রংপুরের ছয়টি আসনে আ.লীগের একাধিক মাঠে, নিরব বিএনপি\ জৌলুস নেই জাপায়

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন
এরশাদের মৃত্যুর পর জাপার অবস্থা আরও নাজুক
ছাড় দিতে নারাজ আ.লীগ, লক্ষ্য উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখা
সরকার পতনের আন্দোলনে বিএনপি
নিজস্ব প্রতিবেদক:
রংপুরকে বলা হতো জাতীয় পার্টির দূর্গ। দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের বাড়ি হওয়াতে এখানে দলটির সাংগঠনিক অবস্থা ছিল অত্যন্ত সুসংগঠিত। প্রতিটি নির্বাচনে দলটির মনোনীত প্রার্থীরা বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন। কিন্তুু সেই দুর্গে ফাটল ধরে বহুদিন আগেই। এরশাদের মৃত্যুর পর দলের অবস্থা আরও নাজুক হয়ে পড়েছে। বিগত সংসদ নির্বাচনসহ স্থানীয় নির্বাচনে যার প্রতিফলন দেখা যায়। এর ফলে দিনকে দিন বদলে যাচ্ছে রংপুরের রাজনীতি।
একসময় রংপুরের ছয়টি আসন জাতীয় পার্টির দখলে থাকলেও এখন রংপুর-১ ও রংপুর-৩ দলটির সংসদ সদস্য রয়েছে। বাকি ৪টি আসন আওয়ামী লীগের দখলে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য থাকায় স্থানীয়ভাবে দলে কিছুটা বিভেদ রয়েছে। তবে আগের চেয়ে এখানে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠন বেশি শক্তিশালী হয়েছে। বেড়েছে নেতাকর্মীসহ সমর্থক ও ভোটার।
রংপুরের ৬টি সংসদীয় আসনে দ্বাদশ নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করতে আওয়ামী লীগ তৎপরতা শুরু করেছেন একাধিক প্রার্থী। ক্ষমতাসীন দলটির স্থানীয় থেকে কেন্দ্রের একাধিক নেতা মাঠে ময়দানে সভা, সমাবেশ ও গণসংযোগ করছেন। এবার তারা মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টিকে আসন ছাড় দিতে নারাজ। তারা সরকারের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে ৬টি আসনে নৌকা মার্কার প্রার্থী দাবি করছেন।
এদিকে দুর্গেই জাতীয় পার্টিতে রয়েছে প্রার্থী সংকট। ৬টি আসনে জাপার কার্যক্রম নেই বললেই চলে। নেতাকর্মীরা ঝিমিয়ে পড়েছেন। কারা নির্বাচন করবেন তা এখন ঠিক হয়নি। আর সরকার পতনের আন্দোলনে মাঠে থাকা বিএনপিও একই অবস্থা। রংপুরে দলটি অত্যান্ত দুর্বল। ফলে তারা নিরব রয়েছে। এর বাহিরেও ইসলামী আন্দোলন, জাসদ, বাসদ, ওয়াকার্স পার্টি, গণফোরাম, কল্যাণ পার্টি, জাকের পার্টি, খেলাফত মসলিস, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, কংগ্রেস, এনপিপিসহ অন্যান্য দলগুলো মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। সব দলেরই নেতারাই নির্বাচন প্রার্থী দেয়া নিয়ে ভাবছেন। চলতি বছরের শেষে অথবা আগামী বছরের শুরুতে সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। আগামী সপ্তাহে তফসীল ঘোষণা করার সম্ভাবনা রয়েছে বলে ইসি সূত্র জানিয়েছে।
রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া) আসনঃ
রংপুর সিটি কর্পোরেশনের ১ থেকে ৮ নম্বর ওয়ার্ড ও গঙ্গাচড়া উপজেলা নিয়ে গঠিত রংপুর-১। এ আসনে স্বাধীনতার পর আটবার জাতীয় পার্টি দুই বার আওয়ামী লীগ নির্বাচিত হয়েছেন। গঙ্গাচড়া আসনের এমপি জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব দল থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত মসিউর রহমান রাঙ্গা। জাতীয় পার্টির দ্ব›দ্ব নিরসন না হলে ওই আসনে জাতীয় পার্টি রাঙ্গার পরিবর্তে অন্য প্রার্থী দিবে। সেক্ষেত্রে রাঙ্গা কী করবেন এটা নিয়েও চলছে আলোচনা। এ আসনে টানা চার মেয়াদে স্থানীয় কোনো নেতা সংসদ সদস্য হতে পারেননি। বহিরাগত প্রার্থীর বড় দলগুলো মনোনয়ন নিয়ে এ অঞ্চলের জণপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। এবার এ অঞ্চলে আওয়াজ ওঠেছে সংসদ সদস্য হতে হবে স্থানীয় লোকজন। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্র্টি আর বিএনপিতে শোনা যাচ্ছে একই রব। এই আসনে বিএনপির সাংগঠনিক ভিত্তি দুর্বল হাওয়ায় ভোটের লড়াই হবে জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের মধ্যেই। আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রাজু, গঙ্গাচড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও উপজেলা চেয়ারম্যান রুহুল আমীন, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবলু। শিল্পপতি সিএম সাদিক স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন অনেকদিন ধরে। জাতীয় পার্টি থেকে এরশাদের ভাতিজা সাবেক সংসদ সদস্য ও হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ এ আসনে মনোনয়ন পাওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। রংপুরের এ আসনে বিএনপির সাংগঠনিক ভিত্তি দুর্বল হলেও মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন গঙ্গচড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি ওয়াহেদুজ্জামান মাবু, রংপুর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি শরীফ নেওয়াজ জোহা, ওলামা দল কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহবায়ক মাওলানা ইনামুল হক মাজেদী ও আলমবিদিতর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোকাররম হোসেন সুজন। এ আসনে রংপুর জেলা নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক খায়রুল আলম বাবুর নির্বাচন করার কথা শোনা যাচ্ছে। এছাড়াও জামায়াত ইসলামীর অধ্যাপক রায়হান সিরাজী স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করবেন বলে জানাগেছে। শিল্পপতি সিএম সাদিক প্রার্থী হবে বলে তার ঘনিষ্টজনরা জানিয়েছেন।
রংপুর-২ (তারাগঞ্জ-বদরগঞ্জ) আসনঃ
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত রংপুর-২ আসন। এ আসনে জাতীয় পার্টি পাঁচবার, আওয়ামী লীগ চারবার ও এক বার বিএনপি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। রংপুর-২ আসন বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আবুল কালাম মো. আহসানুল হক ডিউক চৌধুরী। তিনি পরপর দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এবার তিনি মনোনয়ন পাবেন নাকি অন্য কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হবে এ নিয়ে চলছে আলোচনা। তবে জাতীয় পার্টিও এই আসনে প্রার্থী দিবে এমনটা দাবি করছেন জেলা জাপার নেতারা। এখানের জাপার সাবেক এমপি আনিছুল হক মন্ডল,অধ্যক্ষ আসাদুজ্জামান সাবলু ও অ্যাড মোকাম্মেল হোসেন চৌধুরীর নাম শোনা যাচ্ছে। রংপুর-২- আসনে বিএনপি বরাবরই দুর্বল। তবে বিএনপির দুই সাবেক এমপি মো. আলী সরকার ও পরিতোষ চক্রবর্তী, সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবি গোলাম রসুল বকুল, বিএনপির শিবলী রহমত উল্ল্যাহ, অধ্যাপক আজিজুল ইসলাম, রংপুর মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এ্যাড.মাহফুজ উন নবী ডনের কথা শোনা যাচ্ছে। তারা ভিতরে ভিতরে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন এমনটাই শোনা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নের জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন বদরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ সাবেক চেয়ারম্যান ও কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদ বিশ^নাথ সরকার বিটু, ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি সুমনা আক্তার লিলি ও বদরগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র উত্তম কুমার সাহা ।
রংপুর-৩ (সদর) আসনঃ
রংপুর সিটি কর্পোরেশন ও সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত রংপুর-৩ আসন। এটি বরাবরই জাতীয় পার্টির জাপার দখলে রয়েছে। এ আসনের বর্তমান সাংসদ রয়েছেন প্রয়াত জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ পুত্র রাহগির আল মাহি সাদ এরশাদ। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এ আসনে পরপর চারবার এমপি নির্বাচিত হন। তার মৃত্যুর পর উপ নির্বাচনে তার পুত্র সাদ এরশাদ সাংসদ নির্বাচিত হন। তবে এবার দলীয় নেতাকর্মীরা চাইছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা জিএম কাদের প্রার্থী হোক। তবে তিনি নিজে এই বিষয়ে এখনো কোন কথা বলেননি। অনেকে মনে করছেন এই আসনটি কৌশলের কারণে জাপাকে ছেড়ে দেয়া হবে। তবে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এবার সদর আসন ছাড় দিতে নারাজ। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় নেতা জিএম কাদের যদি শেষ পর্যন্ত প্রার্থী হন তাহলে পাল্টে যেতে পারে সমীকরণ। এর বাহিরে রংপুর মহানগর জাপার সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান এসএম ইয়াসির, যুব সংহতির কেন্দ্রীয় সভাপতি আসিফ শাহরিয়ারের নাম শোনা যাচ্ছে।
এ আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ও সাবেক সাংসদ এ্যাড. হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া, কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক উপদেষ্টা চৌধুরী খালেকুজ্জামান, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবির) পরিচালক অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম, রংপুর মহানগরের সাবেক সভাপতি সাফিউর রহমান সফি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডল।
