প্রস্তুত দক্ষিন এশিয়ার সর্ববৃহৎ ঈদগাহ দিনাজপুরের গোর-এ শহীদ ময়দান

আমাদের প্রতিদিন
2025-03-20 15:13:48

সকাল সাড়ে ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে ঈদের জামাত

দিনাজপুর প্রতিনিধি:

ঈদের জামাতের জন্য প্রস্তুত আয়তনের দিক থেকে দক্ষিন এশিয়ার সর্ববৃহৎ ঈদগাহ দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোর—এ শহীদ বড় ময়দান। আগামীকাল সোমবার (১৭ জুন) ঈদুল আযহার দিন সকাল সাড়ে ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে ঈদের জামাত। বৃহৎ এই ঈদের জামাতে ঈমামতি করবেন মাওলানা সামশুল আলম কাশেমী। গতবারের ন্যায় এবারও এখানে নামাজ আদায় করতে আসা মুসল্লীদের জন্য থাকছে দুটি স্পেশাল ট্রেন।

দিনাজপুর জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গোড়—এ শহীদ বড় ময়দানের আয়তন প্রায় ২২ একর। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর থেকেই এই মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তবে বড় কোন মিম্বর ছিলো না। ২০১৫ সালে স্থানীয় সাংসদ ও জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি মিনার নির্মানের পরিকল্পনা ও অর্থায়ন করেন। এরপর ২০১৭ সালে সম্পন্ন হয় নির্মাণকাজ। নির্মিত ৫২ গম্বুজের ঈদগাহ মিনার তৈরিতে খরচ হয়েছে ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। গম্বুজগুলোর দুই ধারে ৬০ ফুট করে দুটি মিনার, মাঝের দুটি মিনার ৫০ ফুট করে। ঈদগাহ মাঠের মিনারের প্রথম গম্বুজ অর্থাৎ মেহেরাবের (যেখানে ইমাম দাঁড়াবেন) উচ্চতা ৪৭ ফিট। এর সঙ্গে রয়েছে আরও ৪৯টি গম্বুজ। এছাড়া ৫১৬ ফিট লম্বায় ৩২টি আর্চ নির্মাণ করা হয়েছে। দক্ষিন এশিয়ায় এত বড় ঈদগাহ মাঠ দ্বিতীয়টি নেই।

পুরো মিনার সিরামিক্স দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি গম্বুজ ও মিনারে রয়েছে বৈদ্যুতিক লাইটিং। রাত হলে ঈদগাহ মিনার আলোকিত হয়ে ওঠে।

২০১৭ সাল থেকেই প্রতিবারে এখানে ঈদের নামাজ আদায় করছেন দিনাজপুর জেলাসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা—উপজেলার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। ইতিমধ্যেই প্রায় সম্পন্ন হয়েছে সবরকম প্রস্তুতি। সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ করে এখন চলছে লাইন স্থাপনের কাজ।

দিনাজপুর সদর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী কার্যালয় সুত্রে জানাযায়, মুসল্লীদের জন্য ৩’শটি ওজুখানা, ৪০টি টয়লেট ও খাবার পানি সরবরাহের জন্য ৫টি পয়েন্ট স্থাপন করা হয়েছে।

এদিকে ঈদগাহের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তামুলক ব্যবস্থা। পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাব—এর সমন্বয়ে ঈদগাহ মাঠে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। ঈদগাহ মাঠে স্থাপন করা হয়েছে ৫০টি সিসি ক্যামেরা। এছাড়াও মাঠের মাঝখানে স্থাপন করা হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার। সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে দিনাজপুর শহরের বিভিন্ন পয়েন্টেও স্থাপন করা হয়েছে সিসি ক্যামেরা।

এদিকে শনিবার (১৫ জুন) দুপুরে দিনাজপুর গোর—এ শহীদ ময়দান ঈদগাহের প্রস্তুতি পর্যবেক্ষন করতে যান জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম, দিনাজপুর জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ, পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা। 

সর্ববৃহৎ এই ঈদগাহ মিনারের উদ্যোক্তা ও পরিকল্পনাকারী এবং ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রধান উপদেষ্ঠা জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি বলেন, গোর—এ শহীদ ময়দানের আয়তন প্রায় ২২ একর। উপমহাদেশে এত বড় ঈদগাহ আর নেই। এখানে ঈদের নামাজ আদায় করছেন দিনাজপুর জেলাসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা—উপজেলার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। তিনি বলেন, ইতিমধ্যেই সবরকম প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। দু—দুরান্তের মুসল্লীদের জন্য দুটি স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন তিনি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ঠাকুরগাঁও থেকে একটি এবং পার্বতীপুর থেকে আরেকটি স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।

দিনাজপুরের পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদ জানান, সুষ্ঠু ও শান্তিপুর্ণভাবে নামাজ আদায়ের জন্য নেয়া হয়েছে কয়েক স্তুরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এখানে কেউ যাতে নাশকতামুলক কর্মকান্ড না ঘটাতে পারে, সেজন্য নেয়া হয়েছে বিশেষ কৌশল। তিনি আশাপ্রকাশ করেন, সার্বিকভাবে যে ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে, তাতে শান্তিপুর্ণভাবেই সম্পন্ন হবে বৃহৎ এই ঈদগাহের জামাত।