অনুপস্থিত থেকেও হাজিরা খাতায় নিয়মিত স্বাক্ষর দেন প্রধান শিক্ষক

আমাদের প্রতিদিন
2024-05-07 11:44:34

৪১ দিনের মধ্যে ৬ দিন বিদ্যালয়ে উপস্থিত

রৌমারী (কুড়িগ্রাম)প্রতিনিধি:

৪১ দিনের মধ্যে বিদ্যালয়ে ৬দিন উপস্থিত এবং বাকী ৩৫দিন অনুপস্থিত থাকলেও শিক্ষক হাজিরা খাতায় ঠিকই উপস্থিতি স্বাক্ষর প্রদান করার অভিযোগ উঠেছেন সেই অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মসিহুর রহমান বিরুদ্ধে।

প্রধান শিক্ষকের উপস্থিতির বিষয়ে বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদ সভাপতি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অভিভাবক প্রতিবাদ করলে তাদেরকে বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করেন বলে অভিযোগও উঠেছে। ঘটনাটি কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়নের খেরুয়ারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের উপস্থিতিসহ নানা অনিয়ম, দুনীর্তির, অর্থ আত্মসাত ও যৌন হয়রানির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষে জানালেও কোন ধরণের ব্যবস্থা না নিয়ে প্রধান শিক্ষকের পক্ষে কথা বলেন কতৃর্পক্ষ। এ কারণে প্রধান শিক্ষক এসব করলেও তিনি ভয় ও জবাবদিহিতার মুখোমুখি কোনদিনও হননি।

জানাগেছে, সরকারি চাকুরির ছুটির শর্তানুসারে বৎসরে ২০ দিনের নৈমিত্তিক ছুটি ভোগের বিধান থাকলেও তিনি ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে ২২ অনুপস্থিত ছিলেন। পরে ওই মাসে উপস্থিত হয়ে ২২ দিনের অনুপস্থিতি একদিনেই ২২দিন উপস্থিত দেখিয়ে শিক্ষক হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন প্রধান শিক্ষক মসিহুর।

শিক্ষার্থীদের অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, তিনি ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে যোগদানের পর থেকেই নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসেন না। আমরা তাকে বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও তিনি মাসে তিন চার দিনের বেশি উপস্থিত থাকেন না এবং রুটিনে নির্ধারিত শ্রেণি পাঠদানে অংশগ্রহণ করেন না। এতে বিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ দিনদিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

প্রধান শিক্ষকের অনুপস্থিতি নিয়ে বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদ সভাপতি মো. মুনসুর আহমেদ বলেন, অনুপস্থিতির বিষয়ে বারবার ওই প্রধান শিক্ষককে সতর্ক করলেও তিনি একই কাজ বারবার করে যাচ্ছেন।  তিনি আরও বলেন চিলমারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার (টিও) আবু সালেহ সরকারকে তাঁর অনুপস্থিতি নিয়ে বারংবার অভিযোগ দিলেও তিনি কোন ধরণের পদক্ষেপ নেননি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মসিহুর রহমান বলেন, আমি মাসে এক সপ্তাহ উপস্থিত থাকতে পারি। কারণ বাকিদিনগুলো বিদ্যালয়ের কাজে শিক্ষা অফিসে থাকতে হয় এবং নদী পারাপারসহ নিজের অসুস্থ্যের কথা বলে জানান তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, অনুপস্থিতির বাকিদিনগুলোর স্বাক্ষর একদিনেই করি। কেন করব না সেটা তো আমার ব্যাপার। কারণ বিদ্যালয়ের উপবৃত্তি তালিকাসহ নানা কাজ চিলমারী শহরে এসে করতে হয়। যেখানে চাকুরি করি ব্রহ্মপুত্র নদের চরে। সেখানে তো কম্পিউটার নেই। আর আমার বাড়িও শহরে তাই অনুপস্থিত থাকতে হয়। এটা কোন সমস্যা নয়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (টিও) আবু সালেহ সরকার বলেন, প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে দু’একদিন অনুপস্থিত থাকেন তা সত্য। তবে বাকি দিনগুলো বিদ্যালয়ে নিয়মিত উপস্থিত থাকেন বলে জানান।

প্রধান শিক্ষক মসিহুর নিজেই অনুপস্থিত থাকনে বলে জানিয়েছেন, সেখানে আপনি (শিক্ষা কর্মকর্তা) বলছেন উপস্থিত থাকেন এর সত্যতা সম্পর্কে বলেন, তিনি যদি আপনাকে অনুপস্থিতির কথা বলে থাকেন তাহলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওই বিদ্যালয় আমি নিজেই মনিটরিং করি।

প্রসঙ্গত, অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষককে অপসারণের দাবিতে অভিভাবক ও এলাকাবাসী গত ২৭ ফেব্রুয়ারি মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে এবং তাঁর বিরুদ্ধে সীমাহীন দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, শিক্ষক—অভিভাকদের সাথে অসদাচরণ, যৌন হয়রানিসহ অর্থ আত্মসাৎ'র অভিযোগে চিলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তর বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সরেজমিন তদন্তের জন্য ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। কিন্তু অভিভাবক ও এলাকাবাসীর অভিযোগ তদন্ত নিয়ে গড়িমসি করছেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা।