৬ বৈশাখ, ১৪৩১ - ২০ এপ্রিল, ২০২৪ - 20 April, 2024
amader protidin

পাঁচ মিনিট ‘স্তব্ধ রংপুর'; বাজেটে তিস্তার জন্য অর্থ বরাদ্দ দাবি

আমাদের প্রতিদিন
10 months ago
205


নিজস্ব অর্থায়নে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন

নিজস্ব প্রতিবেদক:

পদ্মা সেতুর মত নিজস্ব অর্থায়নে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে চলতি বাজেটে বরাদ্দের দাবিতে স্তব্ধ কর্মসূচি পালন করেছেন রংপুর বিভাগের পাঁচ জেলার তিস্তা পাড়ের মানুষ ও নগরবাসী।  তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের ডাকে  ৫ মিনিটের ‘স্তব্ধ রংপুর’ কর্মসূচি পালন করেছে সর্বস্তরের মানুষ।

বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১১টায় ‘স্তব্ধ রংপুর’ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন সংগ্রাম পরিষদের প্রধান উপদেষ্টা ও রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।  কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানী, সাধারণ সম্পাদক শফিয়ার রহমান প্রমুখ।

এদিকে বেলা ১১টা বাঁজতেই জাতীয় সঙ্গীতের মধ্যদিয়ে শুরু হয় ‘স্তব্ধ রংপুর’ কর্মসূচি। এসময় সড়কের দুপাশসহ যে যেখানে অবস্থান করছিল সেখানেই থমকে দাঁড়ান। রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পাশাপাশি ব্যবসায়ী, শিক্ষক, ছাত্র, শ্রমজীবী, কর্মজীবী, বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন এই দাবির প্রতি সংহতি প্রকাশ করে কর্মসূচিতে অংশ নেন। সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন ছাড়াও অংশগ্রহণে জোরালো হয়ে ওঠে তিস্তা পাড়ের মানুষ বাঁচানোর দাবি।

পাঁচ মিনিটের ‘স্তব্ধ রংপুর’ কর্মসূচিটি রংপুরের নগরীর মডার্ন মোড়, লালবাগ, শাপলা চত্বর, জাহাজ কোম্পানি মোড়, পায়রা চত্বর, সিটি বাজার, কাচারী বাজার, মেডিকেল মোড়, সাতমাথাসহ ২৯টি পয়েন্টসহ তিস্তা নদীবেষ্টিতে বিভাগের বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়নে একই সময়ে পালন করা হয়েছে। এ তথ্য জানান তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শফিয়ার রহমান। কর্মসূচিতে দলমত নির্বিশেষে সবার অংশগ্রহণে অবিলম্বে চলতি বাজেটে অর্থ বরাদ্দসহ ৬ দফা দাবি বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়।

উদ্বোধনী রংপুর সিটি করপোশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, আমরা তিস্তা নিয়ে টানাটানি দেখতে চাই না। ভারত না চীন কে অর্থ দিবে তা নদীপাড়ের মানুষ বোঝে না। দুই কোটি মানুষের ভাগ্য নিয়ে কেউ খেলার অধিকার রাখে না। সরকার প্রধান নিজেই তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন। হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে কিন্তু রংপুর অঞ্চল কোন প্রকল্পই পাচ্ছেনা, এই বৈষম্য দূর করতে হবে। অথচ তিস্তা মহাপরিকল্পনা দেশের জন্য সবচেয়ে লাভজনক, এই প্রকল্প দ্রæত বাস্তবায়ন করা হলে ভাঙন ও ফসলহানির হাত থেকে রক্ষা পাবে লাখো মানুষ এবং হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ। এবার যদি তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সরকার এই বাজেটে অর্থ বরাদ্দ না দেয়, তাহলে রংপুরের মানুষ সরকারকে লাল কার্ড দেখাবে।

তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে ৩ লাখ কোটি টাকার মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ৮ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা চীনা সরকার দেবে নাকি ভারত দেবে এসব উত্তরবঙ্গের মানুষ খুঁজবে না। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন উত্তরের মানুষের ন্যায্য দাবি। তাই অপ্রতীকী ৫ মিনিটের স্তব্ধ কর্মসূচি পালন করা হল। এই বাজেটে বরাদ্দ রাখা না হলে আগামীতে রংপুর বিভাগের পাঁচ জেলার মানুষকে নিয়ে এর চেয়ে বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসূচি পালন করা হবে বলে হুশিয়ারি দেন।

তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দ বলছেন, নদী ভাঙ্গন ও বন্যায় প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ সর্বস্ব হারিয়ে নিজ দেশেই হচ্ছে শরণার্থী। বিলীন হচ্ছে হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি। তিস্তা তীরের মানুষের মুখেমুখে একটাই ¯øাগান- তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও, কৃষকের জান বাঁচাও, তিস্তা খননের কাজ শুরু করো, মহাপরিকল্পনার কাজ দ্রæত বাস্তবায়ন কর।

বক্তারা তিস্তা নদী সুরক্ষায় মহাপরিকল্পনার দ্রæত বাস্তবায়ন, অভিন্ন নদী হিসেবে ভারতের সঙ্গে ন্যায্য হিস্যার ভিত্তিতে তিস্তা চুক্তি সম্পন্ন, তিস্তা নদীতে সারাবছর পানির প্রবাহ ঠিক রাখতে জলাধার নির্মাণ, তিস্তার ভাঙন, বন্যা ও খরায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের স্বার্থ সংরক্ষণ। ভাঙনের শিকার ভূমিহীন ও গৃহহীনদের পুনর্বাসন, তিস্তা নদী সুরক্ষায় বিজ্ঞানসম্মত খনন, মহাপরিকল্পনায় তিস্তা নদী ও তিস্তা তীরবর্তী কৃষকের স্বার্থ সুরক্ষায় কৃষক সমবায় এবং কৃষিভিত্তিক শিল্প কলকারখানা গড়ে তোলাসহ নদীর শাখা-প্রশাখা ও উপ-শাখাগুলোর সঙ্গে নদীর আগেকার সংযোগ স্থাপন এবং দখল-দুষণমুক্ত করার দাবি জানান। সেই সাথে নৌ চলাচল পুনরায় চালু ও  মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ এবং প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তিস্তা পাড়ের মানুষদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করারও দাবি করেন। অন্যথায় বৃহত্তর আন্দোলনের হুশিয়ারি দেন বক্তারা।

এর আগে গত ৬ মে রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নসহ ৬ দফা দাবিতে গণসমাবেশে অনুষ্ঠিত হয়। এই আন্দোলনে তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ, জাতীয় পার্টি, বিএনপি, জাসদ, সিপিবি, বাসদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে মানববন্ধন সমাবেশ, লংমার্চ, রোডমার্চ, সংবাদ সম্মেলনসহ আন্দোলন করে আসছে।

 

সর্বশেষ

জনপ্রিয়