রংপুরে সরকারী বিভাগীয় গণগ্রন্থাকার উন্নয়নের ছোঁয়ায় এগিয়ে যাচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক:
রংপুর বিভাগীয় গণগ্রন্থাগার (সরকারি প্রতিষ্ঠান) যার প্রতষ্ঠাকাল ১৯৮২ সাল হলেও ভবন উদ্বোধন হয় ১৯৯১ সালে। তিন তলা বিশিষ্ট ভবনটি ১১,৮১১ বর্গফুটের ভবনের ১ম তলায় রয়েছে সাধারন পাঠকক্ষ, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্ণার, পুরুষদের নামাজ ঘর, বাথরুম, অফিস কক্ষ। ২য় তলায় রয়েছে পত্র-পত্রিকার কক্ষ, শিশু কর্ণার, স্টোক রুম, মহিলাদের বাথরুম ও নামাজ ঘর। ৩য় তলায় রয়েছে সেমিনার কক্ষ, স্টোক রুম, প্রক্রিয়া করণ শাখা। যা রংপুর টাউন হলে অবস্থিত, ১জন উপ-পরিচালকের নিয়ন্ত্রনে ১৩ জন কর্মকর্তা কর্মচারী দ্বারা পরিচালিত হয়ে আসছে।
অফিস সূত্রে জানা যায়, রংপুর বিভাগীয় গণগ্রন্থাগারে ৫৫ হাজারের বেশী বই রয়েছে (যাতে রয়েছে বাংলা, আরবি, ইংরাজিসহ অন্যান্য বহুরকম বই)। পত্র-পত্রিকার মধ্যে দৈনিক ইত্তেফাক, জনকন্ঠ, সংবাদ, প্রথম আলো, ইনকিলাব, যুগান্তর, সমকাল, মানবজমিন, ভোরের কাগজ, যুগের আলো, ডেইলি স্টারসহ ১১ রকমের পত্রিকা। এছাড়াও সাপ্তাহিক, অনন্যা, আনন্দ ভুবন, মাসিক মদিনা, কারেন্ট এ্যাফেয়ার্স, কম্পিউটার জগৎ, রহস্য পত্রিকা, সাপ্তাহিক বিজ্ঞাপণ, সরগম, ইত্তরাধিকারসহ ১০ রকমের সাময়িকী।
পাশাপাশি ২য় তলার স্টোরে সংরক্ষিত রয়েছে ১৯৯০ সাল হতে ২০১৭ পর্যন্ত প্রকাশি দৈনিক বাংলা, ১৯৯৭ সাল হতে ২০০০ পর্যন্ত বাংলা বাজার পত্রিকা, ২০০১ হতে বর্তমান পর্যন্ত প্রথম আলো পত্রিকা হতে বাধাঁনো বই রয়েছে যা যে কোন সময় পাওয়া যাবে। পাশাপাশি সাপ্তাহিক বিচিত্রা ১৯৮৫-৮৭ পর্যন্ত, সাপ্তাহিক রোববার ১৯৯৭-২০০৬ পর্যন্ত বাধাঁই করে সংরক্ষণ রয়েছে। রয়েছে ২০২২ সাল পর্যন্ত গেজেটের সমস্ত দলিল। যা যে কেউ যে কোন সময় গেলেই তথ্য পাবেন। ৩য় তলার স্টোরে রয়েছে বইয়ের পাশাপাশি ১০০ দুর্লভ ছবি।
গণগন্থাগারে পাঠক প্রতিদিন গড়ে ১০০-১২০ জন, গ্রন্থাগারের ল্যান্ডিং সিস্টেম চালু আছে সেখানে সদস্য সংখ্যা রয়েছে রেজিস্টার অনুযায়ী ৫৩৪ জন। গণগ্রন্থাগারে বই পড়ার পাশাপাশি দুরুত্বতার কারণে রংপুরে নিবন্ধিত বেসরকারী পাঠাগার সংখ্যা রয়েছে ৬২টি ( যেখানে গণগ্রন্থাগার হতে সার্বিক সহযোগীতা ও পরামর্শ প্রদান করা হয় ও পরিচালিত করা হয়)।
৫ ফেব্রæয়ারী জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস ছাড়াও ৭টি জাতীয় দিবসে গণগ্রন্থাগার আয়োজিত বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করা হয়। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে রচনা, চিত্রাংকন, গল্প, হাতের সুন্দর লেখা, বই পাঠ প্রতিযোগীতা করে অনুষ্ঠান করে অতিথিদের মাধ্যমে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। গণ গ্রন্থাগারে রয়েছে ইন্টার্নেট ব্যবস্থা, ২টি ইনফরমেশন কিয়ক্স যেখানে সব রকম তথ্য পাওয়া যাবে। পাশাপাশি ১৬টি সিসি ক্যামেরা দ্বারা রয়েছে নিরাপত্তা বেষ্টনী।
সরকার সারা বাংলাদেশে ৭১টি সরকারী গণগ্রন্থাগার স্থাপন করেছেন যেখানে রয়েছে মনের খোরাক। এর মধ্যে রংপুর বিভাগীয় গণগন্থাগারে আজ উন্নয়নের ছোঁয়ায় ভরে গেছে ই-বুক ছাড়া মানুষকে বরাবরই বইএর উপর নির্ভরশীল হতে সব না হলেও কিছুটা বইয়ের যোগান দিয়ে আসছে গণগ্রন্থাগার গুলোন পাশাপাশি বেসরকারি পাঠাগার গুলোন।
