৬ বৈশাখ, ১৪৩১ - ১৯ এপ্রিল, ২০২৪ - 19 April, 2024
amader protidin

কুড়িগ্রাম রাজারহাট উপজেলা হাসপাতালে  সার্জারি করেন রাঁধুনী মালি আর পরিচ্ছন্নকর্মী

আমাদের প্রতিদিন
11 months ago
376


আহসান হাবীব নীলু,কুড়িগ্রাম:

কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলা সরকারি হাসপাতালে সার্জারির কাজ চলছে রাঁধুনী,পরিচ্ছন্নকর্মী আর মালি দিয়ে। দীর্ঘদিন ধরে ডাক্তার ছাড়াই চলছে সার্জারি কাজ। এতে করে সেবাগ্রহীতারা মানসম্মত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জনবল সংকটকে দায়ি করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

রাজারহাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মিজানুর রহমান বলেন, জনবল সংকটের কারণে রাঁধুনি,পরিচ্ছন্নকর্মী,মালি এবং স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে চলছে জরুরি বিভাগ ও অপারেশন থিয়েটারের কাজ। তিনি আরও বলেন, এই হাসপাতালে ৩জন ওয়ার্ড বয়ের বিপরীতে আছে একজন। তাও অঅবার কাগজে কলমে। কারণ তিনি বর্তমানে কর্মরত আছেন উমর মজিদ ইউনিয়ন সাব সেন্টারে। ফলে বাধ্য হয়ে রাঁধুনি,পরিচ্ছন্নকর্মী,মালি এবং স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তায় হাসপাতালের সেবা দিতে হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখাযায়,দেশের দারিদ্রপীড়িত জেলা খ্যাত কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অপারেশন থিয়েটারে চিকিৎসকের সাথে সার্জারিতে অংশ নিয়েছেন অবসর নেয়া পরিচ্ছন্নকর্মী রবি দাস। শুধু অপারেশন থিয়েটার নয় হাসপাতালের জরুরি বিভাগেও তিনি সার্জারির কাজ করে আসছেন নিয়মিত। তার মতো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগসহ অপারেশন থিয়েটারে সার্জারির কাজ করেন নিয়মিত রাঁধুনি,মালি এবং পরিচ্ছন্নকর্মী। আর এই কাজ করে রোগীদের নিকট হতে নগদ অর্থ হাতিয়ে নেবারও অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। দীর্ঘদিন ধরে ওয়ার্ড বয় পদে কেউ না থাকায় সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা চলছে জোড়াতালি দিয়ে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে থাকলেও জনগনের সেবা নিশ্চিত করতে নেয়া হয়নি কোন কার্যকরি পদক্ষেপ। ফলে মানসম্মত চিকিৎসা সেবা থেকে বছরের পর বছর ধরে বঞ্চিত হয়ে আসছে দেশের দারিদ্রপীড়িত এই অঞ্চলের মানুষ।

সাবেক পরিচ্ছন্নকর্মী রবি দাস বলেন,আমি গত ১ডিসেম্বরে ঝাড়–দার পোষ্ট থেকে অবসর নিয়েছি। আমি ওটি এবং জরুরি বিভাগে নিয়মিত কাজ করে আসছি। ডেসিং এবং সেলাইয়ের কাজ করতে পারি। সাবেক অনেক চিকিৎসকের সাথেও আমি কাজ করেছি।

রাঁধুনি পদের বাচ্চু মিয়া বলেন,আমার পদ রাঁধুনি হলেও আমি জরুরি বিভাগের সব কাজই পারি। এর আগেও আমি কুড়িগ্রামের নাগেশ^রী,ফুলবাড়িসহ অন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ওয়ার্ড বয় হিসেবে কাজ করেছি। এই হাসপাতালে ওয়ার্ড বয় না থাকায় জরুরি বিভাগ দায়িত্ব পালন করছি। আমার মতো হাসপাতালে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে মালি পদের দেলোয়ার হোসেন, মিজানুরও এ কাজ করে আসছে।

স্বেচ্ছাসেবক মালি পদের দেলোয়ার হোসেন বলেন,আমি ফুলের বাগান দেখভালের জন্য স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি। জরুরি বিভাগেও পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা করেন। পাশাপাশি সার্জারি বিভাগে রোগীর সেলাই ও ডেসিংয়ের কাজও করতে পারেন বলে জানান তিনি। 

