দিনাজপুরে ‘নমলা’ ধানে পোকার আক্রমণ

আমাদের প্রতিদিন
2024-04-18 14:06:44

দিনাজপুর প্রতিনিধি:

কৃষকের ভাষায় যে ফসলটি মৌসুমের প্রথম দিকেই ঘরে তোলা হয় সেটিকে বলা হয় ‘আগুর’, আর যেটি সবশেষে তোলা হয়-সেটিকে বলা হয় ‘নমলা’। চলতি বোরো মৌসুমে এই ‘নমলা’ ধানক্ষেতে পোকার আক্রমন হওয়ায় বিপাকে পড়েছে কৃষক। জমির এই ধান রক্ষায় বিভিন্ন প্রকার কীটনাশক প্রয়োগ করছেন উদ্বিগ্ন কৃষকরা। তবে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, মৌসুমের শেষের দিকে ক্ষেতের ধান পরিপক্ক হওয়ায় উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব মতে, দিনাজপুর জেলায় চলতি বোরো মৌসুমে বোরো ধানের আবাদ করা হয় ১ লাখ ৭৩ হাজার ৭৯০ হেক্টর জমিতে। ইতিমধ্যে ৮০ শতাংশ বোরো ধান কর্তন করেছে কৃষকরা। এখনও জমিতে রয়েছে ২০ শতাংশ ধান। আর এসব ধানের অধিকাংশই রয়েছে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ, কাহারোল, বিরল, বোঁচাগঞ্জ, খানসামা, সদরসহ বিভিন্ন উপজেলায়। জমিতে থাকা এই ২০ শতাংশ ধান অধিকাংশই রয়েছে কাঁচা ও আধাপাকা অবস্থায়। জমির এই ধানক্ষেতে দেখা দিয়েছে কারেন্ট পোকাসহ বিভিন্ন পোকার। পোকার আক্রমণে ধানের শীষ শুকিয়ে ধান চিটা হয়ে যাচ্ছে। আবাদের শেষ মুহুর্তে এসে ধানের এই অবস্থায় উদ্বিগ্ন কৃষকরা। এসব এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, কারও ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ার পথে, আবার কেউ কেউ ধান রক্ষায় জমিতে কীটনাশক স্প্রে করছেন।

দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ পলাশবাড়ী গ্রামের কৃষক  হাসেন আলী শেখ বলেন, কয়েক দিন আগে ধান ভালো ছিল, গত কয়েকদিন ধরে বিরূপ আবহাওয়ার কারনে ধানক্ষেতে পোকার আক্রমণ শুরু হয়েছে। ধান চাষে হালভাড়া, মেশিন ভাড়া,সার,বিষ, রোপণ করা সহ আমার সব মিলে বিঘায় ২৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন পোকার আক্রমণের কারনে খরচের টাকা মনে হয় উঠবে না। 

একই এলাকার কৃষক বাবু লাল মার্ডী বলেন, আমি ৫০ শতক জমিতে ধান আবাদ করেছি। এখন পর্যন্ত  প্রায় ২৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে কিন্তু এখন পোকার আক্রমণের কারনে বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে। আমি এমনিতেই অনেক কষ্ট আর পরিশ্রম করে ধান  আবাদ করেছি কিন্তু পোকার আক্রমণে অর্ধেক টাকা ঘরে আসবে না এতে আমি খুব ক্ষতিগ্রস্ত হবো।

মোহম্মদপুর ইউনিয়নের তেলীপাড়া গ্রামের আব্দুল কাদের জানান, আমি নৈশ্যপ্রহরীর চাকুরী করার কারনে চার পাচ দিন ধানক্ষেতে যেতে পারিনি। এর মধ্যে পোকা আক্রমন করে আমার ক্ষেতের অর্ধেক ধান নষ্ট করে ফেলেছে । বর্তমানে কারেন্ট পোকার আক্রমন খুব বেড়ে গেছে। এখন কোন রকমে বিষ দিয়ে বাকী ধান বাচানোর চেষ্টা করছি। একই গ্রামের দেলোয়ার এবং রবিনের ২৫ শতক করে জমির ধানের একই অবস্থা।

সুজালপুর ইউনিয়নের উত্তর সুজালপুর গ্রামের কৃষক সফিকুল ইসলাম জানান, কারেন্ট পোকার আক্রমনে আমার ধান ক্ষেতে এ পর্যন্ত ৬ বার বিষ দিয়েছি, একবিঘা জমিতে প্রতিবার বিষ দিতে প্রায় ১ হাজার টাকা লাগে।

এ ব্যাপারে দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ নুরুজ্জামান জানান, ইতিমধ্যেই জেলার ৮০ শতাংশ বোরো ধান ঘরে তুলেছে কৃষক। অনুকুল আবহাওয়ার কারনে এবার দিনাজপুরে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে অবশিষ্ট যে ধান এখনও জমিতে রয়েছে, কিছু কিছু এলাকায় সেই ধানে পোকার আক্রমনের খবর পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, যেহেতু ধান পরিপক্ক হয়েছে, সেহেতু পোকার আক্রমনে তেমন ক্ষতি করতে পারবে না। এ নিয়ে কৃষকদের উদ্বিগ্ন না হওয়ার কথা জানিয়ে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে পরামর্শ করে জমিতে কীটনাশক প্রয়োগের কথা জানান তিনি।