১২ বৈশাখ, ১৪৩১ - ২৫ এপ্রিল, ২০২৪ - 25 April, 2024
amader protidin

জন্মসূত্রে ভারতীয় নাগরিক হয়েও বাংলাদেশে এসে ভূয়া পরিচয়ে সম্পদ দাবি!

আমাদের প্রতিদিন
1 year ago
169


সিনেমার গল্পকে হার মানানো এক অবিশ্বাস্য কাহিনী

মশিহুর রহমান,বিরামপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি:

এক ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশের গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে বেড়াতে এসে এক সনাতন পরিবারের সম্পদের উপর তার লোলুপ দৃষ্টি পড়ে। জন্মসূত্রে ভারতীয় নাগরিক ঐ ব্যক্তি নিজের পরিচয় গোপন করে অবৈধভাবে বাংলাদেশের ভোটার হয়ে অন্যের সম্পদ গ্রাসের চেষ্টায় নেমে এক নাটকীয় ঘটনার জন্ম দিয়েছে। এ নিয়ে ঐ এলাকায় দীর্ঘদিন যাবৎ চলছে নানা গুঞ্জন। 

গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ পৌর এলাকার বুজরুক বোয়ালিয়া মহল্লার মৃত: সুবল চন্দ্র মহন্তের দুই ছেলে রবিন চন্দ্র মহন্ত (৭০) ও স্বপন চন্দ্র মহন্ত (৬৮)দ্বয় জানান, ভারতের দার্জিলিং জেলার শিলিগুড়ি থানার ডাঙ্গীপাড়া গ্রামের মন্টু ঘোষের ছেলে দীপক ঘোষ জন্মসূত্রে ভারতীয় নাগরিক। সে জন্মসূত্রে ভারতীয় নাগরিক স্ত্রী সন্তান নিয়ে উপরোক্ত ভারতীয় ঠিকানায় বসবাস করে আসছে এবং ভারতীয় নাগরিক হিসেবে সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করে আসছে। তার ভারতীয় পাসপোর্ট নং নং৪৭৪৪৫৪৬। সে ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশের গোবিন্দগঞ্জ থানার পৌর এলাকার কালী প্রসাদ মহন্ত সাজুর বাড়িতে আসা যাওয়ার সুবাদে বুজরুক বোয়ালিয়া গ্রামের জোতদার মৃত সুবল চন্দ্র মহন্তের পৈত্রিক জমি-জমা ও সম্পদের উপর তার শ্যান দৃষ্টি পড়ে। এরই ধারাবাহিকতায় দীপক ঘোষ গোবিন্দগঞ্জ থানার বুজরুক বোয়ালিয়া গ্রামের বাসিন্দা হিসাবে বাংলাদেশের এনআইডি ও ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভূক্ত করে। যার এনআইডি নং- ১৯৭০৩২২৩০০৬০০০০০১। বাংলাদেশী এনআইডিতে নিজের ও পিতার নাম পরিবর্তন করে বিশু কুমার মহন্ত, পিতার নাম সুবল চন্দ্র মহন্ত হিসাবে লিপিবদ্ধ করেছে।

                                   অনুসন্ধানী প্রতিবেদন  

ঐ মহল্লার প্রবীণ ব্যাক্তি আব্দুল গোফফার (৭০) বলেন, আলোচিত দীপক ঘোষ ওরফে বিশু কুমার মহন্ত সুবল চন্দ্র মহন্তের কেউ নয়। এমন কি এই গ্রামে তার জন্ম নয় এবং গ্রামের কেউ তাকে চেনেনা।গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভার ১নং প্যানেল মেয়র ও সংশ্লিষ্ট ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহীন আকন্দ বলেন,  মৃত: সুবল চন্দ্র মহন্তের চার পুত্র যথাক্রমে অনিল চন্দ্র মহন্ত তিনু, রবিন চন্দ্র মহন্ত, স্বপন চন্দ্র মহন্ত ও রতন চন্দ্র মহন্ত। এদের মধ্যে অনিল চন্দ্র মহন্ত তিনু ২০০৯ সালে এবং রতন চন্দ্র মহন্ত ২০১৭ সালে মৃত্যু বরণ করেছেন। পৌরসভা থেকে এই চারজনের নাম উল্লেখ করে তাদেরকে ওয়ারিশন সনদ প্রদান করা হয়েছে। দীপক ঘোষ ওরফে বিশু কুমার মহন্ত সুবল চন্দ্র মহন্তের কেউ নয় এবং তার জন্ম এখানে নয়। এই প্রতারক ভারতীয় পাসপোর্ট ব্যবহার করে বাংলাদেশে এসে বাংলাদেশী ভূয়া এনআইডি কার্ড ব্যবহার করে মৃত: সুবল চন্দ্র মহন্তের ওয়ারিশ সেজে বারংবার বাটোয়ারা মামলা করে ভূক্তভোগী পরিবারটিকে হয়রানী করে ।

গোবিন্দগঞ্জ থানা সূত্রে জানা য়ায়, এই দীপক ঘোষকে কালী প্রসাদ মহন্ত সাজুর বাড়ি থেকে গোবিন্দগঞ্জ থানা পুলিশ আটক করে এবং ভিসা সম্বলিত দীপক ঘোষের ভারতীয় পাসপোর্ট দেখিয়ে মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পান।

দীপক ঘোষ ভারতীয় পাসপোর্টে তার জন্ম সাল ১৯৬৯ এবং বাংলাদেশী এনআইডিতে তার জন্ম সাল ১৯৭০ বলে উল্লেখ করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের এনআইডি উল্লেখিত তার কথিত পিতা সুবল চন্দ্র মহন্ত বিগত ১৯৬৭ সালে মৃত্যুবরণ করেছেন। সুবল চন্দ্র মহন্ত মৃত্যুর ২/৩ বছর পর তার কথিত ছেলে বিশু কুমার মহন্ত জন্ম নেওয়ার বিষয়টিও সংশ্লিষ্টদের ভাবিয়ে তুলেছে।

কালী প্রসাদ মহন্ত সাজু বলেন, বিশুর কোন কর্মকাণ্ডের সাথে আমি জড়িত নই। বন্ধু-বান্ধবদের প্ররোচনায় সে বাংলাদেশের ভ’য়া এনআইডি করে বিভিন্ন প্রকার জটিলতার সৃষ্টি করছে। আমার জানা মতে সে মৃত: সুবল চন্দ্র মহন্তের সন্তান নয়।

মৃত সুবল চন্দ্র মহন্তের ছেলে রবিন চন্দ্র মহন্ত আরো বলেন, প্রতারক দীপক ঘোষ ওরফে বিশু কুমার মহন্তর ভূয়া বাংলাদেশী এনআইডি বাতিলসহ ও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে একাধিকবার আবেদন করেও অদৃশ্য শক্তির কারণে এই প্রতারকের বাংলাদেশী এনআইডি বাতিল হয়নি। তিনি এই ভ’য়া এনআইডি বাতিলের জোর দাবি জানিয়েছেন।

এব্যাপারে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ জানান, পূর্বের আবেদন সম্পর্কে তার জানা নেই। তবে আবার আবেদন করলে তিনি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে পরামর্শ সাপেক্ষে আলোচিত দীপক ঘোষ ওরফে বিশু কুমার মহন্তের বাংলাদেশী এনআইডি বাতিলের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

 

       

সর্বশেষ

জনপ্রিয়