দিনাজপুর প্রতিনিধি:

স্মরণকালের মধ্যে বিপুল সংখ্যক মুসল্লীর অংশগ্রহনে এবার অনুষ্ঠিত হয়েছে দক্ষিন এশিয়ার সর্ববৃহৎ ঈদগাহ দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোর—এ শহীদ বড় ময়দানে দেশের সর্ববৃহৎ ঈদুল ফিতরের জামাত। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল ছাড়াও এই জামাতে এবার অংশ নিয়েছে পাশ^বর্তী দেশ ভারতে বেশ কিছু মুসল্লী। আয়োজকদের দাবী, এবার প্রায় ৬ লাখ মুসল্লী একসাথে নামাজ আদায় করেছে এই জামাতে। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সুষ্ঠু ও শান্তিপুর্ণভাবে বৃহৎ এই জামাতে নামাজ আদায় করতে পেরে খুশী দিনাজপুরসহ দেশ—বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত মুসল্লীরা।

বৃহৎ এই ঈদগাহে বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) ভোর থেকেই সমবেত হতে শুরু করেন মুসল্লীরা। সকাল সাড়ে ৯টা বাজাতে না বাজতে পরিপুর্ণ হয়ে যায় ২২ একর আয়তন বিশিষ্ট ঐতিহাসিক গোর—এ শহীদ ময়দানের বেশীরভাগ অংশ। সকাল ৯টা বাজার পরপরই শুরু হয় নামাজ। বৃহৎ এই জামাতে ঈমামতি করেন মাওলানা শামসুল আলম কাশেমী। নামাজ শেষে দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনা করে করা হয় মোনাজাত। বৃহৎ এই জামাতে সুষ্ঠু ও শান্তিপুর্ণভাবে নামাজ আদায় করতে পেরে খুশী মুসল্লীরা।

এখানে নামাজ আদায় করেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত মুসল্লীরাও। দীর্ঘ পথ পারি দিয়ে এখানে নামাজ আদায় করতে পেরে নিজেদের ভাগ্যবান মনে করছেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত এই মুসল্লীগন।

ঢাকার গাজীপুর থেকে আসা মুসল্লী মজিবর রহমান মিলন বলেন, বৃহৎ এই জামাতের কথা শুনে এবার অনেক কষ্ট করে এই জামাতে নামাজ আদায় করতে এসেছি। বৃহৎ এই জামাতে নামাজ আদায় করতে পেরে নিজেকে সার্থক বলে মনে করছেন তিনি। একই কথা জানান, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা মুসল্লীরাও।

শুধু বাংলাদেশ নয়, দিনাজপুর গোর—এ শহীদ ময়দানের এই ঈদগাহে এবার নামাজ আদায় করতে এসেছেন পাশ^বর্তী দেশ ভারতের বেশ কিছু মুসল্লী। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের গঙ্গারামপুর থেকে আগত মুসল্লী মোঃ ওসমান আলী বলেন, বিভিন্ন টেলিভিশন ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে এই বৃহৎ জামাতের কথা জেনেই নিয়ত করেছি এখানে নামাজ আদায়ের। কিন্তু এখানে এসে দেখছি, যা শুনেছি—তার চেয়েও বেশী মানুষের সমাগম এখানে। এত সংখ্যক মুসল্লীর সাথে এক সাথে নামাজ আদায় করতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছেন তিনি।

নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করায় শান্তিপুর্ণভাবে বৃহৎ এই জামাত সম্পন্ন হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। দিনাজপুরের পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদ জানান, সুষ্ঠু ও শান্তিপুর্ণভাবে নামাজ সম্পন্নের জন্য চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়। শান্তিপুর্ণভাবে নামাজ সম্পন্ন হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেন তিনি।

দিনাজপুর জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ জানান, এবার কানায় মুসল্লীর সমাগম হয় এই ঈদগাহে। সার্বিক ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে বিপুল সংখ্যক মুসল্লী শান্তিপুর্ণভাবে নামাজ আদায় করতে পেরে খুশী তিনি।

বৃহৎ এই জামাতের প্রধান উদ্যোক্তা জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি জানান, স্মরণকালের মধ্যে এবার বিপুল সংখ্যক মুসল্লী নামাজ আদায় করেছে ঐতিহাসিক গোর এ শহীদ ময়দানে। এবার প্রায় ৬ লাখ মুসল্লী একসাথে নামাজ আদায় করেছেন বলে জানান তিনি। শেষ পর্যন্ত সফলভাবে ঈদের জামাত সম্পন্ন হওয়ায় সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন তিনি। মুসল্লীদের জন্য দুটি স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান হুইপ ইকবালুর রহিম।

এই জামাতে নামাজ আদায় করেন, সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম, জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি, জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ, পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদ, দিনাজপুর পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র আবু তৈয়ব দুলালসহ বিভিন্ন সরকারী কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং সর্বস্তরের জনতা। 

উল্লেখ্য, দক্ষিন এশিয়ার বৃহত্তম ঈদগাহ দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোর—এ শহীদ ময়দান। ২২ একর আয়তন বিশিষ্ট এই ঈদগাহে ১৯৪৭ সাল থেকে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হলেও আধুনিক নির্মাণশৈলীতে এই ঈদগাহে বৃহৎ পরিসরে ঈদের জামাত শুরু হয় ২০১৭ সাল থেকে। বৃহৎ এই জামাতে অংশ নেয়ার সুবিধার্থে এবারও বাংলাদেশ রেলওয়ে ব্যবস্থা করে দুটি স্পেশাল ট্রেনের। ঈদগাহে মুসল্লীদের জন্য স্থাপন করা হয় শৌচারগার, ওজুর ব্যবস্থা। বসানো হয় মেডিক্যাল টিম। পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাবসহ বিভিন্ন আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয়ে নেয়া হয় চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।