১৫ চৈত্র, ১৪৩০ - ২৯ মার্চ, ২০২৪ - 29 March, 2024
amader protidin

সেলফি তুলতে গিয়ে যুবকের মৃত্যু ‘এখন আমার ছেলে থাকল না কষ্টে বুকটা ফাটি যায়’

আমাদের প্রতিদিন
1 year ago
378


নিজস্ব প্রতিবেদক:

বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় শুক্রবার বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে যাবে বলে বাড়ি থেকে বের হয় মিজানুর রহমান। বলেছিল, এসে ভাত খাবে। বিকেলে খেলার ছলে ট্রেনের ছাদে উঠে মুঠোফোনে সেলফি তুলতে গিয়ে ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে মারা যায় মিজানুর। বেড়াতে গিয়ে ছেলে আর বাড়ি ফিরে এল না। ছেলেকে হারিয়ে দিশাহারা মিজানুর রহমানের মা-বাবা।

মিজানুরের বাবা শাহ আলম গতকাল শনিবার বলেন, ‘কম বয়স হলেও এই ছেলেই সব সময় আমার খোঁজখবর নিত। এই শীতে গায়োত কম্বল জড়ে দিয়া বলতো, “তোমাক জমিত যাওয়া লাগবে না। আমি আলুর খেতোত সার ছিটিয়া আসছি। এখন একটু একটু করে কাজ শিখলে পড়ে এটা কাজে লাগবে।” এখন আমার খোঁজ নেওয়ার ছেলে থাকল না। কষ্টে বুকটা ফাটি যায়।’

ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যাওয়া কিশোর মিজানুর রহমানের (১৩) বাড়ি রংপুরের পীরগাছা উপজেলার কল্যাণী ইউনিয়নের খামার উপাশু গ্রামে। সে স্থানীয় কল্যাণী দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। মিজানুরের বাবা শাহ আলম সড়ক নির্মাণকাজের রোলারমেশিনের চালক। মা মিনারা বেগম গৃহিণী। তাঁদের তিন সন্তান। দুই মেয়ে ও এক ছেলে। বড় মেয়ের বিয়ে হয়েছে আর ছোট মেয়ের বয়স চার বছর। শনিবার সকালে মিজানুরের বাড়ি গিয়ে দেখা গেছে, দূরদূরান্ত থেকে বাড়িতে আত্মীয়স্বজনেরা ছুটে এসেছেন। তাঁরা সান্ত¡না দেওয়ার চেষ্টা করছেন তার মা–বাবাকে।

থানার পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার সন্ধ্যায় দিনাজপুরের পার্বতীপুর থেকে লালমনিরহাটের উদ্দেশে ছেড়ে আসা একটি লোকাল ট্রেন বদরগঞ্জ রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মে এসে থামে। এ সময় মিজানুরসহ চার থেকে পাঁচজন কিশোর ট্রেনের ছাদে উঠে। ট্রেন প্ল্যাটফর্ম থেকে ছেড়ে দিলেও তারা মুঠোফোনে সেলফি তুলতে থাকে। একপর্যায়ে রেলস্টেশনের অদূরে মিজানুর রহমান ট্রেনের ছাদ থেকে নিচে পড়ে যায়। এতে ট্রেনে তার বাঁ হাত ও ডান পা হাঁটুর নিচ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। উপস্থিত লোকজন সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

মিনারা আত্মীয়স্বজনদের বলছিলেন, ‘শুক্রবার স্কুল বন্ধ। তাই কয়েকজন বন্ধু মিলিয়া একটু দূরে ঘুরবার যাইবে। দুপুরে আসিয়া বাড়িত ভাত খাইবে বলেছিল। কিন্তু সন্ধ্যার দিকে খবর পাওয়া গেল, ছেলে ট্রেন থাকি পড়িয়া মারা গেইছে।’ স্বজনেরা বলেন, মিজানুর ভালো ছেলে ছিল। তাঁর মা-বাবাকে দেখে রাখত। ছেলের এমন মৃত্যুতে তাঁর মা-বাবা কাতর হয়ে পড়েছে।

 

সর্বশেষ

জনপ্রিয়