কাউনিয়ায় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির পুত্রকে নিয়োগ দিতে মরিয়া মাদরাসা সুপার

আমাদের প্রতিদিন
2024-06-27 12:55:17

নিজেস্ব প্রতিবেদক:

রংপুরের কাউনিয়ার রাসুলপুর মোজাহাড়ীয়া দাখিল মাদরাসার সুপারের বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি ও স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতার পুত্রকে গবেষণাগার/ল্যাব সহকারি পদে নিয়োগ দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিধিবিধান উপেক্ষাসহ বিভিন্ন অপতৎপরতার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে দুই প্রার্থী, তিনজন কমিটির সদস্য এবং এলাকাবাসি বিভিন্ন দপ্তরে করেছেন অভিযোগ। এ ঘটনায় ম্যানেজিং কমিটির এক সদস্য আদালতের দারস্থ হয়েছেন। আজ সোমবার ( ৬ নভেম্বর)  শুনানীর দিন ধার্য করেছেন আদালত।

মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দপ্তরে দেয়া লিখিত অভিযোগ এবং আদালতে দেয়া মামলা সূত্রে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, কাউনিয়ার রাসুলপুর মোজাহাড়ীয়া দাখিল মাদরাসায় গবেষনাগার/ল্যাব সহকারি পদে নিয়োগ দিতে চলতি বছরের ২৬ জুলাই পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন মাদরাসা সুপার মোঃ শামসুল ইসলাম সরকার । এতে ৭ জন প্রার্থী আবেদন করেন। যাছাইবাছাইয়ে ১ জনের আবেদনপত্র বাতিল হয়। বাকী ৬ জন আবেদনকারীর আবেদন চুড়ান্ত করা হয়। এরমধ্যে রয়েছেন মাদরাসার সভাপতি ও স্থানীয় কুর্শা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মোঃ আবুল কাশেমের তৃতীয় পুত্র মনিরুল ইসলাম মিঠু, তার কন্যা কামরুন্নাহার আক্তার ও  জামাই মেহেদী হাসান এবং আবুল কাশেমের ঘনিষ্ট হিসেবে পরিচিত ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মোখলেছুর রহমানের পুত্র সোয়াইবুর রহমান নাহিদ।  বাকীরা হলেন স্থানীয় রামচন্দ্রপুর এলাকার আব্দুল কাদেরের স্ত্রী মোছাঃ মনজু খাতুন ও একই এলাকার হোসেন আলীর কন্যা রোকসানা আক্তার। অভিযোগে বলা হয়, মাদরাসাটির সুপার কমিটির সভাপতি ও আওয়ামীলীগ নেতা আবুল কাশেমের পুত্র মিঠুকে ওই পদে নিয়োগ দেয়ার জন্য  আর্থিক লেনদেন করেন। শুধু তাই নয়, কমিটির অন্য সদস্যদের সাথে কোন ধরণের আলোচনা ছাড়াই কৌশলে স্বাক্ষর গ্রহন করেন। এমনকি বিধি বহির্ভূতভাবে নিয়োগ কমিটির সভাপতিও বানান কমিটির সভাপতি ওই আওয়ামীলীগ নেতাকে। বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে প্রতিবাদ করেন কমিটির অন্যান্য সদস্যরা। শিক্ষামন্ত্রণালয়ের গেজেটে দেখা যায় নিজের এবং কোন আত্মীয় স্বজন প্রার্থী থাকলে নিয়োগ কমিটিতে তাকে রাখা যাবে না। ম্যানিজিং কমিটির লোকজন আইনলংঘনের প্রতিবাদ করলে সুপারেনটেনডেন্ট তড়িঘরি করে কমিটির সভাপতি ও আওয়ামীলীগ নেতাকে বাদ দিয়ে নিজের আস্থাভাজন ম্যানেজিং কমিটির সদস্য আব্দুল হামিদকে নিয়োগ কমিটির সভাপতি বানান। এরই মধ্যে নিয়োগ পরীক্ষার জন্য ওই মাদরাসাকেই কেন্দ্র বানিয়ে তারিখ ঘোষণা করেন গত ১৩ অক্টোবর। কিন্তু এডমিড কার্ড ও এসএমএস দেয়া এবং মোবাইল করা হয় হয় শুধুমাত্র কমিটির সভাপতির পুত্র, কন্যা, জামাই এবং ম্যানেজিং কমিটির অপর সদস্য নাহিদের নামে।  অন্য দুইজনকে যাছাই বাছাইয়ে চুড়ান্ত হওয়ার পরেও কার্ড, এসএমএস দেননি এবং মোবাইলে জানান মাদরাসা সুপার। এনিয়ে সেখানে ফুসে উঠেন এলাকাবাসি ও ভুক্তভোগিরা। এলাকাবাসি মানববন্ধনসহ বিভিন্নভাবে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।

