দিনাজপুর প্রতিনিধি :
ফলন ভালো হলেও বোরো মৌসুম শেষ হতে না হতেই ধানের জেলা দিনাজপুরের বাজারে কমেছে ধানের সরবরাহ। বাজারে ধানের সরবরাহ কমে যাওয়ায় বাড়তে শুরু করেছে দাম। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে দিনাজপুরে বস্তাপ্রতি (৭৫ কেজি) বোরো ধানের দাম বেড়েছে ১৫০ টাকা থেকে ২’শ টাকা পর্যন্ত। ছোট ছোট ব্যবসায়ী ও কৃষকরা জানান, মৌসুম প্রায় শেষ হয়ে যাওয়ায় এখন কৃষকের ঘরে আর তেমন ধান নেই, ধান কিনে মজুদ করে রেখেছে বড় বড় ব্যবসায়ীরা। তারাই এখন নিয়ন্ত্রণ করবে চালের বাজার।
দিনাজপুরের অন্যতম বৃহৎ ধানের বাজার সদর উপজেলার গোপালগঞ্জ হাট। সপ্তাহের শুক্র ও সোমবার এই হাটে বেচাকেনা হয় ধান। ভরা মৌসুমে এই হাটে একদিনেই বেচাকেনা হয় ৩ থেকে ৫ হাজার বস্তা ধান। কিন্তু গতকাল শুক্রবার (২৬ জুলাই) এই হাটে গিয়ে দেখা যায়, কমেছে ধানের সরবরাহ। হাট ইজারাদার মনি’র প্রতিনিধি জানান, শুক্রবার বাজারে ধান এসেছে ৫ থেকে ৬’শ বস্তার মতো। তিনি বলেন, মৌসুম শেষ হয়ে আসায় ক্রমান্বয়ে কমছে ধানের সরবরাহ।
এদিকে হাটে সরবরাহ কমে যাওয়ায় বাড়তে শুরু করেছে ধানের দাম। শুক্রবার (২৬ জুলাই) গোপালগঞ্জ হাটে খেঁাজ নিয়ে জানাযায়, হাইব্রিড ধান বিক্রি হচ্ছে প্রতিবস্তা (৭৫ কেজি) ২১৫০ টাকা থেকে ২২০০ টাকায়, বিআর—২৮ জাতের ধান বিক্রি হচ্ছে ২৫০০ টাকা থেকে ২৫৫০ টাকা এবং সম্পা কাটারী ধান বিক্রি হচ্ছে ২৬৫০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে প্রতিবস্তা হাইব্রিড ধান বিক্রি হয় ২০০০ টাকা থেকে ২০৫০ টাকায়, বিআর—২৮ জাতের ধান বিক্রি হয় ২৩০০ টাকা থেকে ২৪০০ টাকায় এবং সম্পা কাটারী জাতের ধান বিক্রি হয় ২৫৫০ টাকায়। অর্থ্যাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি বস্তা ধানের দাম বেড়েছে প্রকারভেদে ১৫০ টাকা থেকে ২’শ টাকা পর্যন্ত।
হাটে ধান ক্রেতা অমরেশ বসাক জানান, কৃষকের ঘরে এখন আর তেমন ধান নেই। তাই হাটে ধানের সরবরাহ কমেছে। বাজারে চালের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বেশী দামেই ধান কিনে চাল তৈরী করছেন তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, আমরা ছোট ব্যবসায়ী, পুঁজিও স্বল্প। হাটে ধান কিনে চাল তৈরী করে বিক্রি করি। চালের টাকা পেয়েই আবার ধান কিনি। বাজারে যখন যেমন দাম থাকে, তখন সামান্য লাভ রেখে আমাদের চাল বিক্রি করতে হয়। কিন্তু বড় বড় ব্যবসায়ীরা ভরা মৌসুমে তুলনামুলক কম দামেই প্রচুর ধান কিনে মজুদ করে রেখেছে। বাজারে ধানের সরবরাহ কমে যাওয়ায় তারাই এখন নিয়ন্ত্রণ করবে চালের বাজার। বোরো ধান কাটা মাড়াই মৌসুমে এবার ধান বিক্রি হয় প্রতিবস্তা ১৯০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত।
হাটে ধান বিক্রি করতে আসা কৃষক সোহরাব হোসেন বলেন, সার—কীটনাশক বাকীতে নিয়ে বোরো ধান আবাদ করেছি। ধান—কাটা মাড়াই মৌসুমেই ধান বিক্রি করে সেই বাকী শোধ করতে হয়েছে। অবশিষ্ট যেটুকু ধান ছিলো, সেটুকু এখন বিক্রি করে আমন আবাদের খরচ যোগাতে হচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের কৃষকের ঘরে যখন ধান শেষ, তখন বাড়তে শুরু করেছে ধানের দাম।
চালের বাজারে খেঁাজ নিয়ে জানাযায়, গত ১০/১৫ দিন আগে থেকেই দিনাজপুরে চালের দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ৩ থেকে ৪ টাকা। বর্তমানে খুচরা বাজারে প্রতিকেজি মিনিকেট ৬৫ থেকে ৬৮ টাকা, বিআর—২৬ জাতের চাল ৫৮ থেকে ৬০ টাকা, হাইব্রিড চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৪ থেকে ৪৫ টাকায়। প্রায় ১০/১৫ দিন আগে দিনাজপুরে কেজি প্রতি চালের দাম বৃদ্ধি পায় ৩ থেকে ৪ টাকা। এখনও সেই বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে চাল।
দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ—পরিচালক মোঃ নুরুজ্জামান জানান, জেলায় এবার ১ লাখ ৭৪ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়। যা গত বছরের চাইতে ৭১০ হেক্টর বেশি। এবার বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় প্রায় সাড়ে আট লাখ মেট্রিক টন (চালের আকারে)। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় দিনাজপুরে এবার বোরো ধানের ভালো ফলন হয়েছে বলে জানান তিনি।