আত্মগোপনে রংপুরের এমপি ও শীর্ষ নেতারা: চরম নিরাপত্তাহীনতায় তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা

আমাদের প্রতিদিন
2024-10-10 00:33:49

নিজস্ব প্রতিবেদক:

কোটা সংস্কার আন্দোলন ও ছাত্র—জনতার  গণঅভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বর্তমানে তিনি প্রতিবেশী ভারতে অবস্থান করছেন। সেখান থেকে তিনি অন্য দেশে আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করছেন। গত রোববার দেশ ছেড়ে পালিয়ে বিদেশে আশ্রয় নিলে তিনি ও তার পরিবার জনরোষ থেকে বেঁচে গেছেন। দেশের এমন পরিস্থিতিতে আত্মগোপনে চলে গেছেন রংপুরের ৬টি সংসদীয় আসনের এমপিসহ দলের জনপ্রতিনিধি ও শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। তারা প্রাণ ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এতে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। তারা সংকটময় এ দিনগুলোতে বাড়িঘরে হামলা—ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের আশংকায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন।

জানাগেছে, সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদে রংপুর জেলার সংসদীয় ছয়টি আসনের পাঁচটিতেই নির্বাচিত হয় আওয়ামী লীগ নেতারা ও একটিতে জাতীয় পার্টি। তারা হলেন,  রংপুর—১ (গংগাচড়া ও আংশিক সিটি কর্পোরেশন) আসনে সংসদ সদস্য ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবলু, রংপুর—২ (বদরগঞ্জ ও তারাগঞ্জ) আসনে আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী ডিউক, রংপুর—৪ (পীরগাছা ও কাউনিয়া) আসনে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক টিপু মুনশি, রংপুর—৫ (মিঠাপুকুর) আসনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন সরকার, রংপুর—৬ (পীরগঞ্জ) আসনে জাতীয় সংসদের স্পীকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। আর রংপুর—৩ (সদর ও সিটি কপোর্রেশন) আসনে সংসদ সদস্য ছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় নেতা জিএম কাদের। এ ছাড়াও সংরক্ষিত মহিলা আসনে সংসদ সদস্য ও জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক নাছিমা জামান ববি।

এদিকে কোটা সংস্কার নিয়ে ছাত্র আন্দোলনের মধ্যদিয়ে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগ, তার সরকারের পতন ও চলমান পরিস্থিতিতে রংপুরের সদ্য সাবেক এমপিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগের  ছোট—বড় সব নেতাকর্মী আত্মগোপনে রয়েছেন। তারা কোথায় আছেন,কেমন আছেন, তাদের অবস্থান কেউ বলতে পারছেন না। এমন পরিস্থিতিতে তৃণমূল পযায়ের নেতাকর্মীরা তাদের মনোবল ভেঙে গেছে। একইসঙ্গে শেখ হাসিনা যে এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হবেন সেটাও কেউ কোনোদিন কল্পনা করেনি বলে মনে করছেন।

এর আগে গত ৪ আগস্ট গংগাচড়ায় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী মিছিল হয়। ওইদিন িআন্দোলনকারীদের হাতে লাঞ্ছিত হন রংপুর—১ আসনের সবশেষ সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান বাবলু। তিনি আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। রংপুর—২ আসনের সংসদ সদস্য আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী ডিউকের বাসায় তিন দফায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে মালামাল লুট করা হয়। এ ছাড়াও উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলে রাব্বী সুইট, পৌর মেয়র টুটুল চৌধুরী, সাবেক মেয়র উত্তম কুমার সাহা, উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক পলিন চৌধুরীসহ সান্টু চৌধুরী ও লিটন চৌধুরীর বাসাবাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিও নেই তার সংসদীয় এলাকায়। শেখ হাসিনার পলায়নে তিনি এখন কোথায় রয়েছেন জানে না স্থানীয় নেতারা। রংপুর—৫ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য জাকির হোসেন সরকারও নিরাপদ স্থানে রয়েছেন। এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এইচ এন আশিকুর রহমানের বাড়িতে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। অন্যদিকে রংপুর—৬ আসনের সংসদ সদস্য ও সদ্য বিলুপ্ত সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী স্থানীয় না হওয়ায় পীরগঞ্জে তেমন বড় ধরনের কোনো সহিংস ঘটনা ঘটেনি। সরকার পতনের দিনে শেখ হাসিনার শ্বশুরবাড়ি হিসেবে পরিচিত পীরগঞ্জে হামলা ও ভাঙচুর হয়েছে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে।

এদিকে রংপুর মহানগরীতে মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডল ও সংরক্ষিত আসনের এমপি নাসিমা জামান ববির বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটায় দুবৃত্তরা। এছাড়াও  কাউনিয়াতেও উত্তেজিত জনতা সেখানকার উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের আনোয়ারুল ইসলাম মায়ার বাসায় হামলা চালায় এবং ভাঙচুর করে। এ ছাড়া জেলার বিভিন্ন স্থানে শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাড়িঘর, অফিস ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ ঘটায়।