এদিকে ১৩ অক্টোবর ওই মাদরাসায় নিয়োগ পরীক্ষা নিতে আসেন ডিজির প্রতিনিধি মাদরাসা বোর্ডের লাইব্রেরীয়ান কাম ডুকুমেন্টেনশন অফিসার মোছাঃ মেহেরুন নেছা। মাদরাসা সুপার সভাপতির পুত্রের নিয়োগ ফাইনাল করার জন্য ওই দিন সকাল ১১ টায় ডিজির প্রতিনিধি মাদরাসা ক্যাম্পাসে পরীক্ষা নেয়ার জন্য আনেন। সেখানে উপস্থিত হন অপর দুই প্রার্থী মনজু খাতুন, রোকসানা আক্তারসহ এলাকাবাসি। এক পর্যায়ে তাদের তোপ ও জেরার মুখে এবং ওই দুই প্রার্থীকে এডমিট কার্ড, এসএমএস ও মোবাইল না করার অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় পরীক্ষা স্থগিত করে চলে যান। কিন্তু তিনি এবং মাদরাসা সুপার পরীক্ষা স্থগিত সংক্রান্ত কোন লিখিত ডকুমেন্ট কোন প্রার্থীর কাছে সরবরাহ করেননি। প্রার্থীরা তার কাছে স্থগিতের চিঠির জন্য গেলেও তিনি দেন নি। 

অভিযোগে আরও বলা হয়, এ ঘটনার  প্রতিবাদে আবারও বিভিন্ন সেক্টরে অভিযোগ দাখিল করেন ভূক্তভোগি প্রার্থী মনজু খাতুন। তারপরেও সুপার সভাপতির পুত্রকে নিয়োগ দেয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আইন উপেক্ষা করে নিয়োগ পরীক্ষার নতুন তারিখ ঘোষণা করেছেন আগামী ১০ নভেম্বর।

নথিপত্রে দেখা যায়, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ডিসি, মাধ্যমিক জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে এই লিখিত অভিযোগ করেছেন কাউনিয়ার রাসুলপুর মোজাহাড়ীয়া দাখিল মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচিত অভিভাবক সদস্য রুহুল আমীন, আব্দুল মালেক ও এনামুল হক, এলাকাবাসি দুলাল মিয়াসহ ২৫ জন এবং যাছাই বাছাইয়ে চুড়ান্ত হওয়া দুই প্রার্থী মনজু খাতুন এবং রোকসানা আক্তার।

এদিকে এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ও দুর্নীতির  অনিয়ম এবং নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত চেয়ে রংপুর সহকারি জজ আদালতে (কাউনিয়া) মামলা দায়ের করেছেন মাদরাসাটির ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য মোঃ আব্দুল মালেক। ওই মামলার শুনানী রয়েছে সোমবার ( ৬ নভেম্বর)।

ওই নিয়োগের যাছাইবাছাইয়ে চুড়ান্ত হওয়া প্রার্থী মনজু খাতুন জানান, সুপারেনটেনডেন্ট সভাপতি ও আওয়ামীলীগ নেতা আবুল কাশেমের পুত্র মনিরুল ইসলাম মিঠুকে চাকরি দেয়ার জন্য টাকা নিয়েছেন।