অবরোধে মাঠে নেই রংপুর বিএনপির নেতাকর্মী:দলীয় কার্যালয়ে ঝুলছে তালা

নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিএনপির ডাকা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ ঢিলেঢালাভাবে পালিত হয়েছে। মাঠে ছিল না বিএনপিসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। গত দুইদিনে অবরোধের সমর্থনে মিছিল কিংবা কোনও সভা-সমাবেশ দেখা যায়নি দলটির নেতাকর্মীদের। বন্ধ ছিল মহানগর ও জেলা কার্যালয়। নগরীর গ্র্যান্ড হোটেল মোড়স্থ কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে সেখানে তালা ঝুলছে। গত ৯দিন ধরে দলটির কার্যালয় বন্ধ অবস্থায় রয়েছে। কোন নেতাকর্মী আসছে না। হরতাল-অবরোধ কর্মসূচী শুরু থেকেই রংপুরে দলটির এমন নাজুক অবস্থা দেখা গেছে।
তবে দোকানপাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, কল-কারখানা, অফিস-আদালত ও স্কুল-কলেজ খোলা ছিল। দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ। যাত্রী সংকটে দূরপাল্লার বাস চলছে না বলে জানিয়েছে মটর মালিক সমিতি। তবে অভ্যন্তরীণ রুটে বাস চলছে বলে তারা জানিয়েছেন। এ অবস্থায় বিএনপির এই অবরোধ কর্মসূচিকে ব্যর্থ বলছেন রংপুর জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা।
এদিকে গ্রেফতার আতংকে আত্মগোপনে চলে গেছেন জেলা বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের শীর্ষ ও মধ্যম সারির নেতারা। মহানগরের আহবায়ক-সদস্য সচিবসহ অনেকেই কারাগারে থাকায় মধ্যম সারির নেতারা ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না। এর ফলে রংপুরে ঢিলেঢালাভাবে পালিত হয়েছে দুই দফা অবরোধ কর্মসূচী। বাস ছাড়া সকল প্রকার যানবাহন স্বাভাবিক ভাবে চলাচল করেছে।
সোমবার সবচেয়ে বড় বাস টার্মিনাল রংপুর আন্তজেলা বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, অভ্যন্তরীণ রুটের বাস চলাচল করলেও দূরপাল্লার বাস ছাড়ছে না। যাত্রীও কম দেখা গেছে। তবে দোকানপাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, কল-কারখানা, অফিস-আদালত ও স্কুল-কলেজ খোলা ছিল। ট্রেনসহ অটো ও অন্যান্য যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক ছিল।
বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, গত ২৯ অক্টোবর হরতালের দিন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু, সদস্য সচিব মাহফুজুন নবী ডনসহ চার নেতাকে দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। এরপর থেকে নগরীর গ্র্যান্ড হোটেল মোড়ের দলীয় কার্যালয় বন্ধ রয়েছে। কোনও নেতাকর্মী দলীয় কার্যালয়ে আসেন না। মহানগরের দুই শীর্ষ নেতা গ্রেফতার হওয়ার পর তাদের স্থলে শহীদুল ইসলাম মিজুকে মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ও আব্দুস সালামকে সদস্য সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে তাদের কাউকে কার্যালয়ে দেখা যাচ্ছে না। তাদের অনুসারীদেরও কোনও তৎপরতা নেই। জেলা ও মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতারা মোবাইল ফোন বন্ধ রেখেছেন। ফলে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।
যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও রংপুর জেলার সভাপতি নাজমুল আলম নাজু জানান, রংপুর মহানগরীসহ জেলার আট উপজেলার প্রত্যেক ইউনিয়নে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের বাড়িতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। হাজার হাজার নেতাকর্মী বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তারপরেও শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচী পালিত হচ্ছে।
রংপুর জেলা বিএনপির আহবায়ক সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন,কয়েকটি সাজানো ঘটনায় মামলা দায়ের করে দলের নেতাকর্মীদের ওসব মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠাচ্ছে পুলিশ। এ অবস্থায় অবরোধে মাঠে নেই দলটির নেতাকর্মীরা। তবে শান্তিপূর্ণভাবে অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে সাধারণ মানুষ এমনটাই তিনি দাবি করেন।
রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডল বলেন ‘২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশের নামে বিএনপির তাÐব, পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা, সাংবাদিকদের ওপর হামলা, প্রধান বিচারপতির বাসভবন ভাঙচুর এবং যানবাহনে আগুনসহ ধ্বংসলীলার ঘটনায় তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে সাধারণ মানুষ। ফলে তাদের ডাকা অবরোধ কেউ মানছে না। এজন্য অবরোধ কর্মসূচি পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাশেম বলেন, ‘মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পাড়ামহল্লা এবং সড়কে পাহারা বসিয়েছেন। বিএনপিকে সন্ত্রাস-নৈরাজ্য করতে দেওয়া হবে না। আমরা তাদের মাঠে প্রতিরোধ করবো।’
রংপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি এ-মিডিয়া) মো. ইফতেখায়ের আলম জানিয়েছেন, ‘যেকোনো নাশকতা প্রতিরোধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। জেলার বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। কোনও ধরনের অরাজকতা কেউ করলে কঠোর হাতে দমন করা হবে বলে তিনি হুমিয়ারি দেন।