তারাগঞ্জে যুবক লোকমান হত্যা মামলায় আরো একজন আসামী গ্রেফতার

আমাদের প্রতিদিন
2024-04-30 17:40:27

তারাগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি:

রংপুরের তারাগঞ্জে যুবক লোকমান হোসেন হত্যার মামলায় অভিযুক্ত নছিম উদ্দিন (৬০) নামের আসামীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে রংপুর সদর মমিনপুর বাইশার দোলা নামক স্থান থেকে তাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসে। এর আগে গত ১৪ মার্চ রাতে হত্যা মামলার প্রধান আসামী ফরিদুল ইসলাম ইসলাসহ ৩জনকে গ্রেফতার করে পরের দিন তাদেরকে জেলহাজতে প্রেরণ করেন পুলিশ। ছেলে লোকমানকে পূর্ব পরিকল্পনা করে হত্যা করার অভিযোগ এনে গত ১৪ মার্চ বিকালে ৮জনকে আসামী করে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন লোকমানের মা জোবেদা বেগম।

মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নের খারুভাজ উত্তরপাড়া গ্রামের মনছুর আলীর সঙ্গে তার আপন ছোট্ট ভাই মতিয়ার রহমান ও বড়ভাই নছিম উদ্দিনের সঙ্গে দীর্ঘদিন থেকে জমি—জমা নিয়ে রিবোধ চলে আসছিল। ইতিপূর্বে আসামীরা জমি—জমা সংক্রান্ত পূর্ব শক্রতার জের ধরে মনছুর আলী ও তার স্ত্রী এবং দুই ছেলেকে সময় সুযোগে খুন জখম করে লাশ গুম করার হুমকি প্রদান করে আসছিলেন। এরই প্রেক্ষিতে গত ররিবার (১০ মার্চ) মনছুর আলীর ছেলে ওবাইদুল ইসলাম ইসলাম (২৪) ও লোকমান হোসেন (২১) দিন মজুরের কাজ শেষে বাড়িতে ফেরেন। ওইদিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে দিনমজুরের টাকা আনতে স্থানীয় সেন্টারের হাট বাজারে যান তারা। রাত ৯টার দিকে দিনমজুরের টাকা পেয়ে বড়ভাই ওবাইদুল বাড়িতে চলে আসেন। এরপর রাত ১০ টার দিকে লোকমান হোসেন অসুস্থ মায়ের খাওয়ার জন্য পান নিয়ে বাড়িতে এসে  মা জোবেদার ঘরে ঢুকে তার টেবিলে পান রেখে মোবাইলে কথা বলতে বলতে বাড়ি থেকে রেড়িয়ে যায়। রাত দেড় টার পরেও লোকমান হোসেন বাড়িতে না ফেরায় বড় ছেলে ওবাইদুল ইসলামকে ডেকে তার মা জোবেদা বেগম লোকমানের মোবাইলে ফোন দিতে বলেন। লোকমানের মোবাইলে ফোন দিয়ে ফোন বন্ধ পাওয়ায় রাতে পরিবারের লোকজন লোকমানের খোঁজ করতে থাকেন। ১১ মার্চ সারাদিন আত্নীয় স্বাজনসহ এলাকায় লোকমানের কোন খোজঁ—খবর না পাওয়ায় ওইদিন সন্ধ্যায় মৌখিকভাবে লোকমানের বড়ভাই ওবাইদুল তারাগঞ্জ থানায় অবগত করেন। সন্ধ্যার পরে লোকমানের বড়ভাই ওবাইদুল ইসলাম টর্চলাইট নিয়ে তাদের বাড়ির ২০০গজ দুরে খারুভাজ নদীর দিকে যেতে থাকলে আসামীগণ ওবাইদুলের উপস্থিতি টের পেয়ে লোকমানের লাশ নদীর পানিতে ভাসমান অবস্থায় পাওয়া গেছে বলে চিৎকার করতে থাকেন। এসময় লোকমানের বড়ভাই ওবাইদুল ইসলামসহ গ্রামের লোকজন ছুটে গিয়ে দেখতে পারেন যে আসামীরা লোকমানের লাশ ধরে টানা হেচড়া করছেন। এ ঘটনায় স্থানীয়রা পুলিশকে অবগত করলে পুলিশ ঘটনাস্থানে গিয়ে লাশ উদ্ধার করার পর লাশের সুরতহাল রিপোর্ট শেষে লোকমানের লাশ রাতেই থানায় নিয়ে আসেন। পরের দিন সকালে লাশের ময়না তদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে  প্রেরণ করে ওইদিন বিকালে ময়না তদন্ত শেষে লোকমানের পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করেন। ছেলেকে হত্যার অভিযোগ এনে ১৪ মার্চ বিকালে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ৮জনকে আসামী করে লোকমানের মা জোবেদা বেগম থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় পুলিশ ওইদিন রাতেই অভিযান চালিয়ে মামলার প্রধান আসামী ফরিদুল ইসলাম (৩৪)সহ অপর আসামী তকছিরুল ইসলাম (২০) ও ফেরদৌস আলম (৩৭) কে গ্রেফতার করেন । 

গতকাল বুধবার বিকেলে তারাগঞ্জ থানার ওসি সিদ্দিকুল ইসলামের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, হত্যা মামলার প্রধান আসামীসহ ৩জনকে গ্রেফতারের পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদের বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে ৭দিনের রিমান্ডের জন্য আবেদন করা হলে ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন। আসামীদের রিমান্ডে নেয়ার পর বেশ কিছু তথ্য বেড়িয়ে এসেছে। গত মঙ্গলবার অপর এক আসামীকে গ্রেফতারের মধ্যে দিয়ে এই হত্যা কান্ডের ৪জন আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।  মামলার তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।