১৫ চৈত্র, ১৪৩০ - ২৯ মার্চ, ২০২৪ - 29 March, 2024
amader protidin

ধর্ষণ মামলায় আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি আরজু কারাগারে

আমাদের প্রতিদিন
1 year ago
402


ঢাকা অফিস:

নিজের নাম-পরিচয় পরিবর্তন করে তালাকপ্রাপ্তা নারীকে বিয়ে ও প্রতারণার ঘটনায় করা ধর্ষণ মামলায় পাবনা-২ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) খন্দকার আজিজুল হক আরজু ওরফে ফারুককে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৫ এর বিচারক বেগম সামছুন্নাহারের আদালতে তিনি আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

বাদী পক্ষের আইনজীবী এস এম লুৎফর রহমান জাহাঙ্গীর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, গত বছর মামলা দায়ের করা হয়। ট্রাইব্যুনাল মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের আদেশ দিয়েছিলেন। পিবিআই তদন্তের করে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে মর্মে প্রতিবেদন দাখিল করে। সেই প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনাল আমলে নিয়ে আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল। আজ পরোয়ানা সংক্রান্ত তামিল প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল। আসামি আরজু আজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করলে আদালত শুনানি শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। আমরা এতে সন্তুষ্ট।  এর আগে, গত বছর ২২ এপ্রিল শিক্ষানবিশ এক আইনজীবী আদালতে মামলা দায়ের করেন। ট্রাইব্যুনাল বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে পিবিআইকে অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের আদেশ দেন। অভিযোগ তদন্তের পর ঢাকা মহানগর উত্তর পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক সাব্বির মোহাম্মদ সেলিম ট্রাইব্যুনালে গত ৫ জানুয়ারি অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে মর্মে প্রতিবেদন দাখিল করেন।   

মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০০০ সালের ডিসেম্বরে বাদীর প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। তখন তিনি একটি ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানিতে চাকরি করতেন। এ সময় বাসায় প্রায় নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করছিলেন। তখন তার আত্মীয়-স্বজনেরা তাকে পুনরায় বিয়ের জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। একপর্যায়ে ২০০১ সালের শেষের দিকে বাদীর চাচার মাধ্যমে আসামির সাথে পরিচয় হয়। পরে আসামি নিয়মিত বাদীর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে ও একপর্যায়ে সফল হয়।

আসামি তাকে জানান, তার প্রথম পক্ষের স্ত্রী মারা গেছেন। তার প্রথম পক্ষের ছেলেকে বিভিন্ন প্রলোভনের মাধ্যমে বাদীকে তার প্রতি দুর্বল করে ফেলেন। সামাজিক নির্ভরতার জন্য ও একাকীত্বের অবসানসহ নতুন সংসার শুরুর মাধ্যমে তিনি আসামিকে মনে প্রাণে ভালবেসে ফেলেন এবং বিয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে রাজি হন। ২০০৩ সালের ১০ ডিসেম্বর আসামির সঙ্গে বিয়ে হয়।

২০০৮ সালের ১৬ জানুয়ারি তাদের একটি কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করে। সন্তান গর্ভে আসার পর আসামি বিভিন্ন ছলচাতুরীর মাধ্যমে বাচ্চা নষ্ট করার চেষ্টা করেন। কিন্তু বাদীর দৃঢ়তার জন্য বাচ্চা নষ্ট করতে পারেনি। বাচ্চা হওয়ার পর আসামির আচার-আচরণের পরিবর্তন লক্ষ্য করেন। বাদীর বাসায় আসা কমিয়ে দেন। ইতোমধ্যে বাদীর নামে ফ্ল্যাট কিনে দেওয়ার কথা বলে তার বাবার কাছ থেকে নেওয়া ১০ লাখ টাকা, জমানো আট লাখ টাকা ও তার ১৫ ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার নিয়ে বিক্রি করে আসামিকে টাকা দিলেও তিনি কোনো ফ্ল্যাট কিনে দেননি এবং টাকাও ফেরত দেয়নি। এক পর্যায়ে আসামি বাদীর বাসায় আসা বন্ধ করে দেন।

পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন আসামির প্রথম পক্ষের স্ত্রী জীবিত। ওই ঘরে কন্যা সন্তান আছে ও স্ত্রীর সংসারে বসবাস করেন। আরো জানতে পারেন, বিবাদী এর আগে বাদীর কাছে ফারুক হোসেন নাম প্রচার করলেও প্রকৃতপক্ষে তার নাম খন্দকার আজিজুল হক আরজু।

মিথ্যা তথ্য ও পরিচয় দিয়ে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করার জন্যই বাদীকে বিয়ের নামে প্রতারণা করেছেন। এরপর আসামি কয়েকবার নিজে ও ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী দিয়ে তাকে হত্যা করার উদ্দেশে আক্রমণ করেন। এক পর্যায়ে আসামি বাদীর সাথে বিবাহ, গর্ভপাত ও ঔরসের কন্যার পিতৃ পরিচয়কেই সরাসরি অস্বীকার করন।

মামলার তদন্তে দেখা যায়, বাদীর কন্যা সন্তানের ডিএনএ পরীক্ষা করানো হয়। সেখানে কন্যা সন্তানটি বাদীর গর্ভজাত সন্তান ও আসামি আজিজুল হক আরজু তার জৈবিক পিতা বলে মতামত এসেছে।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়