গো-খাদ্যের দাম দ্বিগুণ, বিপাকে রংপুরের খামারীরা

আমাদের প্রতিদিন
2024-04-23 23:13:49

খামার ও দুগ্ধ শিল্প রক্ষায় বাজার নিয়ন্ত্রণের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রংপুর নগরীসহ বিভাগের আট জেলায় গো-খাদ্যের দাম দ্বিগুণ হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন খামারী ও গৃহস্থরা। দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকে গরুর খাবার পরিমান কমিয়ে দিয়েছেন। এতে গরুর স্বাস্থ্যহীনতা এবং দুধের উৎপাদন কমে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। 

এদিকে গো-খাদ্যের দাম দ্বিগুণ হওয়ার কারণে মারাত্মক সংকটে পরেছেন এর সাথে জড়িত খামারী ও গৃহস্থরা। এরই মধ্যে রংপুর নগরীসহ বিভাগের আট জেলায় প্রায় ৩০ শতাংশ খামার বন্ধ করে দিয়েছেন খামারীরা। অনেকেই পেশা বদল করেছেন এমনটা জানিয়েছেন ডেইরি এসোসিয়েশন।

ডেইরি ফার্মার্স এসোসিয়েশনের দাবি গো-খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধির কারণে ৩০ শতাংশ খামার ইত্যোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক খামারী তাদের গরু বিক্রি করে ভিন্ন পেশা গ্রহণ করেছেন। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য প্রাণি সম্পদ বিভাগ খামরী ও গৃহস্থদের গরুকে কাঁচা ঘাস বেশি করে খাওয়ানোর পরামর্শ দিচ্ছেন। এমন পরিস্থিতি উত্তোরণে খামার ও দুগ্ধ শিল্প রক্ষায় দ্রæত বাজার নিয়ন্ত্রণের দাবি দাবি করেছেন খামারি, গৃহস্থ, ডেইরি এসোসিয়েশন ও সচেতন নাগরিক সমাজ।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, গত করোনার থেকে কিছুদিন পর পর গো-খাদ্যের দাম বাড়ছে। সম্প্রতি দাম বেড়ে বিগুণ হয়েছে। এমন দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় খামারগুলো বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। বর্তমানে বাজারে এক কেজি মোটা চাল ৪২ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে গো খাদ্য এক কেজি গমের ভুষির দাম ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। এতে মানুষের খাদ্যের চেয়ে গরুর খাদ্যের দাম বেশি।

একইভাবে গমের ভুষি ৩২ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হলেও এখন তা ৫৫/৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ৩০ টাকার খৈল ৮০ টাকায়, ২০ টাকা ভুট্টার গুড়া ৩৫/ ৪০ টাকা, ২০ টাকার খুদ ৩০-৪০ টাকা, মাস কালাইর ভূষি ৩০ টাকা থেকে বেড়ে ৬০ থেকে ৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শুকনো খড়ের দামও বেড়েছে প্রতি মনে ৫০ থেকে ৮০ টাকা। এভাবে প্রতিটি গো-খাদ্যের দাম দ্বিগুণ বেড়েছে।

নগরীর সাতমাথা এলাকার গরুর খামারি সুজন পাটোয়ারী ও আফজাল হোসেনসহ কয়েকজন খামারি বলেন, দাম বৃদ্ধির কারণে তাদের গবাদি পশুকে প্রয়োজনীয় খাবার দিতে পারছেন না। এতে গরুর স্বাস্থ্য কমে যাচ্ছে। পাশাপাশি দুধের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। এতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

দুধের ওপর নির্ভরশীল ব্যবসায়ীরা বলছেন, গরুর দুধের উৎপাদন কমে গেলে বাজারে বিরুপ প্রভাব পড়বে। এতে বাজারে দুধের দাম বাড়তে পারে। দুধের দাম বাড়লে দুধের ওপর নির্ভরশীল যেসব খাদ্যপণ্য রয়েছে সেসবের দাম বাড়বে।

নগরীর তামপাট এলাকার নুরুল ইসলাম, শাহ আলম ও কেরানীরহাট এলাকার সাইফুল ইসলাম সহ কয়েকজন খামারী ও গৃহস্থ জানান, বর্তমানে বাজারে নিত্যপণ্যের মূল্য যেভাবে বাড়ছে তাতে সংসার চালাতেই তারা হিমহিম খাচ্ছেন। তার ওপর গো-খাদ্যের দাম দ্বিগুণ বেড়ে যাওয়ায় তারা গরুকে ঠিক মত খাবার দিতে পারছেন না। কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে যারা গরু পালন করছেন তারা রয়েছে সবচেয়ে বড় বিপাকে। কিছু লাভের আশায় তারা না পারছেন গরু বিক্রি করতে না পারছেন গরুকে ঠিক মত খাওয়াতে। তারা মারাত্মক সংকটে পরেছেন। তারা খামার ও দুগ্ধ শিল্প রক্ষায় জরুরীভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণের দাবি করেছেন।

রংপুর বিভাগীয় ডেইরি ফার্মার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি লতিফুর রহমান মিলন বলেন, রংপুরে সমিতিভুক্ত ধামারী রয়েছে ৫ হাজারে ওপর । সমিতির বাইরে খামারী রয়েছে ১৮ থেকে ২০ হাজার। গো খাদ্যের মূল্য দ্বিগুণের বেশি বাড়ায় রংপুরের প্রায় ৩০ শতাংশ খামার বন্ধ হয়ে গেছে। গো-খাদ্যের দাম বাড়লেও গরুর দুধের দাম তুলনামূলকভাবে বাড়েনি। এর ফলে অনেক খামারী এই পেশা বদল করেছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই এখন বেকার অবস্থায় রয়েছে। এর ফলে বিরুপ প্রভাব পড়েছে গবাদি পশুর ওপর।

রংপুর প্রাণিসম্পদ বিভাগীয় অফিসের পরিচালক ডাঃ মোঃ আব্দুল হাই সরকার বলেন, গোপনে খাদ্যের দাম বাড়ার কারণে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়তেই পারে। তবে এবার প্রচুর ভুট্টার আবাদ হয়েছে। আশা করি বাজারের ভুট্টার গুড়ার দাম কমে যাবে। সেই সাথে তিনি খামারি ও গৃহস্থদের গরুর খাদ্য নিজেদের উৎপাদন করা পরামর্শ দিয়েছেন।