১২০ জন পরীক্ষার্থীর ভাগ্য অনিশ্চিত:স্বাক্ষর নেয়া হয়নি পিএসসির সরবরাহকৃত হাজিরা সিটে

আমাদের প্রতিদিন
2024-04-23 21:28:28

রংপুরে ৪৫তম বিসিএস প্রিলিমিনারি টেস্ট পরীক্ষা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রংপুরের ৩টি কেন্দ্রে আজ শুক্রবার ৪৫তম বিসিএস প্রিলিমিনারি টেস্ট পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে ১২০জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেন। তারা পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন। তারা পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করলেও তাদের পিএসসির সরবরাহকৃত হাজিরা সিটে নাম স্বাক্ষর গ্রহণ করেননি পরীক্ষা কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি প্রথমে গোপন রাখার চেষ্টা করা হলেও পরে তা ফাঁস হয়ে পড়ে।

পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীদের সিট বিন্যাসের ক্ষেত্রে জটিলাতার কারণে এমন পরিস্থিতি হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া এই তিন কেন্দ্রে আসন বিন্যাস নিয়ে পরীক্ষার্থীদের সহায়তা করার জন্য কোন ‘হেলপ ডেক্স’ ছিলো না।

এ ঘটনায় নিয়ে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা রংপুর কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজ, রংপুর পুলিশ লাইনন্স স্কুল এন্ড কলেজ ও রংপুর সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজ এই তিনটি পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক ও পিএসপির পক্ষে পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ওপর বিক্ষুব্ধ হন। তারা পিএসসির সরবরাহকৃত হাজিরা সিটে নাম স্বাক্ষরের দাবি জানান। বিষয়টি জানতে পেরে রংপুর বিভাগীয় কমিশনার হাবিবুর রহমান ও জেলা প্রশাসক ড. চিত্রলেখা নাজনীন রংপুর কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজের পরীক্ষা কেন্দ্রে আসেন।তাঁরা বিষয়টি পরীক্ষার্থীদের কাছে শুনে পিএসসির কেন্দ্রীয় দপ্তর ঢাকায় যোগাযোগ করেন। এরপর জেলা প্রশাসক পরীক্ষার্থীদের আলাদা সাদা কাগজে উপস্তিতির হাজিরা স্বাক্ষর নেয়া সাদা কাগজটি ওই পরীক্ষা কেন্দ্রের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ মঞ্জুয়ারা পারভিনকে পিএসসির সরবরাহকৃত হাজিরা সিটের সাথে সংযুক্ত করে পিএসসিতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

রংপুর কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রের ৪৫ পরীক্ষার্থী এই বিড়ম্বনার শিকার হন। একইভাবে রংপুর পুলিশ লাইনন্স স্কুল এন্ড কলেজ ও রংপুর সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজ এই দু’টি কেন্দ্রেও কেই ঘটনার শিকার হন ৭৫জন পরীক্ষার্থী। তাদের ক্ষেত্রেও হাজিরা সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে পাঠানো হয়।

এ সম্পর্কে পরীক্ষার্থী শারমিন আকতার স্বর্ণা জানান, তিনি এমবিবিএস পাস করেছেন তিনি কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষার্থী ছিলেন। তিনি এসে বোর্ডে কলেজ কর্তৃপক্ষের সাথে তার কাছে পিএসসির সরবরাহকৃত আসন বিন্যাসের মিল খুঁজে না পাওয়ায় এই এঘটনার শিকার হয়েছেন। তার সাথে এমন ৪৫জন পরীক্ষার্থীর আলাদা শ্রেণি কক্ষে বিশেষ ব্যবস্থায় পরীক্ষা নেয়া হয়। কিন্তু পিএসসির হাজিরা সিটে উপস্থিতি নাম স্বাক্ষর নেয়া হয়নি। এমন অভিজ্ঞতার কথা জানালেন, এই কেন্দ্রের অপর পরীক্ষার্থী ডা. আবু বক্কর রংপুরে মাহিগঞ্জের বাসিন্দা, ডা. আমিনা ইসলাম পাপিয়াসহ একাধিক পরীক্ষার্থী একই অভিজ্ঞতার কথা জানান। 

