৭ বৈশাখ, ১৪৩১ - ২০ এপ্রিল, ২০২৪ - 20 April, 2024
amader protidin

তিন বছর ধরে ধান-চাল সংগ্রহে ব্যর্থ

আমাদের প্রতিদিন
1 year ago
445


রংপুর জেলা খাদ্য বিভাগ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

গত তিন বছর ধরে আমন মৌসুমে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারছে না রংপুর জেলা খাদ্য বিভাগ। সরকারি মূল্যের চেয়ে বাজারদর বেশি হওয়ায় কৃষকেরা সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে অনীহা প্রকাশ করায় চাল-ধান সংগ্রহে ৫ ভাগ  পূরণ হলেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি। জড়িত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রংপুরের চলতি আমন মৌসুমেও ধান সংগ্রহ অভিযানের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। সোমবার ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত সংগ্রহ শুরুর ৭৬ দিনে জেলার ৯টি খাদ্য গুদামে এক ছটাক ধানও সংগ্রহ করতে পারেনি জেলা খাদ্য বিভাগ। আগমী ফেব্রæয়ারি মাসে সংগ্রহ অভিযান শেষ হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানান জেলা খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা।

রংপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আমন মৌসুমে জেলার ৯টি খাদ্য গুদামে ৯ হাজার ৪৩ মেট্রিক টন ধান এবং ১৫ হাজার ৮৩০ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। প্রতিকেজি ধান ২৮ টাকা ও চাল ৪২ টাকা কেজি দরে কৃষকের কাজ থেকে কেনা হচ্ছে। কৃষকেরা কৃষি অ্যাপসের মাধ্যমে সরাসরি খাদ্যগুদামে ধান দিতে পারবেন।

গত বছরের ১৫ নভেম্বর শুরু হয়েছে আমন মৌসুমের ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান। এ বছরের ২৮ ফেব্রæয়ারি সংগ্রহ অভিযান শেষ হবে। গত ৭৬ দিনে এক গ্রাম ধানও সংগ্রহ করতে পারেনি খাদ্য বিভাগ। তবে এ সময়ে শতভাগ চাল সংগ্রহের কাছাকাছি পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ২০২১ ও ২০২২ সালেও আমন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি রংপুর খাদ্য বিভাগ। এ সময় আমনের মৌসুমে ১৬ হাজার ২১৪ মেট্রিক টন চাল ও ধান ১০ হাজার ১৪৯ মেট্রিকটন লক্ষ্যমাত্রা ছিল। এর মধ্যে চাল শতভাগ সংগ্রহ হলেও ধান সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ১৪ মেট্রিক টন।

জেলায় লক্ষ্যমাত্রার অধিক পরিমাণ ধান উৎপাদন হলেও খাদ্যগুদাম লক্ষ্যমাত্রার সিকিভাগও ধান সংগ্রহ করতে পারছেন না। এবার বাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকায় সরকারী মূল্যে বোরো ধান দিতে আগ্রহ হারিয়েছে কৃষকেরা।

কৃষকদের অভিযোগ, খাদ্য গুদাম ১৪ ভাগ আর্দ্রতা না হলে ধান নিতে চায় না। অনেক সময় এ কারণে খাদ্য গুদামে ধান দিতে গিয়ে কৃষকদের ফিরে আসতে হয়। এছাড়াও রয়েছে প্রতি টন ধানে ৫০০-৬০০ টাকা কর্মকর্তাদের প্রদান, রিকশা, শ্রমিকদের চাঁদা, পরিবহন ভাড়া। এজন্য মূলত কৃষকেরা খাদ্য গুদামে ধান দিতে অনীহা প্রকাশ করেছে। ফলে বিগত বছরগুলো থেকে ধান সংগ্রহ করতে পারছেন না।

পীরগাছা উপজেলার পারুল ইউনিয়নের কৃষক হুমায়ন খান জানান, ধান সংগ্রহের সময় আর্দ্রতা ১৪ শতাংশের নিচে থাকলে সরকারি লোকজন ধান নিতে চায় না। বাড়িতে মেশিন না থাকায় আমরা সঠিক আদ্রতা মেপে যেতে পারি না। খাদ্য গুদামের ধান ফ্যান দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হয়। এর হেরফের হলেই ফেরত পাঠায়। এতে আর্থিক লোকসান গুণতে হয়। তাছাড়া এখন সরকারি দরের চেয়ে বাজারে ধানের দাম অনেক বেশি। আর এসব কোনো ঝামেলা নেই।

রংপুর সদর উপজেলার মমিনপুর ইউনিয়নের কৃষক তারাজুল জানান, খাদ্য গুদামে ধান দিতে গেলে লেবার খরচ আছে, সরকারি অফিসাকেও খুশি করতে হয়। এ ছাড়া টাকা নিতে ব্যাংকে দৌঁড়াদৌঁড়ি তো আছে। প্রয়োজনের সময় টাকা পাওয়া যায় না। তাই খাদ্যগুদামে ধান না দিয়ে বাজারে বিক্রি করছি।

রংপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রিয়াজুর রহমান রাজু জানান, বাজারে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ধানের দাম বেশি। কৃষকেরা ধান মাড়াইয়ের পরই পাইকারের কাছে বিক্রি করতে পারছেন। এতে কোনো আর্দ্রতার পরিমাপের প্রয়োজন হয় না। তাই তারা খাদ্য গুদামে ধান দিতে অনীহা দেখাচ্ছেন। ধান-চাল দিতে গিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ৭২২ চালকল খাদ্য গুদামে চাল দিয়েছে, চুক্তির বাইরে ২০১টি। খাদ্য গুদামে ধান দিতে কৃষকদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

সর্বশেষ

জনপ্রিয়