উপজেলার বৈদ্যের বাজারের বাসিন্দা শ্রী বাবলু চন্দ্র রায় বলেন,আমার মায়ের বয়স প্রায় ৭৫বছর হয়েছে। তার বাম পায়ে একটু কেটে গিয়ে ইনফেকশন হয়ে পায়ে পচন ধরেছে। দু’সপ্তাহের বেশি সময় ধরে মাকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা নেয়া হচ্ছে। রবি ভাই,দেলোয়ার ভাই আমার মায়ের পা ডেসিং করেন নিয়মিত। এজন্য আমি খুশি হয়ে তাদেরকে ডেসিং করার সময় কিছু বকশিস দেই যেন ভালো করে কাজ করেন।

ভুক্তভোগী রোগী দেবিচরণ গ্রামের বাসিন্দা সুনিল চন্দ্র রায় বর্মন বলেন,পারিবারিক কোন্দলের জেরে আমার উপর হামলা হয়। এতে করে আমার ডান হাতের আঙ্গুল ও বাম হাতের একটি আঙ্গুলে কোপ লেগে কেটে যায়। পরে আমি হাসপাতাল গিয়ে দেখি দেলোয়ার ভাই অন্য রোগীদের ডেসিং করছেন। আমার ভাঙ্গা হাতে প্লাষ্টার করেন ডাঃ বাপ্পি স্যার এবং দেলোয়ার ভাই কাটা আঙ্গুলে সেলাই করেন। সেলাই করতে গিয়ে সুঁচের ঘুতা লাগে আঙ্গুলের হাড়ে এতে করে আমি কিছুটা ব্যথা অনুভব করি। কিছু দিন চিকিৎসা নেবার পর এখন আমি বাড়িতে চলে আসছি। 

বোতলার পাড় গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ারা বেগম বলেন,আমার পুত্রবধুর ইনফ্লাম খোলার জন্য রাজারহাট হাসপাতালে এসেছি। সেখানে কাজ করা লোককে তো নাম জানি না। কালো করে খোঁচা খোচা দাড়ি থাকা এক ব্যক্তি ইনফ্লাম খুলে দিয়ে একশ টাকা নিয়েছে। আবার এক সপ্তাহ পড় ডেকেছে।

ছাটমল্লিক বেগ গ্রামের বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম বলেন,আমার ডান পাশে কোমড়ের উপরে একটি টিউমার হয়েছে। এটা দেখানোর জন্য রাজারহাট হাসপাতালে এসে ডাক্তার পাইনি। ফলে হাসপাতালে রবি ভাইয়ের কাছে এসেছি। তিনি কি পদে কাজ করেন সেটা তো বলতে পারিনা। এরআগেও তার কাছ থেকে চিকিৎসা নিয়েছি। পরে জানতে পারি তিনি পরিচ্ছন্নকর্মী।

মেকুরটারি গ্রামের বাসিন্দা লাল মিয়া বলেন,এই হাসপাতালে ঝাঁড়ুদার সেলাই করে আবার সেই ঝাড়–দারে ঔষধ দেয়। ভর্তি রোগিদের দেখতে নিয়মিত ডাক্তাররা রাউন্ড দেয় না। একবার দেখলে পরের দিন আবার আসে ডাক্তার। সঠিক ভাবে রাজারহাট উপজেলার মানুষ চিকিৎসা,ঔষধ পায় না।

হাসপাতাল সূত্রে জানাযায়,২০১২সালে এই হাসপাতালটি ২৫শয্যা থেকে ৫০শয্যায় উন্নতি করা হয়। জনবল রয়েছে মেডিকেল অফিসার রয়েছে ১০জনের মধ্যে আছে ৮জন,নার্সিং সুপারভাইজার ১ জন, সিনিয়র নার্স ২৬জন, মিড ওয়াইফ ৬জন,ল্যাব টেকনিশিয়ান ২জন, প্রধান সহকারি ১জন,অফিস সহায়ক ৩জন,ফার্মাসিস্ট ২জন,পরিসংখ্যান ১জন, স্বাস্থ্য পরিদর্শক ২জন,এ্যাম্বুলেন্স চালক ১জন, মালি ১জন, মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট ৭টি পদে মধ্যে ৫জন,পরিচ্ছন্নকর্মী ৫টি পদের মধ্যে ৩জন। স্বাস্থ্য সহকারি ৩০টি পদের মধ্যে ১৭জন,সহকারি স্বাস্থ্য পরিদর্শক ৬টি পদের মধ্যে ৪জন,ওয়ার্ড বয় ৩টি পদের মধ্যে আছে ১জন। এছাড়াও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেন্টাল চিকিৎসক, এমটি ডেন্টাল,ইপিআই,রেডিও গ্রাফার,কার্ডিওগ্রাফার, ক্যাশিয়ার, স্টোরকিপার, জুনিয়র মেকানিকেল পদ শূন্য রয়েছে।

 

সর্বশেষ

জনপ্রিয়