১০ বৈশাখ, ১৪৩১ - ২৩ এপ্রিল, ২০২৪ - 23 April, 2024
amader protidin

স্বাস্থ্যঝুঁকিতে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী রৌমারীতে অবৈধ ইটভাটা’র বিরুদ্ধে অভিযোগ

আমাদের প্রতিদিন
10 months ago
122


রৌমারী(কুড়িগ্রাম)প্রতিনিধি:

নিয়ম ভেঙে এবং আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গলী দেখিয়ে বিজিবি ক্যাম্প, ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা ও তিন ফসলী জমিতে ইটভাটা গড়ার অভিযোগ উঠেছে শফিয়ার রহমান নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে।

এস ব্রিকস (এসবি) নামে এই ইটভাটাটির অবস্থান কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের কাউনিয়ার চর (শালুরমোড়) এলাকায়। ফসলী জমির মাটি কেটে এনে ভাটায় ইট বানানো কার্যক্রম শেষে এখন পুরোদমে এসব ইট বিক্রি হচ্ছে।

ফলে জমির ফসল উৎপাদন হ্রাস এবং পরিবেশদূষন, মানুষজন রোগে আক্রান্তসহ নানা বিষয় উল্লেখ করে সালমান কায়সার (ইয়াহিয়া) নামের এক ব্যক্তি জেলা প্রশাসক ও জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। কিন্তু পত্র গ্রহণের প্রায় এক সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও প্রশাসনের কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি। এর আগে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অভিভাবক এবং ভুক্তভোগীরা অভিযোগ দিলেও কোন প্রতিকার পায়নি।

এতে স্কুলের কোমলমতি শিক্ষার্থী ও নিকটবর্তী গ্রামে বসবাসকারী লোকজন ভাটার ধুলা ও ধোঁয়ায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। সর্দি, কাশি ও ফুসফুসজনতি রোগের প্রবণতা খুবই বেড়ে গেছে। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন আইন অনুযায়ী এমন স্পর্শকাতর এলাকায় ইটভাটা করার জন্য পরিবেশ ছাড়পত্র পাওয়ার সুযোগ নেই। তারপরও ভাটা করা হয়েছে। এ ধরনের পদক্ষেপ দন্ডনীয় অপরাধ।

অভিযোগপত্রের আলোকে সরেজমিনে গিয়ে দেখাগেছে, রৌমারী উপজেলার দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের কাউনিয়ারচর-শালুরমোড় নামক এলাকায় এস ব্রিকস (এসবি) নামে ইটভাটা চালু রয়েছে। সেখানে মাটি দ্বারা বানানো পুড়া ইট মুজদ রয়েছে। তিন ফসলী জমির মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে ভাটায়। এসব মাটি দিয়ে ইট তৈরি করা হচ্ছে। এ এলাকার কৃষি জমির মাটি উর্বর। এখানে ধান, পাট, ভুট্রাসহ বহুজাতিক ফসল ব্যপক হারে উৎপাদিত হয়। ইট ভাটাটি হতে কাউনিয়ারচর গ্রাম, কাউনিয়ারচর -কেনøাবাড়ি গ্রাম, গয়টাপাড়া গ্রাম, খেতারচর গ্রাম, ছাটকড়াইবাড়ী গ্রাম, দাঁতভাঙ্গা উত্তরপাড়া গ্রাম এর গড় দুরুত্ব ১শ মিটারও হবে না। ইহা ছাড়াও কাউনিয়ারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরগয়টাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স, দাঁতভাঙ্গা বিজিবি ক্যাম্প, ছাটকড়াইবাড়ীগ্রাম বে-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শালুরমোড় হাফিজিয়া মাদরাসা, প্রতিভা বিদ্যা নিকেতন কিন্ডার গার্ডেন, শালুর মোড় বাজার, দাঁতভাঙ্গা এলাকার প্রাণকেন্দ্র দাঁতভাঙ্গা হাট-বাজার, উক্ত ইটভাটা হতে গড়ে ৩’শ থেকে ৪’শ মিটার দুরুত্বে অবস্থিত। ইটভাটা সংলগ্ন জায়গায় ২০ মিটারের কম দুরুত্বে কাউনিয়ারচরগ্রাম জামে মসজিদ অবস্থিত।

