৬ বৈশাখ, ১৪৩১ - ১৯ এপ্রিল, ২০২৪ - 19 April, 2024
amader protidin

ন্যায্য বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একযোগে কাজ করার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

আমাদের প্রতিদিন
1 year ago
733


ঢাকা অফিস:

জি-২০ জোটের সামনে ছয়টি প্রস্তাব রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, টেকসই বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং গ্লোবাল সাউথ তথা বিশ্বের দক্ষিণের দেশগুলোর উন্নয়নের জন্য এগুলো সম্মিলিতভাবে সমাধান করা প্রয়োজন। ভারতের নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত ‘ভয়েস অব দ্য সাউথ সামিট-২০২৩’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

গুরুত্বপূর্ণ এই শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশকে অতিথি দেশ হিসেবে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানান। খবর বাসসের।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনীতিকে (রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং কোভিড-১৯ মহামারির প্রেক্ষাপট) বিবেচনায় নিয়ে একটি ন্যায্য ও গ্রহণযোগ্য অর্থনৈতিক ব্যবস্থার জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করার এখনই উপযুক্ত সময়।’ সুন্দর ভবিষ্যৎ এবং একটি উন্নত বিশ্বের জন্য একসঙ্গে কাজ করারও আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। টেকসই বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং বিশ্বের দক্ষিণের দেশগুলোর উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী ছয়টি প্রস্তাব জি-২০ জোটের সামনে তুলে ধরেন। প্রথমত, মানবতার বৃহত্তর স্বার্থে বিশ্বশান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হবে। দ্বিতীয়ত, একটি নতুন দৃষ্টান্ত প্রয়োজন যা এসডিজির সমান্তরালে সামগ্রিকভাবে বৈষম্যকে মোকাবিলা করবে। তৃতীয়ত, স্বল্পোন্নত দেশ, জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণসহ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য বিশেষ অর্থায়নের প্রয়োজন, তাদের উত্তরণের সময় এটি পূরণ করতে হবে।

চতুর্থ প্রস্তাবে তিনি বলেন, নারীসহ সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে ‘ডিজিটাল ডিভাইডস’ সেতুবন্ধন রচনার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিনিয়োগ করে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুবিধা নিন যার জন্য অর্থায়ন এবং প্রযুক্তি হস্তান্তর সমর্থন অত্যাবশ্যক।

পঞ্চমত, সব মানুষেরই ভালোভাবে জীবনযাপনের সমান অধিকার থাকা উচিত। তিনি বলেন, ‘বৈশ্বিক সম্প্রদায় দুর্ভাগ্যজনকভাবে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে যেন ভুলবেন না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক মানব উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সাউথ-সাউথ ও ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদার করুন। ‘এখানে, অংশীদার, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি খাত, থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের কাছ থেকে সমর্থন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ,’ যোগ করেন সরকারপ্রধান।

শেখ হাসিনা বলেন, প্রায় পাঁচ দশক আগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘মহান অর্থনৈতিক উত্থান’-এর মুখে একটি ন্যায়সঙ্গত আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিকব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য জরুরি বোধ তৈরি করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী জি-২০ প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং ভারত সরকারকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের বিষয়ে পরামর্শমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে জি-২০ প্ল্যাটফর্মকে আরও অর্থবহ করার জন্য তার দৃঢ় প্রতিশ্রুতিকে আমি গভীরভাবে উপলব্ধি করি।’

‘ভয়েস অব দ্য সাউথ সামিট’ আহ্বান করার জন্য এবং ‘মানবকেন্দ্রিক উন্নয়ন’-বিষয়ক উদ্বোধনী নেতাদের অধিবেশনে তাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও অভিনন্দন জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে তারা টেকসই উন্নয়নের স্তম্ভ হিসেবে মানব উন্নয়নের প্রকৃত মূল্যে বিশ্বাস করেন এবং এটা সরকারের নীতিতে প্রতিফলিত হয়। তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে সহযোগিতায় মানবকেন্দ্রিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করার জন্য আপনার (মোদির) জোরালো উদ্যোগে অবদান রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাম্প্রতিক কোভিড-১৯ মহামারি এবং নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বজুড়ে বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। তিনি আরও বলেন, বিশ্বব্যাপী মন্দা, খাদ্য, জ্বালানি ও সারের সংকট জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে যুক্ত করে মানুষের জীবনকে অসহনীয় করে তুলেছে।

‘এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য বিশ্বস্তরে সাহসী, দৃঢ় এবং সমন্বিত পদক্ষেপের প্রয়োজন যেখানে মনুষ্য নেতৃত্বের এগিয়ে যাওয়াটা চাবিকাঠি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে গত ১৪ বছরে দারিদ্র্যের হার ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে নেমে এসেছে, যেখানে মাত্র এক দশকে মাথাপিছু আয় তিনগুণ হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এলডিসি স্তর থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার জন্য সব শর্ত পূরণ করেছে। এটি সন্তোষজনক যে, বাংলাদেশ বিশ্বের পঞ্চম সেরা কোভিড প্রতিরোধী দেশ এবং দক্ষিণ এশিয়ার সেরা পারফরমার হিসেবে স্থান পেয়েছে।’

আর্থিক এবং অন্যান্য প্রণোদনার জন্য ২ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি মূল্যের ২৮টি প্যাকেজ সরাসরি ৭ কোটি ৩ লাখ লোক এবং ২ লাখ ১৩ হাজার সংস্থার কাছে পৌঁছেছে, বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন,“আমরা একটি শক্তিশালী অর্থনীতির ভিত্তি হিসেবে উন্নত ভৌত অবকাঠামো দিয়ে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়তে আকাক্সক্ষা।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কয়েক দিন আগে বাংলাদেশ রাজধানী ঢাকায় প্রথম মেট্রোরেল সার্ভিস চালু করেছ। খুব শিগগিরই আমরা চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ৩ দশমিক ২ কিলোমিটার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের কাজ শেষ করব, যা দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম।

‘আমাদের জনগণের জীবনযাত্রার মান বাড়ানোর জন্য, আমরা আরও কয়েকটি মেগা প্রকল্প হাতে নিচ্ছি। এসব প্রকল্পের জন্য আমাদের উন্নত বিশ্বের কাছ থেকে ব্যাপক আর্থিক এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রয়োজন। এ বিষয়ে আমি আশা করি, জি-২০ সহায়ক হবে বলে তিনি যোগ করেন।’

সর্বশেষ

জনপ্রিয়