অনুমোদনহীন ভাবে চলছে পাইলট স্কুল এন্ড কলেজ!

আমাদের প্রতিদিন
2024-07-12 10:12:30

বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে শিক্ষার্থী নিহত

ঝুঁকিপূর্ণ ভবণটি স্থানন্তরের চিঠিতেও টনক নড়েনি কর্তৃপক্ষ

মিঠাপুকুর (রংপুর) প্রতিনিধি:

মিঠাপুকুরে ব্যক্তিমালিকানাধীন শঠিবাড়ী পাইলট স্কুল এন্ড কলেজে ৩৩ কেভি ভোল্টে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একজন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ কর্মসূচী পালন করেছে। তাদের দাবি মুখে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ ঘোষণা করেছে প্রশাসন। ২০১৯ সালে স্থাপিত প্রতিষ্ঠানটির নেই কোন অনুমোদন। বিভিন্ন বিদ্যালয়ে নামে শিক্ষার্থী রেজিষ্টেশন ও পরীক্ষা দিয়ে চলেছে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়াও, ঝুঁকিপূর্ণ ভবণটি স্থানন্তর করতে কর্তৃপক্ষকে কয়েকদফা চিঠি দিয়েছিল রংপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১। তারপরও কোন নিয়মনীতিকে তোয়াক্কা না করে চলছে শঠিবাড়ী পাইলট স্কুল এন্ড কলেজ। প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় ৫ বছর ধরে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন আখলাক হোসেন ও তার স্ত্রী রয়েছেন সভাপতির দায়িত্বে। স্বামী-স্ত্রী মিলে প্রতিষ্ঠানটিকে বানিজ্যের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৯ সালে শঠিবাড়ী গোড়বান্দা এলাকায় প্রাথমিক, নিম্ম মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের কার্যক্রম দিয়ে শুরু হয় পাইলট স্কুল এন্ড কলেজ। শঠিবাড়ী কাঁঠালী গ্রামের আখলাক হোসেন প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন। তার স্ত্রী শঠিবাড়ী ডিগ্রী মহাবিদ্যালয়ের প্রভাষক নয়ন তারা রয়েছেন সভাপতির দায়িত্বে। এছাড়া আর কোন নিয়মিত কমিটি ও সদস্য নেই। প্রতিষ্ঠার পর হতে বিদ্যালয়টিতে প্রতিবছর আড়াই শতাধীক শিক্ষার্থী পাঠদান করছে। অনুমোদন না থাকায় তাদেরকে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের মাধ্যমে রেজিষ্ট্রেশন করে পরীক্ষার ব্যবস্থা করেন কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠানটির একটি মাত্র ঝুঁকিপূর্ণ ভবণে পাশদিয়ে চলে গেছে ৩৩ কেভি ভোল্টের একটি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন। রংপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ ওই ভবণটি স্থানন্তরের জন্য কয়েক দফা চিঠি দিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষের কাছে। এই চিঠি কর্ণপাত করেনি তারা। তারপরও ঝুঁকিপূর্ণ ওই ভবণটিতেই কার্যক্রম পরিচালনা করছিল পাইলট স্কুল এন্ড কলেজের মালিকানা পর্যদ।

স্থানীয় বাসিন্দা আমিনুর ইসলাম বলেন, প্রতিষ্ঠানটির উপর দিয়ে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বৈদ্যুতিক লাইন চলে গেছে। ভবণটির তৃতীয় তলা নির্মাণের সময় পল্লী বিদ্যুতের লোকজন এসে নিষেধ করেছিল। তারপরও সেটি নির্মাণ করা হয়েছে। এরফলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একজন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে।

নিহত শিক্ষার্থীর ভাই রুপম হাসান বলেন, আমার ভাই গুরুতর আহতের পর প্রতিষ্ঠানটির কোন ব্যক্তি এগিয়ে আসেনি। স্থানীয়রা তাকে মেডিকেলে ভর্তি করেছে। ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়। আমরা শিক্ষার নামে বানিজ্যকারী কর্তৃপক্ষর দৃষ্টান্তমুলক শান্তি চাই।

শঠিবাড়ী পাইলট স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ আখলাক হোসেন সত্যতা স্বীকার করে বলেন, প্রতিষ্ঠানটির অনুমোদন নেই। তবে পাঠদান করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। এখনও অনুমতি পাইনি। ‘তারপরও বিভাবে চালাচ্ছেন? সার্টিফিকেট পরীক্ষাগুলো কিভাবে হয়?-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিদ্যালয়ের মাধ্যমে রেজিষ্ট্রেশন ও পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। তিনি আরও বলেন, রংপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর এই বৈদ্যুতিক লাইনটি সরিয়ে ফেলতে বলেছিলাম। দু’এক মাসের মধ্যে হয়তো সরিয়ে যেত। এরমধ্যে এমন একটি দূর্ঘটনা ঘটে গেল।

রংপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার হরেন্দ্রনাথ বর্মণ বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবণটি স্থানন্তর করতেপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে আমার কয়েকদফা চিঠি দিয়েছি। কিন্তু তারা বিষয়টি তোয়াক্কা করেনি। এরফলে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন সঞ্চালন লাইনে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনা ঘটেছে। ভবণটি পরিত্যক্ত ঘোষনাকরা না হলে এরকম আরও ঘটনা ঘটতে পারে।

মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, শঠিবাড়ী পাইলট স্কুল এন্ড কলেজের কোন অনুমোদন নেই। তারা কিভাবে শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে আমার জানা নেই। এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর সকল দায়ভার কর্তৃপক্ষের।উপজেলা নির্বাহি অফিসার রকিবুল হাসান বলেন, প্রতিষ্ঠানটির ভবণটি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ।শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পরবর্তি নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত এটি বন্ধ থাকবে।