আধা কিলোমিটারের কম দুরত্বে দাঁতভাঙ্গা দ্বিমুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, দাঁতভাঙ্গা স্কুল অ্যান্ড কলেজ, দাঁতভাঙ্গা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দাঁতভাঙ্গা বেগম মজিদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দাঁতভাঙ্গা ভূমি অফিস, হরিণধরাগ্রাম, দাঁতভাঙ্গা গ্রামসহ বিভিন্ন এজেন্ট ব্যাংক, এনজিও অফিস অবস্থিত।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, ইটভাটায় ইট পোড়ানোর ফলে আমাদের স্কুলে দিকে কালো ধোঁয়া চলে আসে। এতে আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ছি। তাই দ্রæত সরকারের কাছে আকুল আবেদন ইটভাটাটি বন্ধ করার জোর দাবি করছি।

প্রধান শিক্ষক আব্দুল খালেক, সাইফুল ইসলাম, মিজানুর রহমান, বদিউজ্জামান বলেন, ইটভাটার কারণে মারাত্বক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে স্কুল ও কলেজের কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ জনসাধারণ। বিষয়টি জনগুরুত্বপূর্ণ। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জোর দাবি করছি।

স্থানীয় সেলিম মিয়া, বাবুল হোসেন, মুকুল মিয়া, মখকার হোসেন, বাবুল মিয়া, সাদিকুল ইসলাম, এরশাদুল হক, আনিচুর রহমান, শহিদুর রহমান, আশরাফুল ইসলাম লাল, আক্তার হোসেন, মনির উদ্দিন, রাজ্জাক মিয়া, আইয়ুব হোসেনসহ অনেকই অভিযোগ করে বলেন, ইটভাটায় ইট পোড়ানোর কারণে ফসলের বেশি ক্ষতি হচ্ছে। ধোঁয়ার কারণে ধান, পাট, গম, ভুট্রাসহ মৌসুমী ফলফলাদি ব্যাপক হারে নষ্ট হচ্ছে। তাই ইটভাটাটি বন্ধ করতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা কামনা করছি।

এব্যাপারে দাঁতভাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান এসএম রেজাউল করিম বলেন, নিয়ম ভেঙে ইটভাটাটি গড়ার ফলে ফসল ও মানুষ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। তাই স্থানীয় প্রশাসন সঠিক তদন্ত করে ইটভাটাটির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। ব্যবস্থা না নিলে হয়তোবা এলাকার মানুষ স্বাস্থ্য ঝুঁকি আশংকা রয়েছে।

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এসব্রিকস (এসবি) ইটভাটা মালিক মো. শফিয়ার রহমান জানান, আমি নিয়মনীতি মেনে ইটভাটা গড়ে তুলেছি। পরিবেশ অধিদফতর গত বছরের ৮ আগস্ট তারিখে ইটভাটা চালুর জন্য ছাড়পত্র প্রদান করেন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, স্কুলের শিক্ষার্থীরা ও জনসাধারণ অসুস্থ হলে কি করার আছে। ইট যদি না থাকত তাহলে স্কুল পাকা পাকা তলায় তলায় ভবন হতো না। যদি কর্মকর্তা বন্ধ করতে বলে তাহলে বন্ধ করা হবে।

রৌমারী উপজেলা স্বাস্থ্য প.প কর্মকর্তা (টিএসও) বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে ওই ইটভাটায় সরেজমিনে শিঘ্রই স্যানিটারি কর্মকর্তাকে পাঠানো হবে। তিনি আরও বলেন, ইটভাটার কালো ধোঁয়ার কারণে ঘাতকব্যধি সৃষ্টি হয়। এছাড়াও জন স্বাস্থ্য ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ওই ইটভাটার বিষয়ে আমার কাছে প্রত্যয়নপত্র চেয়ে আবেদন করেছিল। পরে সরেজমিনে গিয়ে দেখাগেছে কৃষি জমিতে ইটভাটা স্থাপন হওয়ায় প্রত্যয়নপত্র দেয়া হয়নি। পাশাপাশি ইটভাটার বর্জ্য যত্রতত্র ফেলার কারণে ফসলী জমি নষ্ট হচ্ছে।  

কৃষি জমিতে ইটভাটা স্থাপন সম্পর্কে জানতে চাইলে জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক মো. রেজাউল করিম মুঠোফোনে বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। সরেজমিন গিয়ে তদন্ত করে সত্যতা পাওয়াগেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ছাড়পত্র দেয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে এড়িয়ে যান।

ইটভাটা প্রসঙ্গে মুঠোফোনে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের আলোকে তদন্ত করা হবে।

প্রসঙ্গত, শফিয়ার রহমানের বিরুদ্ধে সরকারি সম্পতি জবরদখল, সরকারি রাস্তার গাছকর্তন, অবৈধ সুদ ব্যবসা, সীমান্ত চোরাচালান, প্রতারণামূলক করে অনেকের টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগও রয়েছে।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়