উল্যেখযোগ্য এখানে বই ধার নেয়া ভুলের মাসুল জরিমানা ছাড়া সকল সেবা বিনামূল্যে। বই ধার নেয়ার ক্ষেত্রে বিনামূল্যে ফরম নিয়ে ফেরতযোগ্য সাধারন সদস্য ১০০০, ছাত্র-ছাত্রী ৫০০, শিশুদের ২০০ ও নবায়ন ফি ৫০ (বাৎসরিক) টাকা জমা সাপেক্ষে বই ধার নিতে হবে। সময়মত বই ফেরত না দিলে জরিমানা গুনতে হবে। তাছাড়া বাকি সকল সেবা বিনামূল্যে প্রদান করে আসছে গণগ্রন্থাগার।
জানতে চাই আবু তালেব (৭০) বলেন, আমি গন্থাগারের শুরু লগ্ন হতে আজ অবধি রয়েছি। আমার সময় কাটানো মানে গ্রন্থাগার। গ্রন্থাগারের শুরুতে রাধাবল্লভে অফিস ছিলো সেখানেও আমি ছিলাম। এখানে বই, পেপারের সাথে সময় কাটাতে কাটাতে কখন সময় চলে যায় বলতে পাই। সচেতনতা মূলক ও স্বাস্থ্যের বই বাড়ালে আমাদের উপকার হতো। চাকরি হতে অবসর নেয়ার পর হতে গ্রন্থাগার হয়েছে আমার সব। এখানে রোকেয়া কর্ণার হলে ভালো হতো। আমাদের জন্য সিনিয়র সিটিজেন কর্ণার আলাদা করে হলে ভালো হতো, জুনিয়রদের সাথে আমাদের মেলে না তাই অনুরোধ করছি আমাদের আলাদা ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।
আরিফুল ইসলাম, শাফিউল আলমসহ কয়েকজন বলেন, এখানে আসলে সারা বিশ^কে হাতের কাছে মনে হয়। আমরা এখানে প্রতিনিয়ত আসি সময়ও কাটে মনের খোরাকও মেটে। এখানে কয়েক আইটিমের পেপার আছে পেপারের পরিমান বাড়ালে ভালো হতো।
১০ম শ্রেণীর অমনতী জানায়, আমাকে এখানে আসতে খুব ভালো লাগে তাই বই পড়তে চলে আসি, আমি সাধারনতো রহস্যময়ী গল্প পড়তে খুব ভালোবাসী। এখানে চলে আসি বই পড়ার জন্য। তবে এখানে বই কম তাই রহস্যের বই বাড়ালে ভালো হতো, এসে পড়তে পারতাম।
এছাড়াও গ্রন্থাগারের পাঠক তাসমিন, রতন সরকার, পলাশ, মাসুদ, আরিফ, মোরশেদ, মাহফুজা, মারুফাসহ বেশ কয়েকজন অভিযোগের সূরে বলেন- আমরা এখানে পড়াশুনায় মনোযোগ দিতে পারিনা। কেননা গ্রন্থাগারের পাশে বিভিন্ন সংগঠন ও ফাকা মাঠ রয়েছে যেখানে প্রতিনিয়ত বিকট শব্দে গান-বাজঁনা ও মাইকে আলোচনা লেগেই থাকে শব্দ দুষনের কারণে আমরা সমস্যায় পড়ে যাই। এর সু-ব্যবস্থা নিতে পারলে আমাদের জন্য উপকার হতো।
আরো কয়েক জনের অভিযোগের সারমর্ম এইযে, এখানে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযোদ্ধা কর্ণার, সিনিয়র সিটিজেন কর্ণার, বেগম রোকেয়া কর্ণার, রংপুর কর্ণার বিশেষ প্রয়োজন এগুলো হলে আমরা সকলে প্রফুল্য মনে বিনোদন করতে পারবো।
এ ক্ষেত্রে অফিস সূত্রে জানা যায়, ভবনটি ছোট হওয়ার কারণে এ সব কিছু সম্ভব হচ্ছেনা। আমাদের অফিসের দক্ষিন পাশসহ পাশে ভবন বাড়ানো সুযোগ রয়েছে। সেক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয় সহযোগীতা করলেই সম্ভব হবে।
গণগ্রন্থাগারের সহকারি পরিচালক আবেদ হোসেন বলেন, সরকারী গণগ্রন্থাগার জেলা পর্যায় হতে এখন বিভাগীয় গণগ্রন্থাগার হয়েছে। আমাদের এখানে এখানে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযোদ্ধা কর্ণার, সিনিয়র সিটিজেন কর্ণার, বেগম রোকেয়া কর্ণার, রংপুর কর্ণার থাকলে ভালো হতো আমরা আলাদা করতে পারিনি তবে ভবন বৃদ্ধি হলে করা হবে। আমরা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছি দেখি কি হয়। আমাদের বই একটি সিলেকশন কমিটি আছে সেখান হতে সিলেকশন করে পাঠানো হয়। যেহেতু এটা গণগ্রন্থাগার সেহেতু সকলে বেশী কিছু না পেলেও কিছু করে চাহিদা পূরণ হয়, সকলের সকল আশা পূরণ করা সম্ভব না। প্রত্যেকটা সাবজেক্ট এর বই এখানে রয়েছে। আমাদের পাঠক আমজনতা সকলেই কিছুনা কিছু তথ্য পাবে। আমরা এগিয়েছি সকলের সহযোগীতায় সামনে আরো এগিয়ে নিয়ে যাব।