রংপুরে বিএনপির সাংগঠনিক ভিত্তি এখানে দুর্বল। ভোটের রাজনীতিতে তারা পিছিয়ে। তার পরেও দলটি নির্বাচনে গেলে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন, মহানগর বিএনপির আহবায়ক সামসুজ্জামান সামু, মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক শহিদুল ইসলাম মিজু, প্রয়াত মহানগর বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর হোসেনের স্ত্রী সুফিয়া হোসেন, মহানগর বিএনপির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আশিকুর রহমান তুহিন, তবে বিএনপির একটি পক্ষ চাইছে এখানে বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল প্রার্থী হোক। এছাড়াও গত দুই নির্বাচনের প্রার্থী ও মহানগর বিএনপির সদস্য প্রয়াত মন্ত্রী মশিউর রহমান যাদু মিয়ার কন্যা রিটা রহমানও প্রার্থী হতে লবিং করছেন বলে দলীয় একটি সূত্রে জানা গেছে। দলটির নেতাকর্মীরা জানান, তাদের বর্তমান লক্ষ্য সরকার পতনের। পরে নির্বাচন। সেই নির্বাচনে যাকেই মনোনয়ন দেয়া হোক দলের ত্যাগী ও নিবেদিত পরিবারকে মূল্যায়ন করা হবে বলে মনে করছেন তারা।
এছাড়াও ইসলামী আন্দোলন থেকে এটিএম গোলাম মোস্তফা, বাসদ থেকে আনোয়ার হোসেন বাবলু, কল্যাণ পার্টির মোহাম্মদ ইলিয়াছ, বাসদের আব্দুল কুদ্দুস, জাসদ থেকে গৌতম রায়, সাব্বির হোসেন, খেলাফত মজলিস থেকে তৌহিদুল ইসলাম মন্ডল ও নুর হোসেনের নাম শোনা যাচ্ছে। এর বাহিরেও এনপিপি, জাকের পার্টি ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বিএনএম, কংগ্রেস প্রার্থী দিতে বলে শোনা যাচ্ছে।
রংপুর-৪ (কাউনিয়া-পীরগাছা) আসনঃ
কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসন রংপুর-৪। এ আসনে স্বাধীনতার পর থেকে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করতে না পারলেও ২০০৮ সালের নির্বাচনে ইতিহাস গড়ে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে হারিয়ে বিজয় ছিনিয়ে নেয় শিল্পপতি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ও বর্তমান বাণিজ্যমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা টিপু মুনশি। নৌকা প্রতীক নিয়ে পরপর দ্বিতীয় মেয়াদের এমপি রয়েছেন তিনি। এবারও তিনি মনোনয়ন চাইবেন। স্থানীয় নেতাকর্মীরা সেখানে তার বিকল্প কাউকে দেখছেন না। তবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মনোয়ারুল ইসলাম মাসুদ রংপুর ৪ আসনের জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। এবার বাহিরে রংপুর জজ কোর্টের আইনজীবি রফিক হাসনাইন ও শিক্ষক শহিদুল ইসলাম মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসাবে পোস্টার সাটিয়েছেন। জাতীয় পার্টি থেকে যুমনা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও প্রয়াত এমপি করিম উদ্দিন ভরসার ছেলে সিরাজুল ইসলাম ভরসা, দলটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব শিল্পপতি মোস্তফা সেলিম বেঙ্গল, পীরগাছা উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আবু নাসের শাহ মো. মাহবুবার রহমান এ আসনের মনোনয়ন পেতে জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন। রংপরের এ আসনটিতে বিএনপির অবস্থা আগে থেকেই কিছুটা নড়েবড়ে। কিন্তু বিগত নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও শিল্পপতি এমদাদুল হক ভরসা এক লাখের বেশি ভোট পেয়ে প্রতিদ্ব›িদ্বতায় ছিলেন। তার পিতা রহিম উদ্দিন ভরসা এই আসনে বিএনপির দলীয় সংসদ সদস্য ছিলেন। এবার এমদাদুল হক ভরসা ছাড়াও বিএনপি নেতা কর্ণেল (অবঃ) আব্দুল বাতেন, পেশাজীবি পরিষদের নেতা এ্যাড. শাহেদ কামাল পাটোয়ারী, পীরগাছা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আফসার আলী ও জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক শরিফুল ইসলাম ডালেসের নাম শোনা যাচ্ছে। জামায়াতী ইসলামী থেকে অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন ও এটিএম আযম খান নির্বাচন করবেন। ওয়ার্কার্স পার্টির অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানী, কল্যাণ পার্টির ফয়জুল হক, বাংলাদেশ কংগ্রেসের এমএম হক আকরাম ও সিরাজুল ইসলাম।
রংপুর-৫ (মিঠাপুকুর) আসনঃ
১৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত মিঠাপুকর উপজেলার এ আসনের এমপি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশিকুর রহমান। এই আসনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে বিভক্তি রয়েছে। এমপি আশিকুর রহমান ও উপজেলা চেয়ারম্যান জাকির হোসেনের পৃথক দুটি গ্রæপ পৃথকভাবে দলীয় এবং জাতীয় কর্মসূচি পালন করায় নেতাকর্মীদের মাঝে বিভেদের দেয়াল তৈরি হয়েছে। হামলা-ভাংচুরের ঘটনাও ঘটেছে। এই আসনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হতে পারে। আওয়ামী লীগ থেকে এইচএন আশিকুর রহমান, তার ছেলে রাশেক রহমান, উপজেলা চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সরকার, মোতাহার হোসেন মন্ডল মওলা মনোনয়ন পেতে তদবির করছেন। এছাড়া মিঠাপুকুরে জামায়াত শিবিরের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। তবে এই আসনটিও ছাড় দিতে নারাজ জাতীয় পাটি ও বিএনপি। এখানে বিএনপির যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেনÑ সাবেক সংসদ সদস্য সোলাইমান ফকির, উপজেলা আহ্বায়ক গোলাম রব্বানি, ডা. মমতাজ উদ্দিন, একেএম রুহুল্লাহ জুয়েল ও ইউপি চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ। তবে কেউ কেউ বলছেন এই আসনে জামায়াত প্রার্থী দিতে পারে। জামায়াত নেতা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম রাব্বানী, এনামুল হক, হাফিজুর রহমান প্রার্থী হতে পারেন।তবে এখানে জেলার জাপার সাবেক সভাপতি এস এম ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গীর ও উপজেলা জাপার আহ্বায়ক মেজবাহুল ইসলাম মনোনয়ন পেলে নির্বাচন করবেন এমনটা শোনা যাচ্ছে।
রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসনঃ
একটি পৌরসভা ও ১৫টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত পীরগঞ্জ থেকে নির্বাচিত হয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। পীরগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত রংপুর-৬ আসনে টানা দুই যুগ রাজত্ব করেছে জাতীয় পার্টি। ৩৫ বছর পর নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে এ আসনটি উদ্ধার করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শ্বশুরবাড়ি পীরগঞ্জ। অষ্টম সংসদ নির্বাচনে এই আসনে শেখ হাসিনা জাতীয় পার্টির প্রার্থী নুর মোহাম্মদ মন্ডলের কাছে সামান্য ভোটে পরাজিত হলেও নবম ও দশম সংসদ নির্বাচনে পরপর এমপি হন। তখন থেকেই এ আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে। জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ছাড়াও মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক একেএম ছায়াদত হোসেন বকুল, উপজেলা চেয়ারম্যান ও সাবেক এমপি নুর মোহাম্মদ মন্ডল,শিল্পপতি সিরাজুল ইসলাম সিরাজ। এই আসনটি জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগকে ছাড় দিতে পারে এমনটা মনে করা হচ্ছে। তবে বিএনপির জেলা আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, রংপুর মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম মিজু, পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি শহিদুল ইসলাম মন্ডল সেবু ও জাতীয় পার্টির উপজেলা সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম জাদু ও কেন্দ্রীয় সদস্য মতিন খসরু এই আসন থেকে নির্বাচন করবেন বলে আগাম শোনা যাচ্ছে। বিএনএফের জিএম মজনু সরকার এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী তাকিয়া জাহান চৌধুরী প্রার্থী হবেন।
এব্যাপারে রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক আবুল কাশেম বলেন, সারাদেশের মতো রংপুরেও উন্নয়নের জোয়ার বইছে। মানুষের জীবন যাত্রার দিনবদল হয়েছে। মানুষ ভাল মন্দ বুঝে। কোন আবেগ এবারের ভোটে স্থান পাবে না। রংপুর জেলার ৬টি সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের দখলে রাখার জন্য তৃণমুলের নের্তাকর্মীরা মুখিয়ে আছেন । তারা দিনরাত দলের হয়ে কাজ করছেন।
রংপুর জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব হাজ্বি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, রংপুরে জাতীয় পার্টি আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালি। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি রংপুরের ৬টি আসনেই জয়ের লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামবে।
রংপুর মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বর্তমান কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক ও কাকসুর সাবেক জিএস শহিদুল ইসলাম মিজু বলেন, বিএনপি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহন করবে কিনা না সেটা এখন বলা যাচ্ছে না। কারণ আমরা এখন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে সরকার পতনের আন্দোলনে রয়েছি। তারপরও দল যদি নির্বাচনে অংশগ্রহন করে তাহলে এবার রংপুরে বিএনপি আগের চেয়ে অনেক ভাল ফল করবে বলে তিনি আশাবাদি।