সরজমিন দেখে এবং পরীক্ষার্থী ও পরীক্ষা কেন্দ্রর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এবারে কেন্দ্রগুলোতে পিএসসি নতুন পদ্ধতিতে জোড় ও বেজোড় সংখ্যা নিয়ে দেশের প্রতিটি কেন্দ্রের আসন বিন্যাস করা হয়। সে অনুযায়ী পরীক্ষা কেন্দ্রগুলো আসন বিন্যান ছক করা হয়েছিল। কিন্তু রংপুরের এই তিনটি কেন্দ্রের পক্ষে আসন বিন্যাস ও আসন বিন্যাসের যে নির্দেশনা বোর্ড সেখানে গরমিল ছিলো। ফলে পরীক্ষার্থীরা কেন্দ্রগুলোতে  এসে সমস্যায় পড়েন। অন্যান্য কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দ্রæত সমাধান করলেও এই তিনটি কেন্দ্রে তা করতে বিলম্ব হলে পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা দেয়ার জন্য উদগ্রিব হয়ে পড়েন। এর মধ্যে বেশকিছু সময় গড়িয়ে যায়। পরে তারা বিকল্পভাবে অন্য শ্রেণি কক্ষে তাদের পরীক্ষা গ্রহণ করেন। কিন্তু এদের পিএসটির সরবরাকৃত হাজিরা সীটে নাম স্বাক্ষর না দিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে সাদা কাগজে নাম স্বাক্ষর গ্রহণ করা হয়। ফলে তাদের নির্ধারিত পরীক্ষার শ্রেণি কক্ষের হাজিরা সিটে অনুপস্থিত দেখানে হয়। এ নিয়ে পরীক্ষার্থীদের যে আলাদা করে পরীক্ষা নেয়া হয়েছে তাদের পরীক্ষা নেয়া হলেও কিন্তু পিএসসির কাছে তাদের নাম অনুপস্থিতির তালিকায় থেকে যায়। এ নিয়ে প্রায় ২ ঘণ্টা ধরে পরীক্ষার্থীরা তাদের হাজিরা নিশ্চিত করতে পিএসসির সরবরাকৃত হাজিরা সিটে নাম স্বাক্ষর নেয়া দাবিতে বিক্ষোভ করেন। পরে বিভাগীয় কমিশনার পরীক্ষার্থীদের আশ^স্ত করেন। তিনি এ নিয়ে পিএসসিতে কথা বিষয়টি তিনি দেখবেন। তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হবে বলে জানান । এ নিয়ে রংপুর কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মঞ্জুয়ারা পারভিন বলেন, পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত থেকে পরীক্ষা দিয়েছেন এ জন্য তিনি পিএসসির হাজিরা সিটে তাদের নাম স্বাক্ষর না থাকলের উপস্থিতি সম্পর্কে পিএসসিকে জানাবেন।

রংপুর পুলিশ লাইন্স স্কুল এন্ড কলেজের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান রংপুর পুলিশ সুপার ফেরদৌস আলী চৌধুরী জানান, তার কেন্দ্রে ১৬ পরীক্ষার্থী এই সমস্যায় পড়েন। তাদের বিকল্প ব্যবস্থায় পরীক্ষা নেয়া হয়।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে রংপুর বিভাগীয় কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, তিনি বিষয়টি নিয়ে পিএসসিতে কথা বলেছেন। পরীক্ষার্থীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে জন্য বিষয়টি তিনি বিবেচনা করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বলেছেন। তিনি বলেন নতুন আসন বিন্যাস পদ্ধতির কারণে এবং এ নিয়ে পরীক্ষার্থীদের ধারণা না থাকায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তিনি আরও জানান তিনি শুনেছেন আরও কিছু পরীক্ষা কেন্দ্রে এই বিড়ম্বনা সৃষ্টি হয়েছে।