পাটগ্রামে পাথর উত্তোলনের মহাউৎসব শুরু হয়েছে !

আমাদের প্রতিদিন
2023-12-02 03:13:02

লালমনিরহাট প্রতিনিধি:

সরকারি নির্দেশ অমান্য করে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় উচ্চ মতাসম্পন্ন ড্রেজার মেশিন (বোমা মেশিন) দিয়ে মাটির গভীর তলদেশ থেকে চলছে পাথর ও বালু উত্তোলনের মহাউৎসব শুরু হয়েছে। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে ভোর রাত পর্যন্ত ওই উপজেলায় দুই শতাধিক বোমা মেশিন দিয়ে এ কাজ চলছে। প্রতি মেশিন থেকে রাত প্রতি ১০ হাজার টাকা করে চাঁদা তোলা হচ্ছে। সেই চাঁদার টাকা অংশভেদে চলে যাচ্ছে সিন্ডিকেটের  প্যাকেটে। অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় প্রশাসনের দুই-একজন কর্মকর্তাকে ম্যাসেজ করে চলছে পাথর উত্তোলনের এ মহাউৎসব।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সন্ধ্যা হলেই পাটগ্রাম উপজেলার ধরলা, সানিয়াজান, সিংগীমারী নদী ও সমতল ফসলি জমি, পুকুর, খালে বসানো হয় ড্রেজার মেশিন । ভূ-গর্ভস্থ থেকে পাথর ও বালু উত্তোলনে নদীগুলোর নাব্যতা এবং গতিপথ বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে এসব নদী নালায় পরিণত হয়েছে। এতে করে শত শত বিঘা ফসলি জমি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার সরকারি, আধা সরকারি ভবন, সড়ক, রেললাইন, বুড়িমারী স্থলবন্দর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সেতু চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। পাথর ও বালু পরিবহনে নিযুক্ত ট্রলি ও ট্রাক চলাচলের কারণে উপজেলার আঞ্চলিক পাকা ও আধাপাকা সড়কসহ চলাচলের বিভিন্ন রাস্তা নষ্ট হয়ে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তর জানান। পাথর ও বালু উত্তোলন বন্ধে দ্রæত কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়া হলে এ উপজেলা থেকে বেশ ক’টি নদী হারিয়ে যাবে বলে আশংকা করছেন অনেকে।

বাউরা এলাকার সাদিকুল ইসলাম বলেন, পাথর ও বালুবাহী ট্রলির কারণে এলাকার সড়ক গুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দ্রæত গতিতে এসব অবৈধ গাড়ি চলায় অভিভাবকেরা সন্তানদেরকে স্কুল কলেজে পাঠাতে ভয়ে থাকেন।

স্থানীয় একজন মেশিন মালিক (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, রাতে পাথর ও বালু তোলার জন্য মেশিন চালু করতে স্থানীয় প্রশাসনকে ১০ হাজার করে টাকা দিতে হয়। না হলে গিয়ে মেশিন ও পাইপ ভেঙ্গে দেয়।

স্থানীয় বুড়িমারী ইউনিয়নের একজন বাসিন্দা জানান, মেশিন চালু হলে স্থানীয় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানালে তাঁরা উল্টো মেশিন মালিকদেরকে বলে দেয়। পরবর্তীতে মেশিন মালিকরা আমাদেরকে নানান ভয়-ভীতি ও হুমকি দেয়। প্রশাসন যদি নিষেধ করে তাহলে কেউ মেশিন চালানোর সাহস পাবে না। প্রশাসনেরই কিছু সদস্যের মধ্যে ভেজাল রয়েছে।

বুড়িমারী ইউনিয়নের বানিয়াডাঙ্গী গ্রামের সামসুল হক বলেন, গত কয়েকদিন হতে ধরলা নদীতে বোমা মেশিন লাগিয়ে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে  ফসলের ক্ষতিসহ আবাদি জমি ভেঙে যাচ্ছে। মেশিন মালিককে বাধা দিয়ে কোনো কাজ হচ্ছে না।

পাটগ্রাম থানার ওসি ফেরদৌস ওয়াহিদ জানান, দুই একজন চুপচাপ করে মেশিন দিয়ে পাথর তুলছে। পুলিশ গেলে পালিয়ে যায়। তবে টাকা নেয়ার অভিযোগটি সত্য নয় বলে তিনি জানান।  লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ জানান, ভূ-গর্ভস্থ হতে পাথর বালু উত্তোলনের কোনো সুযোগ নেই। কেউ যদি তুলে থাকেন তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।