার্জার ১টি, নৌকা ১টি।

ফুলবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফজলুর রহমান জানান, প্রতিদিনই আমাদের মাদক বিরোধী অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আমি ফুলবাড়ী থানায় যোগদান করার পর ব্যাপক মাদক উদ্ধার করেছি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সমাজের সচেতন মানুষ যদি পুলিশ বাহিনীকে সহযোগিতা করেন  সহজেই মাদক নিয়ন্ত্রন  করা সহজ হবে।